Posts

প্রবন্ধ

হুদাইবিয়ার সন্ধিঃ ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তালাল ফারহান

November 18, 2025

Talal Farhan

50
View
হুদাইবিয়ার সন্ধি: ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় - উম্মাহ্ ২৪ ডট  কম
হুদাইবিয়ার সন্ধি: তালাল যারহান

এটা হিজরী ৬ষ্ঠ সালের ঘটনা। ‘রাসূল (সা.)’ ১ হাজার ৪০০ জন সাহাবির একটি কাফেলা নিয়ে ওমরাহর ‍উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওনা হন। কুরাইশরা সংবাদ পেয়ে তা প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অথচ ‘রাসূল (সা.)’ যুদ্ধের জন্য বের হননি। যাওয়ার সময় তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন কেবল কোরবানির পশু। নিরাপত্তার জন্য তরবারি ছাড়া কোনো হাতিয়ার সঙ্গে নেননি তারা। মক্কার অদূরে ‘হুদায়বিয়া’ নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন ‘রাসূল (সা.)’। যেন কুরাইশরা বুঝতে পারে, মুসলিমদের যুদ্ধের কোনো ইচ্ছে নেই। এজন্য ‘রাসূল (সা.)’ একপর্যায়ে কুরাইশদের নিকট এমন একজন দূত প্রেরণ করা প্রয়োজন মনে করলেন যিনি বর্তমান ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য সম্পর্কে জোরালোভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন। অতঃপর ‘রাসূল (সা.)’ ‘উসমান ইবনে আফফান (রা.)’-কে আহ্বান জানিয়ে কুরাইশদের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন,
“তুমি গিয়ে তাদেরকে বলে দাও যে আমরা যুদ্ধ করার জন্য আসি নি। আমরা এসেছি উমরাহ পালনের জন্য। তাছাড়া তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ কর”।
কিন্তু কুরাইশরা তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা মুসলমানদের মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না। এরই মধ্যে ‍গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, কুরাইশরা ‘উসমান (রা.)’কে হত্যা করেছে। এ সংবাদ পেয়ে ‘রাসূল (সা.)’ সাহাবিদের থেকে আমৃত্যু যুদ্ধের বাইয়াত গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে যখন অঙ্গীকার গ্রহণ পর্ব সম্পন্ন হয়ে গেল তখন ‘উসমান (রা.)’ প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তিনিও অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন।
নবীজির তীব্র প্রতিক্রিয়ার খবর পেয়ে বরফ গলতে শুরু করে কুরাইশ শিবিরে। তারাও আলোচনার জন্য প্রতিনিধি পাঠায়। দীর্ঘ আলাপের পর তাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির প্রধান ধারাগুলো ছিল এ রকম—
১. “মুসলিমগণ এ বছর উমরাহ না করেই মদীনায় ফিরে যাবে।
২. কুরাইশদের কেউ মদীনায় আশ্রয় নিলে তাকে ফেরত দেওয়া যাবে। কিন্তু মদীনার কোন মুসলিম মক্কায় আশ্রয় নিলে, তাকে ফেরত দেয়া যাবে না।
৩. আরব/মক্কার যেকোন গোত্র মুসলিম বা কুরাইশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে।
৪. মক্কার ব্যবসায়ীরা নিরাপদে মদীনার পথ, সিরিয়া, মিশর ইত্যাদি দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে।
৫. মক্কার বাসিন্দা মুসলিমদের জানমালের কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
৬. সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষরদাতার পক্ষদ্বয় একে অপরের ধনসম্পদকে সম্মান ও রক্ষা করবে।
৭. মক্কায় প্রবেশকালে মুসলিমরা কোন প্রকার অস্ত্র আনতে পারবে না। শুধু আত্মরক্ষার জন্য কোষবদ্ধ তলোয়ার আনা যাবে।
৮. সন্ধির শর্তাবলি উভয় পক্ষকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে”।

এই চুক্তির ফলে মদিনা ও আশপাশের গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণের সুযোগ পায়। ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে অসংখ্য মানুষ। মক্কা থেকেও বড় বড় কুরাইশ নেতা ইসলামের ছায়াতলে চলে আসেন, যাঁরা পরবর্তী সময়ে ইসলামকে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন

Comments

    Please login to post comment. Login