Posts

উপন্যাস

শেষ চাবির রহস্য ৪

November 19, 2025

mr cgm

Original Author Md Jubayed Ahmed Mihan

30
View

শেষ চাবির রহস্য – অধ্যায় ৪

“মৃত সময়ের রক্ষকের আক্রমণ”

ঘরটি কাঁপছে।
অন্ধকারের মাঝে বিশাল ছায়ামূর্তিটি সামনে এগোচ্ছে।
তার শরীর মানুষ নয়— বরং সময়ের ছিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি।
যেন অদৃশ্য বালুঘড়ি ভেঙে ঝরে পড়া বালুর মতো দেহ।

সবার হৃদস্পন্দন একসাথে থেমে গেল।

এটাই…
মৃত সময়ের রক্ষক।

রায়েদ কাঁপা গলায় ফিসফিস করল—
— “এটা জেগে গেলে কেউ বাঁচে না…”

আরিব তার হাত ধরে থামাল,
— “চুপ! তার শব্দ শুনলেই আক্রমণ করবে!”

কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।

রক্ষকটি সামনে পা ফেলতেই
দেয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত সময়ের আত্মাগুলোও নড়াচড়া শুরু করল।
ঘরের চারপাশ থেকে নিম্নগর্জন শোনা যাচ্ছে—
যেন ভাঙা ঘড়ির ভিতর হাজার বছর ধরে জমে থাকা চিৎকার।

মিহান দাঁত চেপে বলল—
— “দ্বিতীয় চাবিটা ওদিকে! ওটা না আনলে আমরা বেরোতে পারব না!”

জোবায়েদ বুক ধরে বলল—
— “কিন্তু এইসব দানবের মাঝে দিয়ে যাব কীভাবে?”

আদর চারপাশ দেখে ধীরে বলল—
— “ওরা আলোর দিকে তাকায়… দেখেছো? যখন ওদের বুকের নীল আগুন জ্বলে, তখন তারা নড়াচড়া বাড়ে।”

মিহাদ বলল—
— “মানে আলো বন্ধ করলে হবে?”

আরিব মাথা নেড়ে বলল—
— “না! আলো বন্ধ করলে আমরা পথই দেখতে পাব না। বরং ওদের বিভ্রান্ত করতে আলো ছড়িয়ে দিতে হবে।”

ওমায়ের চোখ বড় করে বলল—
— “তাহলে ওদের চোখ কোথায়?”

আরিব ফিসফিস করে বলল—
— “ওদের চোখ নেই…
ওরা সময়ের গন্ধ দেখে।
যে কেউ সবচেয়ে ভয় পাবে— ওরা তাকে টার্গেট করবে।”

সবাই একসাথে মেহেরাবের দিকে তাকাল।

মেহেরাব:
— “কী?! আমি ভয় পাইনি! শুধু একটু নরম মানুষ আমি!”

কিন্তু তার কণ্ঠের কম্পনেই বোঝা গেল—
ওর কাছেই ছায়াগুলো এগোতে শুরু করেছে…


 

 রক্ষকের প্রথম আক্রমণ

রক্ষক হাত তুলতেই বাতাস কাঁপল।
তার হাতের তালু থেকে সাদা ধোঁয়ার মতো সময় বেরিয়ে এসে সোজা মেহেরাবের দিকে ঝাঁপ দিল!

মুহূর্তের মধ্যে মিহান মেহেরাবকে টেনে ফেলল।

ধোঁয়াটি ছুঁয়ে যাওয়া মাত্র দেয়ালের ঘড়িগুলো হঠাৎ বুড়িয়ে গেল…
কাঁচগুলো ভেঙে গেল…
ধাতুগুলো মরিচা পড়ে এক সেকেন্ডে শত বছর পুরোনো হয়ে গেল।

জোবায়েদ হকচকিয়ে বলল—
— “ওটা… সময়কে বুড়িয়ে দিচ্ছে!”

আরিব খুব দ্রুত বলল—
— “ওটার আক্রমণ মানে তোমার বয়স কয়েক সেকেন্ডে ৩০–৪০ বছর বেড়ে যাবে! কেউ ওটার ধোঁয়া ছুঁয়ো না!”

রক্ষক আবার হাত তুলল।

এইবার লক্ষ্য— মিহাদ।

মিহাদ স্থির হয়ে দাঁড়াল।
তার চোখে ঝিলিক।

— “আমি যদি ভয় পাই— ওটা আমাকে পাবে।
তাই ভয় পাব না।”

আদর চিৎকার চেপে বলল—
— “চুপ! শব্দ কোরো না!”

সবাই নিঃশ্বাস আটকে দেখল—
ধোঁয়াটি মিহাদের ঠিক পাশ দিয়ে গিয়ে দেয়ালে আঘাত করল।

দেয়াল মুহূর্তে শুকিয়ে ফেটে গুঁড়িয়ে গেল।


 

  আলো দিয়ে ফাঁদ তৈরি

মিহান বলল—
— “আমরা যদি আলো ছড়িয়ে দেই, ওরা কাকে আক্রমণ করবে বুঝতে পারবে না!”

আরিব দ্রুত পকেট থেকে ছোট একটা মিরর লাইট বের করল—
Time Guard–দের বিশেষ আলো।

— “এটার আলো ওদের বিভ্রান্ত করবে। কিন্তু মাত্র ৩০ সেকেন্ড কাজ করবে!”

মিহান মুখ শক্ত করে বলল—
— “৩০ সেকেন্ডেই চাবি নিয়ে ফিরব!”

সবাই ছড়িয়ে পড়ল।

আরিব আলো জ্বালালো।
এক মুহূর্তে ঘরের ছায়ারা বিভ্রান্ত হয়ে চারদিকে ঘুরপাক খেতে লাগল।

কিন্তু রক্ষক থামেনি।
সে শুধু আলোটা দেখেই বলল—

“তোমরা আলো নিয়ে খেলছো… বোকা।”

তার চোখে নীল আগুন জ্বলে উঠল।

 চাবি দখলের দৌড়

মিহান, আদর, আরিব— তারা তিনজন সরাসরি স্তম্ভের দিকে দৌড়াল।

ঘর কাঁপছে, ছায়ারা হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে।
আদর প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মিহাদ তাকে ধরে টেনে তুলল।

হঠাৎ রক্ষক সামনে এসে দাঁড়াল।

একটা বিশাল হাত তুলে সোজা মিহানের দিকে!

মিহান দেখল আক্রমণ আসছে—
আরিব চিৎকার করে বলল—

— “ডানদিকে লাফ দাও!”

মিহান লাফ দিল।
ধোঁয়াটি তার পোশাক ছুঁয়ে গেল…
তাৎক্ষণিক পোশাকের ওই অংশ বুড়িয়ে ছাই হয়ে উড়ে গেল।

আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড!

আদর চিৎকার করল—
— “মিহান! দৌড়াও! চাবিটা নাও!”

মিহান দাঁত কামড়ে দৌড়াল।
স্তম্ভে হাত বাড়াল—
তার আঙুল ছুঁই ছুঁই করছে—

তখনই আরিফুল হকের ভয়ানক কণ্ঠ পুরো ঘরে ভেসে উঠল—

“চাবি নিতে গেলে… সময়ের শাস্তি পাবে!”

মিহান থামল না।
সে চাবিটা শক্ত করে হাতে ধরল।

সাথেসাথে—

স্তম্ভ থেকে নীল আলো বিস্ফোরণের মতো চারদিকে ছড়িয়ে গেল!!

ছায়ামূর্তিগুলো চিৎকার করে পিছু হটল।
রক্ষক দুই কদম পিছিয়ে গেল, চোখ ঢেকে।

মাটি ফেটে গেল।
ঘড়িগুলো ভেঙে পড়তে লাগল।

রায়েদ চিৎকার করল—
— “চেম্বার ভেঙে যাচ্ছে! তাড়াতাড়ি বের হও!”


 

 পালিয়ে বাঁচার লড়াই

সবাই দৌড়াতে শুরু করল।
একটা দরজা খুলে আলো আসছে— বের হওয়ার পথ।

রক্ষক গর্জন করে পিছন থেকে ছুটে আসছে।

ওমায়ের চিৎকার করল—
— “ওটা আমাদের ধরার চেষ্টা করছে!”

আরিব বলল—
— “আর মাত্র কয়েক সেকেন্ডে দরজা বন্ধ হয়ে যাবে!”

আদর, মিহাদ, জোবায়েদ— সবাই লাফিয়ে দরজার বাইরে চলে গেল।
রায়েদও পার হয়ে গেল।

মিহান দৌড়াচ্ছে…
কিন্তু তার পিছনে রক্ষক খুব কাছাকাছি।

হঠাৎ মিহানের পা পিছলে গেল!

রক্ষক হাত বাড়িয়ে দিল—

ঠিক তখনই আরিব ফিরে এসে মিহানের হাত ধরে টেনে বাইরে ফেলে দিল।

দুজনই দরজার বাইরে পড়তেই দরজা ধড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল!

রক্ষকের হাত দরজায় আঘাত করল—
দরজা কেঁপে উঠল
কিন্তু খুলল না।

সবাই হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে বসল।

মিহান ধীরে হাত খুলে দেখল—
তার মুঠোয় রয়েছে দ্বিতীয় চাবি।

আদর চোখ বড় করে বলল—
— “আমরা… পেরেছি!”

রায়েদ হাসল—
— “হ্যাঁ। তোমরা দ্বিতীয় পরীক্ষা পেরিয়েছ।”

কিন্তু আরিব শান্ত স্বরে বলল—

— “অদ্ভুত ব্যাপার… রক্ষক কখনো কাউকে এত দূর পর্যন্ত তাড়া করে না।
মনে হয় আরিফুল হক… ওকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে।”

মিহান গম্ভীর হয়ে বলল—
— “মানে… আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে?”

আরিব ধীরে মাথা নেড়ে বলল…

“হ্যাঁ।
তৃতীয় পরীক্ষা হবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।”

অধ্যায় ৪ সমাপ্ত
চলবে…

Comments

    Please login to post comment. Login