Posts

উপন্যাস

অন্ধকারের ভিতর আলো

November 20, 2025

Md Josam

Original Author MD samim sikdar

Translated by MD Shamim sikdar

39
View

---

অন্ধকারের ভেতর আলো

(একটানা পূর্ণ উপন্যাস — কোন পর্ব নেই)

রাতের শেষ প্রহর, কুয়াশায় ঢেকে থাকা এক গ্রাম। হঠাৎই ভাঙা টিনের ঘরে জন্ম নিল এক শিশু। নাম রাখা হলো রাশেদ। জন্মের প্রথম কান্নাতেই সবাই টের পেল—এই ছেলেটার ভেতরে যেন এমন কিছু আছে, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভবে লাগে।

শৈশবটা ছিল অদ্ভুত। অন্য বাচ্চারা হুড়মুড় করে খেলে, হাসে, দৌড়ায়—কিন্তু রাশেদ দূরে দাঁড়িয়ে দেখে। সে মাটির খেলনা বানাত না, বরং আকাশের তারাগুলোকে দেখত। কেন আলো জ্বলে, কেন নিভে যায়—এই প্রশ্ন তার মাথা থেকে নামত না। মা বলতেন—“ওর ভেতর গভীর কিছু আছে।”
বাবা বলতেন—“ও মানুষকে বুঝতে শিখবে, মানুষের থেকে বেশি।”

বয়স বাড়ল। স্কুলে পড়ে, কিন্তু বইয়ের চেয়ে মানুষের মুখ তাকে বেশি টানে। কোন মানুষ দুঃখী, কে সুখী—সে বুঝে ফেলত এক ঝলকে। তার এই গভীরতা দেখে অনেকে ভয়ও পেত।

তার জীবনে প্রথম আলো এলো নীলা নামের এক মেয়ের মাধ্যমে। নীলার চোখে ছিল শান্তি। রাশেদ তাকে প্রথম দেখেই মনে মনে বলেছিল—“এ আলো আমি ধরে রাখতে পারব তো?”
কিছুদিন সুখ কাটল। মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে দু’জনের ছোট ছোট কথা, বাতাসে উড়ে যাওয়া নীলার চুল, আর নীরব হাসিগুলো রাশেদের ভিতরে আলো জ্বালিয়ে দিল।

কিন্তু জীবনে আলো কখনো স্থায়ী থাকে না।
একদিন নীলার বাবা তাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যাওয়ার আগের দিন নীলা শুধু বলল—
“তুমি তোমার আলো খুঁজে পাবে। আমাকে খুঁজতে যেও না। আমি তোমার পথের আলো নই, আমি তোমার পথের পাঠ।”

রাশেদ সেই দিন থেকে ভেঙে গেল।
প্রথমবার সে বুঝল—
যাকে জীবনে প্রয়োজন, সে সব সময় জীবনে থাকে না।

তবুও জীবন থেমে থাকে না।
সে শহরে গেল উচ্চশিক্ষার জন্য।
দিনে পড়া, রাতে কাজ।
কখনো ক্ষুধা, কখনো ক্লান্তি, কখনো হতাশা।
কিন্তু সে হাল ছাড়ল না। সে জানত—
অন্ধকার যত গভীর, ভেতরের আলো তত শক্তিশালী হয়।

চাকরি পেল। বেতন কম, কিন্তু গর্ব ছিল বেশি।
এই সময়ে তার জীবনে এলো শান্ত স্বভাবের রাবেয়া।
রাবেয়া তাকে শেখাল—
নীলা ছিল বিস্ময়, রাবেয়া হলো নিশ্চয়তা।
দুই আলো ভিন্ন, কিন্তু দুইটাই আলো।

বিয়ের পর রাশেদের জীবনে জন্ম নিল একটি ছেলে—নাম আজান।
সে যখন প্রথমবার ছেলেকে কোলে নিল, তখন মনে হলো—
“মানুষের জীবনের সব অন্ধকার মুছিয়ে দেবে সন্তানের একটুখানি হাসি।”

কিন্তু জীবন শুধুই আলো নয়।
বাবা মারা গেলেন।
মা ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
সময়ের স্রোতে রাশেদের চেহারায় ভাঁজ জমল, চুল সাদা হলো, কিন্তু তার হৃদয়ে একটাই প্রার্থনা—
আজান যেন এমন মানুষ হয়, যে নিজের আলো নিজে খুঁজে নিতে পারে।

একদিন সন্ধ্যায় ছেলেটা জিজ্ঞেস করল—
“বাবা, তুমি কি আলো পেয়েছ?”
রাশেদ থেমে গেল।
হাসল।
কিন্তু সত্যিটা ছিল—সে এখনো খুঁজছে।

বয়স বাড়তে লাগল।
স্মৃতি ঝাপসা হতে শুরু করল।
রাতে যখন জানালার ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকত, রাশেদ সেটার দিকে তাকিয়ে থাকত।
তার মনে হত—
মানুষ মরার আগে আলো একটু বেশি সুন্দর লাগে।

এক শীতের গভীর রাতে বুক ভারী হতে লাগল।
রাবেয়া তার হাত ধরল, আজান পাশে বসলো।
রাশেদ জানালা দিয়ে ভোরের আলো উঠতে দেখছিল।
তার মনে হলো—আজ তার সমস্ত পথচলা সম্পূর্ণ হলো।

শেষ মুহূর্তে সে শুধু বলল—
“আলো সবসময় ভেতরেই থাকে…”

তারপর নিঃশব্দে চলে গেল।

কিন্তু তার শেখানো কথাগুলো আজানের হৃদয়ে আলো হয়ে বেঁচে রইল।
মানুষ মরে, কিন্তু মানুষের শেখানো আলো কখনো মরে না।

এভাবেই রাশেদের জন্ম–মৃত্যুর পুরো পথ শেষ হয়—
অন্ধকার থেকে আলোতে পৌঁছে।


---

Comments

    Please login to post comment. Login