Posts

নন ফিকশন

নবীনগরের মহেশরোডের ইতিহাস

November 18, 2025

POSITIVE BANGLADESH

34
View

নবীনগরের মহেশরোড ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ। এটি নবীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন— নাটঘর, বিদ্যাকুট, নবীনগর পূর্ব, কাইতলা উত্তর, বিটঘর, শিবপুর, কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন—এর বহু গ্রামের সঙ্গে উপজেলাজুড়ে যোগাযোগ স্থাপন করে। মহেশরোডের দক্ষিণ প্রান্ত পার্শ্ববর্তী কসবা উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের সাথে যুক্ত হওয়ায় নবীনগর ও কসবা উপজেলার মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। এই রোডটি হাজার হাজার মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য অপরিহার্য।

নির্মাতা_ও_আদি_ইতিহাস
রোডটি নির্মাণ করেন দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি ১৮৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বিটঘর গ্রামে। পিতার নাম ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত, মাতার নাম রামমালা দেবী। ছোটবেলা থেকেই মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবামূলক মনোভাবসম্পন্ন।

ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে, স্থানীয় গ্রাম, বাজার এবং নদী তীরবর্তী এলাকা সংযুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি মহেশরোড নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কাইতলা থেকে কুড়িঘর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিঃমিঃ মহেশ রোড…” 
(তবে এই তথ্যের উৎস বা নথিপত্র পাওয়া যায়নি।)
তার পৃষ্ঠপোষকতায় ও অর্থায়নে রোডটি তৈরি হয়। এটি স্থানীয় মানুষের যাতায়াত সহজ করার পাশাপাশি কৃষি পণ্য পরিবহন, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য শুধু রোড নির্মাণে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি শিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন—কুমিল্লায় রামমালা গ্রন্থাগার, ছাত্রাবাস, ঈশ্বর পাঠশালা প্রভৃতি। তাঁর উদ্যোগে গ্রামে পুকুর খনন, গরীবদের খাদ্য ও শীতবস্ত্র বিতরণ এবং অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হয়েছে। এই কারণে তিনি “দানবীর” খেতাব পান।

নির্মাণকাজ_ও_সময়কাল:
মহেশরোড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে। মূল লক্ষ্য ছিল স্থানীয় বাজার, গ্রাম ও নদী তীরবর্তী এলাকা সংযুক্ত করা। স্বাধীনতার পর সরকার বিভিন্ন সময় রোডটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ প্রদান করেছে। এটি ধীরে ধীরে এলাকার প্রধান সংযোগ সড়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে ২০১২ সালে প্রকাশিত স্থানীয় এক সংবাদে রোডটিকে “মরণফাঁদ” বলা হয়েছে।

সরকারি_বরাদ্দ_ও_সংস্কার:
মহেশরোড বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে। রোডটি শুধু যানবাহন চলাচলের জন্য নয়, বরং উপজেলা ও জেলা স্তরের বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক_ও_অর্থনৈতিক_গুরুত্ব:
রোডের দুই ধারে কয়েকশ গ্রাম বিস্তৃত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ স্কুল, কলেজ, অফিস, হাসপাতাল ও বাজারে যাতায়াত করে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি ফসল বাজারজাতকরণ ও সরবরাহের প্রধান পথ।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রসারেও রোডটির গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রধান_গ্রামের_অবস্থান:
মহেশরোডের দুই ধারে উল্লেখযোগ্য গ্রামসমূহ হলো: চরনবীনগর, বড়পাড়া, কাঁচাপাড়া, ছোটমহেশপুর, বড়মহেশপুর, দোলাশা,দোলাশা বাজার, রামনগর
সোনাইছড়া, বেলপাড়া, নন্দনপুর, খাজুরাবাদ, জোড়া বাজার, চরজোড়া, বিটঘর, কাইতলা, গোয়ালী প্রভৃতি।

ভবিষ্যৎ_উন্নয়ন_পরিকল্পনা:
সরকারি ও স্থানীয় উদ্যোগে মহেশরোডকে আরও উন্নত করা হচ্ছে। এতে রোডের প্রশস্ততা বৃদ্ধি, পাকা করা ও সেতুবন্ধন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ও অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

সুপারিশ ও ভবিষ্যতের রূপরেখা: এই রোডের গঠন ও সংযোগ ভূমিকা গ্রামীণ জীবনের অনেক দিক পরিবর্তন করেছে — যেমন শিক্ষার্থী যাতায়াত, গ্রামীণ বাজারে পণ্য পৌঁছানো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেস বৃদ্ধি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও অবকাঠামো দুর্বলভাবে পরিচালিত হওয়ায় রোডের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। 
স্থানীয় অংশগ্রহণ ও তদারকি: গ্রামবাসী, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে পরিকল্পনায় যুক্ত করে তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
ভৌগোলিক ও জলবাহিত পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নেয়া: রোড নির্মাণের সময় খালের সন্নিহিততা, বন্যা‑প্রবণতা, মাটির ধরন বিবেচনায় রাখা জরুরি।
মানচিত্র ও ডিজিটাল মনিটরিং: রোড‑সেকশন ও ব্রিজ‑সেতু স্থিতি ডিজিটালভাবে রেকর্ড করে সংশ্লিষ্ট ওয়েব/অ্যাপে আপডেট দেওয়া যেতে পারে।
পরিবহন‑সেবা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ: রোডের অবস্থা উন্নয়নসহ পরিবহন ভাড়া‑নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রীসুরক্ষা নীতিমালা বন্ধুবান্ধব হতে হবে।

লেখক: কবি ও গবেষক (সাহিত্য সম্পাাদক- দৈনিক ঐশী বাংলা)

Comments

    Please login to post comment. Login