Posts

উপন্যাস

অন্তহীন বাতাসের সুর

November 21, 2025

Md Josam

Original Author MD samim sikdar

Translated by MD Shamim sikdar

47
View

অন্তহীন বাতাসের সুর 

নিশ্চল রাতের আকাশে চাঁদের আলো নদীর জলে ভিজে আসে, আর নদী যেন তার প্রতিধ্বনিতে আকাশকে ছুঁয়ে ধরে। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা অমৃতার চোখে সেই আলো আর বাস্তবের সীমা মিলেমিশে গেছে। চারপাশে নিস্তব্ধতা, অথচ ভেতরে অদৃশ্য স্রোত—যেমন বাতাস নিজের গোপন কাহিনী গুনছে।

অমৃতার জীবনও ঠিক এমন—সীমাহীন, অজানা, গভীর। ছোটবেলা থেকেই সে অনুভব করেছে মানুষের শব্দ, হাসি, কান্না—সবই বাতাসের মতো, স্পর্শযোগ্য নয়, কিন্তু অমলিনভাবে অনুভূত।

প্রথম জীবনের স্মৃতি তার মনে অদ্ভুতভাবে বাজে। মা যখন তাকে দোতলা ঘরের বারান্দায় নিয়ে বসাতেন, তখন বাতাসের শীতল স্পর্শ তার মুখে পড়ত। সে তখনই বুঝতে পেরেছিল—বাতাস শুধু শ্বাস নয়, এটি ইতিহাস, স্মৃতি, অনুভূতি এবং সঙ্গীতের এক অদৃশ্য স্রোত।

একদিন রাতের অন্ধকারে নদীর তীরে বসে অমৃতা শুনতে পেল বাতাসের মধ্যে একটি সুর, যা তার মনে অদ্ভুতভাবে ছুঁয়ে গেল। সুরটি শুধু শুনার নয়, অনুভব করার—যেন বাতাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সমস্ত গল্প, সমস্ত বেদনা, সমস্ত আশা এক সঙ্গে তাকে ডাকছে। অমৃতা চুপচাপ বসে সেই সুরের দিকে মন দিয়েছে।

দিনের পর দিন সে নদীর তীরে বসে শোনে সেই সুর। প্রতিটি সুরে লুকিয়ে থাকে নতুন গল্পের শুরু। কখনও মনে হয় সুরটি তাকে শিখাচ্ছে, কখনও মনে হয় এটি তার নিজের আত্মার প্রতিধ্বনি।

একদিন নদীর পাশে এক বৃদ্ধ লোক এল। তার চোখে অদ্ভুত দ্যুতি, যেন সে সবকিছু জানে। সে অমৃতাকে বলল—
“তুমি শুনছো কি, সেই বাতাসের অন্তহীন সুর? এই সুরে লুকিয়ে আছে সবকিছুর শুরু আর শেষ। তুমি যদি সাহস রাখো, তুমি নিজের ভেতরের সীমাহীন যাত্রা শুরু করতে পারবে।”

অমৃতা সেই সাহস পেয়েছিল। সে বুঝতে পারে, মানুষ শুধু বেঁচে থাকে না—মানুষ অনুভব করে, স্বপ্ন দেখে, হারিয়ে যায়, আবার খুঁজে পায়। বাতাসের সুর তাকে শিখিয়েছে যে জীবনের প্রতিটি ক্ষণই একটি গল্প, প্রতিটি গল্পই একটি সুর।

সুরের প্রতিধ্বনি তার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে জাগ্রত থাকে। ছোটখাটো সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা—সবই একটি বাতাসের সুরে মিশে যায়। সে বোঝে, পৃথিবীর প্রতিটি নিঃশ্বাস, নদীর প্রতিটি ঢেউ, পাখির প্রতিটি গান—সবই এই সুরের অংশ।

বছর কেটে যায়। অমৃতা একজন কবি, গল্পকার, শিল্পী হয়ে ওঠে। তার লেখা প্রতিটি গল্পে বাতাসের সুর বাজে। যারা তার গল্প পড়ে, তারা অনুভব করে—এটি শুধু গল্প নয়, এটি জীবনের প্রতিধ্বনি, বাতাসের অন্তহীন সুর।

একদিন অমৃতা নদীর তীরে বসে নিজের অতীতের সমস্ত মুহূর্তকে ফিরে দেখে। শিশুর মতো হেসে ওঠে, কখনও কাঁদে, কখনও মায়ার আবেশে নিজেকে হারায়। রাতের অন্ধকারে চাঁদের আলো নদীর জলকে কোমলভাবে স্পর্শ করছে। অমৃতা হেসে বলে—
“সুর কখনো শেষ হয় না। মানুষ চলে যায়, কিন্তু বাতাস, সুর, এবং গল্প—সবই চিরকাল থাকে। অন্তহীন।”

নদীর তীরে সেই রাতের নিস্তব্ধতা, বাতাসের সুর, এবং অমৃতার হেসে ওঠা চিরকাল বেঁচে থাকে।

Comments

    Please login to post comment. Login