Posts

উপন্যাস

শেষ চাবির রহস্য ৩

November 18, 2025

mr cgm

Original Author Md Jubayed Ahmed Mihan

33
View

শেষ চাবির রহস্য – অধ্যায় ৩

“মৃত সময়ের ঘর ও আরিবের সত্য”

ঘড়ির টাওয়ারের ভেতরের বাতাস যেন হঠাৎ আরও ভারী হয়ে গেল। কেউ কিছু বলছে না, কিন্তু সবার চোখে একই ভয়—
দ্বিতীয় পরীক্ষা… “মৃত সময়ের ঘর।”

রায়েদ নীরবে উঠে দাঁড়াল।
তার চোখের নিচে কালো দাগ, যেন বহু বছর ঘুমায়নি।

মিহান কাছে গিয়ে বলল,
— “রায়েদ, মৃত সময় মানে কী? আমরা কী ধরনের ঘরে যাচ্ছি?”

রায়েদ ধীরে বলল,
— “যে সময় থেমে গেছে চিরতরে… সেই সময়ের ছায়া সেখানে থাকে। তারা মানুষ নয়, কিন্তু মানুষের মতোই রেগে থাকে। ভুল করলে তারা আক্রমণ করবে।”

ওমায়ের শ্বাস ফেলল,
— “মানে… ভূতের মতো?”

রায়েদ মাথা না-না করল,
— “না। ওরা এর চেয়েও ভয়ঙ্কর। তারা আমাদের দেখে না… সময়ের গন্ধ দেখে।”

সবাই একে অন্যের দিকে তাকাল।
এই পরীক্ষা আগেরটার চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে— এটা তখনই বুঝে ফেলেছিল।


 

 দ্বিতীয় দরজার পথ

ঘড়ির টাওয়ারের মেঝে হঠাৎ দুই ভাগ হয়ে গেল। নিচে দেখা গেল লম্বা কালো করিডর—ধোঁয়ামাখা, অদ্ভুত ঠান্ডা।

করিডরের শেষে একটি দরজা জ্বলছে—
একটি কালো চাবির প্রতীক।

মিহাদ আস্তে বলল,
— “এটা কি দ্বিতীয় চাবি আছে?”

আরিব গম্ভীর গলায় বলল,
— “হ্যাঁ। আরিফুল সব চাবি নিজে রাখেনি। কিছু চাবি সময়ের আত্মারা পাহারা দেয়। সেই আত্মারা মৃত সময়ের ঘরেই থাকে।”

মিহান তাকিয়ে বলল,
— “তুমি কিভাবে এসব জানো?”

প্রশ্নটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সবাই থমকে গেল।

আরিবের মুখে এক ধরনের দ্বিধা।

ওমায়ের সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
— “আরিব… তুমি আসলে কে? তুমি সব পরীক্ষার নিয়ম জানো কেন?”

ঘরটা হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।


 

 আরিবের সত্য প্রকাশ

আরিব ধীরে একটি গভীর শ্বাস নিল।

— “তোমাদের এটা জানার সময় এসেছে…”

সে হাত বাড়িয়ে নিজের জামার ভেতর থেকে একটি পোড়া, আধা-দগ্ধ ব্যাজ বের করল।

ব্যাজে লেখা—
Time Guard – Junior Division

সকলের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

আদর চমকে বলল,
— “Time Guard? তুমি সময় পাহারা দেওয়া সংগঠনের লোক?”

আরিব মাথা নিচু করে বলল,
— “হ্যাঁ… কিন্তু আমি আর গার্ড নই। আমি বের হয়ে এসেছি। কারণ আরিফুল হক— সে গার্ডদেরই একজন ছিল।”

সবার চোখ ছানাবড়া।

মিহান স্থির গলায় বলল,
— “মানে… আরিফুল আগে ভালো মানুষ ছিল?”

— “হ্যাঁ। সে সময়ের শক্তি রক্ষা করত। কিন্তু সময়ের ভেতর এমন কিছু দেখল… যা তাকে বদলে দিল। সে শক্তি নিজের হাতে রাখতে চায়। এজন্যই সে রায়েদকে আটকে রেখেছে।”

জোবায়েদ ধীরে বলল,
— “তাহলে তুমি কেন আমাদের সাহায্য করছ?”

আরিব একটু হাসল—
— “কারণ আমি জানি…
তোমরাই শেষ চাবির প্রকৃত নির্বাচিত।
আর আমি একা আরিফুলকে থামাতে পারব না।”

সবাই কিছুটা স্বস্তি পেল।
কিন্তু এখন আরও একটি প্রশ্ন—


 

  মৃত সময়ের ঘরে প্রবেশ

দ্বিতীয় দরজায় হাত দিতেই মাটির কম্পন বাড়তে লাগল।

দরজা খুলতেই তারা যেন বরফ-ঠান্ডা কুয়াশার ভেতরে ঢুকে গেল।

ঘরটি পুরো অন্ধকার।
মাটিতে ছড়িয়ে আছে ভাঙা ঘড়ির কাঁটা, শুকনো পাতার মতো পড়ে থাকা সময়ের কণাগুলো।

আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর…

দেয়ালে পরপর দাঁড়িয়ে আছে ছায়ামূর্তি।
স্থির।
অচল।
মুখ নেই।
চোখ নেই।

মৃত সময়ের আত্মা।

আত্মাদের বুকের ভেতর ধীরে ধীরে নীল আগুন জ্বলছে।

মিহাদ ফিসফিস করল,
— “ওরা কি… আমাদের দেখছে?”

আরিব দ্রুত বলল,
— “দেখছে না।
কিন্তু সময় অনুভব করতে পারে।
যদি আমরা দ্রুত নড়াচড়া করি— ওরা জেগে উঠবে।”

মিহান গলা শুকিয়ে বলল,
— “তাহলে এখন কী করব?”

আরিব হাত তুলে দেখাল— ঘরের অন্য প্রান্তে একটা উঁচু স্তম্ভ, যার ওপরে রাখা দ্বিতীয় চাবি।

— “আমাদের খুব ধীরে… খুব শান্তভাবে এগোতে হবে।”
— “একবারও দৌড়ানো বা চিৎকার করা যাবে না।”

রায়েদ যোগ করল—
— “ওরা শব্দে ভয়ানক রেগে যায়…”

  বিপদের শুরু

সবাই সাবধানে এক পা, দুই পা করে এগোতে লাগল।

শুধু একটাই ভুল…
শুধু একফোঁটা আওয়াজ…
পুরো ঘর জেগে উঠবে।

হঠাৎ পেছন থেকে টিং করে একটা ঘড়ির কাঁটা মাটিতে পড়ে শব্দ হল।

সবাই জমে গেল।

ছায়ামূর্তিগুলো একসাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল—
একই সঙ্গে।
একই কোণে।
একই ভয়ানক নীরবতায়।

ওমায়েরের চোখে পানি চলে এল,
— “এরা… জেগে গেছে?”

ধীরে ধীরে…
ধীরে ধীরে…
ছায়াগুলো নড়তে শুরু করল।

মেহেরাব ফিসফিস করল,
— “এখন কী করব…?”

আরিব কাঁপা কণ্ঠে বলল—
— “কেউ দৌড়াবে না। যেই দৌড়াবে— ওরা প্রথমে তাকেই ছিঁড়ে ফেলবে।”

কিন্তু ঠিক তখনই…

কোণের ছায়া থেকে কেউ বলল—

“তোমরা অনেক দেরি করে ফেলেছ…”

এটা মানুষের কণ্ঠ নয়।
কিন্তু এটা ছায়া থেকেও নয়।

সবাই ভয়ে তাকাতেই দেখা গেল—
ঘরের ওপার থেকে কেউ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।

মিহানের চোখ বড় হয়ে গেল—

“ওটা… আরিফুল নয়।”

আরিবের মুখ সাদা হয়ে গেল।

— “না…
ওটা হলো ‘মৃত সময়ের রক্ষক’।
আমি ভাবিনি…
এটা জেগে যাবে…”

রক্ষকটি এক পা এগোতেই পুরো ঘর কেঁপে উঠল।

দ্বিতীয় পরীক্ষা এখন থেকে সত্যিই শুরু।

অধ্যায় ৩ সমাপ্ত
চলবে…

Comments

    Please login to post comment. Login