এক গ্রামে বাস করতো এক অভাগি।নাম জমেলা বেগম। তার একপুত্র ছিল । নাম ছিল তার সুহান। সুহান এর বয়স আট বছর। সে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে। এই বয়সে কি বা করতে পারে ও ক্ষেত খামারে কাজ করে কোনোরকম সংসার চালান জমেলা বেগম।এভাবেই চলতে থাকে তার জীবন । আস্তে আস্তে সুহান ও বড় হয়ে ওঠে । জমেলা বেগমের খুব ইচ্ছে তার ছেলে সুহান বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সুহান পড়াশোনায় ছিল খুব মেধাবী । সবসময় ভালো রেজাল্ট পেয়ে পরিক্ষায় পাস করতো । তাই তার মা অনেক কষ্টে পড়ালেখা করান। একদিন জমেলা বেগমের শরিরে প্রচন্ড জ্বর এসেছে খামারে কাজ করতে যেতে পারেননি। ঘরে ও খাওয়ার মতো কিছু নেই। সুহান তার চাচির ঘরে দুটো ভাতের জন্য গেলে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়। তখন সুহানের বয়স নয় বছর প্রায় । সুহান তার মায়ের কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে তার মায়ের ঔষধ আর দুমোটো ভাতের জন্য ক্ষেত খামারে কাজ করে।কেউ তাকে কাজ দেয়না বলে কাজ করতে পারবেনা ।যে বয়সে খেলাধুলা করবে সেই বয়সে কাজ করতে হচ্ছে অভাবের তাড়নায়। এভাবেই কেটে গেলো কয়েকদিন। একদিন সুহান কাজ শেষে বাসায় ফিরলো দেখে তার মা জমেলা বেগম বিছানায় শুয়ে কথা বলতে পারেন না । গোসল করে ভাত খেতে গিয়ে দেখে পাতিলের নিচে পড়ে আছে দুমোটো ভাত। জমেলা বেগম না খেয়ে রেখে দিয়েছেন । কি আর করার,,এভাবেই চলছে জীবনযাপন। জমেলা বেগম ও সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। সুহান আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। সুহান এখন ইন্টার পাস্ট ইয়ার এর ছাত্র। মাঝে মধ্য চাকরির সন্ধান ও খুজে। হঠাৎই একদিন সুহান বড় ডাক্তার হয়ে যায় । এবং জমেলা বেগমের অভাব দুর করে । গ্রামের পারা প্রতিবেশীদের বিনামূল্য চিকিৎসা প্রদান করে। একদিন হঠাৎই একজন বৃদ্ধ মানুষ আসেন তার কাছে এসে বলেন,বাবা কাঞ্চনপুর গ্রামে এক অসহায় ব্যাক্তি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। চিকিৎসা করার মতো টাকা নাই তার। তার আপন বলতে কেউ নেই এই পৃথিবীতে ,আপনি যদি একটু সাহায্য করতেন ,আল্লাহ আপনার ভালো করবে ।এদিকে সুহানের মা জমেলা বেগম ও আর আগের মত নেই । বয়সের বাড়ে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই অসুস্থ মাকে রেখে সুহান কিভাবে যায়। তখন জমেলা বেগম বললেন, চলো বাবা আমিও যাবো তুমার সাথে সেখানেই তুমার ফুফুর বাড়ি একটু বেড়িয়ে আসবো বাচবো আর কয়দিন ,তারা তো আর আমাদের কোনো খোজখবর নেয়না আমরা গরিব বলে,এখন হয়তো চিনবে । সুহান বললো আচ্ছা মা তাহলে চলো। কাঞ্চনপুর গ্রামের উদ্দশ্য রওনা দিল সুহান তার মা ও বৃদ্ধা। অসুস্থ মানুষটার বাড়িতে পৌছতেই দেখলেন মানুষটা গুটি শুটি হয়ে শুয়ে আছে। শরির কাপছে। এই অবস্থা দেখে সুহানের খুব কষ্ট লাগলো । ভাঙ্গা কন্ঠস্বর এ লোকটি বলে ওঠলো বসো বাবা…। লোকটির মুখে বাবা ডাক শুনেই সুহানের বুকে কেমন দপ করে ওঠলো। সুহান লোকটিকে চিকিৎসা শুরু করে দিলো…,,লোকটি সুহানকে জিজ্ঞেস করলো বাবা তুমার বাবার নাম কি,সুহান উত্তর এ কিছুই বলতে পারলো না কারন সে ছোটবেলা থেকে তার মাকে জিজ্ঞেস করে আসছে তার বাবার কথা তার মা তাকে কিছুই বলেনি। শুধু আচলে চোখ মুছে। তখন লোকটিকে বললো আমি আমার বাবার নাম জানিনা। লোকটি হতভম্ব হয়ে বললো তাহলে তুমার মায়ের নাম কি বাবা। সুহান বললো আমার মায়ের নাম জমেলা। তখন অসুস্থ লোকটি যেন পুরো সুস্থ হয়ে ওঠলো । লাফ দিয়ে ওঠে বললো বাবা তুমার মা কোথায়। সুহান বললো আমার মা ফুফুর বাড়িতে। তখন লোকটি বললো তুমার মাকে নিয়ে আসো বাবা আমি একটু দেখবো। তারপর সুহান তার মাকে নিয়ে আসলো ,তখন জমেলা বেগম চিনতে পারলেন তার স্বামীকে। যে স্বামী বিয়ের দুবছর পরই হারিয়ে গিয়েছিলো বন্যায়। আবারও সম্পূর্ন হলো একটি পরিবার । দুঃখ কষ্ট সব গুছিয়ে শুরু হলো নতুন জীবনযাপন।