Posts

গল্প

ছোটগল্প : রাহেলার কাশি

June 4, 2024

Theorex Consulting

74
View


জুলাই মাস। ঘন বর্ষা। বৃষ্টির যেন কোনো মা- বাপ্ নেই। মুষলধারে পড়ছে তো পড়ছেই। হোসনে আরা দোতালা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছেন । বৃষ্টির শব্দ তার কানে আসছে না। তার পাঁচ বছরের ছোট মেয়ে রাহেলার ভয়াবহ কাশি। কাশতে কাশতে জান যায় যায় অবস্থা। বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করার মন তার নেই।

"মাগো- উঠে এস, দেখো কি সুন্দর বৃষ্টি।"

হোসনে আরা জানেন তার মেয়ে উঠতে পারবে না। এমনি বলার জন্য বলা। যেই মেয়ে কাশির দমকে পানি পর্যন্ত খেতে পারে না, সে আবার বৃষ্টি দেখবে কিভাবে ?

রাহেলার বাবা রহমান সাহেব ঘুমাচ্ছেন । সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরে ঘুম। দেখতেও কি শান্তি লাগে। কোনো ভাবনা নেই, চিন্তা নেই। কি সুন্দর ঘুম। অফিসের পরে রহমান সাহেবের এটি নিত্য দিনের রুটিন। খুব কম দিন ই আছেন রহমান সাহেব রাত ১১টার পরে জেগে থাকেন।

বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই কোনো। হোসনে আরা বারান্দার বাতি নিভাতে যাবেন ঠিক তখন ই দেখতে পেলেন আর্মির একটি জিপ এসে বাড়ির গেটের সামনে থামলো। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই গাড়ি থেকে ৬/৭ জনের আর্মির একটি দল গেটের দরজা লাথি দিয়ে ভেঙে ফেললো। রাহেলার কাশির শব্দ ভেদ করে বুটের শব্দ তার কানে গিয়ে লাগলো।

"এই শুনছো, উঠো, জলদি উঠো" - ২/৩বার ডাকতেই রহমান সাহেব ধড়ফড়িয়ে উঠলেন। রাহেলা আর হোসনে আরা কে নিয়ে দ্রুত নিচ তলায় নেমে এলেন। নিচ তলার স্টোর রুমের ভিতরে যেই পানি জমা করার একটা খালি ড্রাম তার ভিতরে তিনজনে আশ্রয় নিলেন।

ততক্ষনে সদর দরজা ভেঙে সবাই ভিতরে। হোসনে আরা, রাহেলা কে বুকে চেপে ধরে আছেন। রহমান সাহেব বিরবির করে দোয়া ইউনুস পড়ছেন আর কুল কুল করে ঘামছেন। রাহেলার কাশি থামতেই চাইছে না। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেও হোসনে আরা বুঝতে পারছেন, মেয়ের শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।মেয়েটা নিঃশ্বাস না নিতে পেরে ছটফট করছে। রহমান সাহেব স্ত্রী কন্যা কে বুকের কাছে চেপে ধরে নিঃস্বাশ বন্ধ করে বসে আছেন। ইউনুস নবী দোয়ার জোরে মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। রহমান সাহেবের মনে হলো তার বিপদ ইউনুস নবীর থেকে বহুগুনে বেশি। হোসনে আরা কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদছে। মেয়ে মানুষদের নিয়ে এই বিপদ, যখন তখন কান্না কাটি। কোথায় আল্লাহর নাম নিবে তা না, ফিচ ফিচ করে কান্না।

মিনিট দশেক পরে সব শুনশান। রাহেলাও আর কাশছে না। রহমান সাহেব সবাইকে নিয়ে বের হলেন। দরজা খোলাই ছিল। বাইরে তাকিয়ে দেখলেন জীপ টি নেই। তার মানে এই যাত্রায় বেঁচে গেলেন।

রাহেলা, হোসনে আরার কোলেই ছিল। কোনো এক অজানা কারণে তার কাশি বন্ধ। হোসনে আরা মেয়েকে শক্ত করে ধরে আছেন।

হোসনে আরা জানেন তিনি আর কোনোদিন রাহেলার কাশি শুনতে পারবেন না।

১৯৭১ সালের ১৫ জুলাই । রহমান সাহেব মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন।

এই পৃথিবীতে পিতার কাঁধে সন্তানের মৃতদেহের থেকে ভারী আর কি কিছু আছে ?

মাসনুন আহমেদ


 

Comments

    Please login to post comment. Login