শ্রাবণ মাস চলিতেছে।রহিম ব্যাপারী বাড়ির সবুজ উদ্যানের এক পাশে কয়েকটি কুকুর পুষছে।বারংবার বিভিন্ন খাবার দিয়ে সে কুকুরদের অবসর নিতে দিচ্ছে না।
রহিম ব্যাপারী যে খুব কুকুরপ্রেমী এমনটা না;তবে তার একমাত্র পঞ্চবর্ষীয় পুত্রসন্তানের আবদার এমন আচরণে তাকে বাধ্য করছে।বিবাহের পর ছয় বছর তাদের কোনো সন্তান হয় নি।নামজাদা সব চিকিৎসক দেখিয়ে তবে রহিম সাহেব ক্ষান্ত হয়েছেন।
তবে গল্প আমাদের তা নিয়ে নয়;একটু ধৈর্য ধরে পাঠ করুন।লাভ না হলেও ক্ষতি হবে না।রহিম সাহেবের পুত্র রাহাতকে নিয়ে তার বাবা,মা,চাচা,চাচী,দাদী(দাদা মৃত) সবাই খুবই আদরে আপ্লুত।
একটি কুকুর কোত্থুকে তাদের তল্লাটে এলো সহসা একদিন।এটা যে স্ত্রী কুকুর সে জ্ঞান রহিম সাহেব পুত্র রাহাতের না হলেও অপরাপর সকলেরই হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।আদুরে সন্তান রাহাত এই কুকুরী না দেখে ভাত খেতেই চায় না।
তার মা তাই তাকে ওই জন্তুটাকে দেখিয়েই খায় ছড়া বলতে বলতে খাওয়ায়।রাহাত কিন্তু কথা বলতে পারে,এবিসিডি পারে,রাইম পারে কিছু;কোনো এক অদ্ভুত কারণে কুকুরকে ডাকে হুতুম।হুতুমকে ছাড়া তার চলে না।
রহিম ব্যাপারীর ধনসম্পদের সাথে তার ভাই রেজোয়ান সাহেব ব্যতীত তল্লাটে আশেপাশের সবার ধনসম্পদ বা টাকাপয়সার বিরাট ফারাক।তাই সে রাহাতকে ওদের প্রতিবেশী শিশুদের সাথে মিশতে দিতে চায় না।ওরা এবিসিডি-র জায়গায় কুৎসিত সব গালাগাল চর্চা করছে দিবারাত্র।
রহিম সাহবেরা তিন ভাই। এক ভাই সুইজারল্যান্ড থাকে;সেখানেই সপরিবার বসবাস। আরেক ভাইয়ের পাশেই তাদের মতোই বিরাট অট্টালিকা।তবে সীমান্ত্ররেখা হিসেবে দেওয়াল দেয়া আছে ইটের।রেজোয়ান সাহেব দীর্ঘদিন হৃদরোগে ভুগছেন।তার সন্তানেরাই সবাই প্রতিষ্ঠিত এবং বিভিন্ন দেশে কর্মরত।
তো একবার তার সন্তান আশফাক ছুটিতে এলো জার্মানি হতে।রেজোয়ান সাহেবের সন্তান।রাহাতের কাকাতো ভাই।
আশফাক দেখতে সুঠাম,চোখে চশমা।পড়াশোনা করছে হিটলারের দেশ জার্মানিতে।পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে।আইন্সটাইনেরও দেশ বটে জার্মানি।
আশফাক রাহাতকে ক্রিকেট খেলা শেখাবে তাই রাহাতদের সবুজ উদ্যানে আসল এক প্রভাতে।
সূর্য চমৎকার আলো দিচ্ছে।এর মধ্যেই ঘটনাচক্রে বল ধরতে গেলে কুকুরীটা রাহাতকে কামড় দেয় পায়ে।
ইতোমধ্যে সময় বেশ গড়িয়েছে।এবং কুকুরীটা এখন অনেকগুলো সাদা কালো বাচ্চা জন্ম দিয়েছে।
আশফাক কি করবে বুঝতে পারল না।সে খেলার মধ্যে ইন্টারনেটে কি যেন দেখছিল।আর এ ফাঁকেই অঘটন।
সে কিন্তু গোপন করল এটি।রহিম সাহেবকে বলল কুকুরীটা দৌড়ে এসে কামড়িয়েছে।কিন্তু এসব কিছুই রহিম সাহেবকে উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারল না।তার ভাষায় কিছুটা অশ্লীলতার সংমিশ্রণ ঘটল।
সে হনহনিয়ে গাড়িতে করে তার ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের নিকটে গেল।রাহাতকে র্যাবিসের ইঞ্জেকশন দেয়া হলো।ইঞ্জেকশন শরীরে প্রবেশমাত্র সে চিতকার করল জোরে,উচ্চস্বরে।
এদিকে তাদের উদ্যানে কুকুরীটা তার সাদা কালো কুকুর বাচ্চাসহ সব নিয়ে মৃত পড়ে রইল।যে দুধ ফিটারে করে তাদের দেওয়া হয়েছিল খেতে;তাতে রহিম সাহেব বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
বাসায় এসে কুকুরদের এহেন অবস্থা দেখে রাহাত অবশ্য খুব আনন্দ পেল না;দুঃখও পেল না।শুধু বলল,বাবা,আমার কি আরও ইঞ্জেকশন দেয়া লাগবে?না দিলে হয় না ইত্যাদি।
তার বাবা বললেন,না বাবা আর দেয়া লাগবে না।কথাটি যদিও অসত্য।যেমন অসত্য ছিল দুগ্ধ;ঐ জন্তুগুলোর কাছে।
27
View