শেষ চাবির রহস্য – পর্ব ৬
“অসমাপ্ত সময়ের গোলকধাঁধা”
গোপন টানেলের দরজা খুলতেই এক তীব্র শীতল বাতাস এসে লাগল মিহানদের মুখে। দেয়ালগুলো ধাতুর মতো ঠাণ্ডা, আর প্রতিটা পদক্ষেপে প্রতিধ্বনি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল টানেলটা আগেই কারও ভয় আর আতঙ্ক গিলে নিয়েছে।
রায়েদ নিচু গলায় বলল—
“এই পথ… সহজ নয়। ভুল পথে গেলে সময় তোমাদের খেয়ে ফেলবে।”
আদর বুক সোজা করে বলল—
“যা-ই হোক, আমরা বের হবই। রায়েদকে বাড়ি নিয়ে যাব।”
গোলকধাঁধার দরজা
টানেল শেষ হতেই দেখা গেল—
এক বিশাল লোহার গোল দরজা।
দরজার ওপরে খোদাই করা লেখা—
“অসমাপ্ত সময়ের গোলকধাঁধা – ভুল পথ = সময়ের ক্ষয়”
ওমায়ের বলে উঠল—
“সময় ক্ষয়? মানে কি আমরা বুড়া হয়ে যাব?”
রায়েদ মাথা নেড়ে বলল—
“কেউ বুড়া হয়, কেউ ছোট বাচ্চা হয়ে যায়… কেউ পুরোপুরি সময়ের বাইরে পড়ে হারিয়ে যায়।”
মেহেরাব ভয় পেয়ে আদরের পিছনে লুকাল।
মিহান দরজায় হাত রাখল। দরজা ধীরে ধীরে খুলে গেল।
ভেতরে দেখা গেল—
➤ অগণিত পথ
➤ প্রতিটি পথ আলাদা রঙের আলো
➤ পথগুলো নড়ছে, বদলে যাচ্ছে
➤ যেন জীবন্ত গোলকধাঁধা
প্রথম ফাঁদ – “সময় বিভ্রম”
হঠাৎ আদর থেমে গেল।
তার সামনে দাঁড়িয়ে… আরেকজন আদর!
একদম এক রকম—
একই পোশাক, একই চুল, একই চোখ।
দু’জনই একইসাথে বলল—
“আমি-ই আসল আদর!”
ওমায়ের হতবাক।
মিহাদ বলল,
“ক্লোন! ভুলকে ধরলে বিপদ হবে।”
মিহান শান্ত হয়ে আদরের দিকে তাকাল।
তারপর ক্লোনটার দিকে তাকাল।
সে বলল—
“আসল আদর কখনো নিজের কথা জোরে প্রমাণ করতে চায় না। সে কাজ দেখায়।”
কথা শেষ হতেই ডানদিকের ক্লোন হাসল—
“আমি ভয় পাই না—তাই আমি আসল!”
মিহান চেঁচিয়ে বলল—
“ভুল! আসল আদর তার সাহস দেখায় কাজে, কথায় নয়!”
হঠাৎই ক্লোনটার শরীর ছায়া হয়ে ভেঙে গেল।
আসল আদর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
দ্বিতীয় ফাঁদ – সময় গিলে নেওয়া মেঝে
তারা সামনে এগোতেই দেখল—
মেঝে ফাটতে শুরু করেছে।
ফাটলের নিচে এক কালো ঘূর্ণি—
যা যেন সময় গিলে খাচ্ছে।
জোবায়েদ বলল—
“দেখ! ওখানে ঘড়ির কাঁটার মতো সাদা একটা রেখা—ওটাই সেফ পথ।”
কিন্তু সমস্যা—
➤ পথ ৫ সেকেন্ড পরপর অদৃশ্য হচ্ছে
➤ আবার অন্য জায়গায় দেখা দিচ্ছে
➤ ভুল দিলে সরাসরি নিচে পড়ে যাবে
মিহাদ এগিয়ে বলল—
“আমি লিড দিচ্ছি! সবাই আমার ঠিক পিছনে!”
তারা দৌড়াতে লাগল।
একটা পথ অদৃশ্য হলো—
আরেকটা তৈরি হলো—
মাটি ভাঙল—
মেহেরাব চিৎকার করতে করতে লাফ দিল—
শেষ মুহূর্তে তারা সেফ জায়গায় পৌঁছাল।
মেহেরাব হাঁপাতে হাঁপাতে বলল—
“আরেকটু হলেই… আমি শেষ!”
তৃতীয় ফাঁদ – আরিবের সত্য
হঠাৎ আলো নিভে গেল।
এক সেকেন্ড পরে আলো জ্বলে উঠতেই—
তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আরিব।
তার মুখ গম্ভীর।
আরিব:
“তোমরা আমাকে ভুল বুঝেছ। আমি আরিফুল হকের দলে নই।”
সবাই তাকাল।
আরিব:
“ও আমাকে সময় নিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিল।
আমি তার বন্দি… সহযোগী না।”
জোবায়েদ বলল—
“তাহলে তুমি আমাদের কেন ঠকালে?”
আরিব বলল—
“কারণ আমি না চাইলে তোমরা আগেই মারা যেতে—
অনেক ফাঁদ আমি নিষ্ক্রিয় করেছি।”
ওমায়ের জিজ্ঞেস করল—
“তাহলে এখন কী?”
আরিব ধীরে বলল—
“এখন থেকে তোমাদের বাঁচানো আমার পক্ষে সম্ভব না।
পরের ফাঁদ… আরিফুল নিজের হাতে বানিয়েছে।”
এ কথা বলেই সে মিলিয়ে গেল।
তারা আর বেশি বুঝতে পারল না—
কিন্তু আরিব এখন শত্রু নয়,
এটা নিশ্চিত।
তিনটি চূড়ান্ত দরজা
গোলকধাঁধার শেষ প্রান্তে তিনটি আলোকিত দরজা—
1. সময় পিছিয়ে যাওয়ার দরজা
2. সময় দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার দরজা
3. সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরজা — সবচেয়ে বিপজ্জনক
রায়েদের ভেসে আসা কণ্ঠ—
“ভুল দরজা নিলে তোমাদের একজন… চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।”
তারা থমকে গেল।
আদর বলল—
“আমাদের চাবির সময় ১০:৩৫…
মানে সময় না পিছোয়… না এগোয়…
সোজা উত্তর—সময় স্থির থাকা দরজা।”
জোবায়েদ চিৎকার করল—
“ঠিক! Door 3 !”
মিহান চাবি ঢুকাল।
দরজা কেঁপে উঠল।
ধীরে ধীরে খুলল।
ভেতর থেকে বের হল—
এক অন্ধ করে দেওয়া সাদা আলো…
আর সেই আলোর ভেতর দাঁড়িয়ে কেউ আছে…
পর্ব ৬ সমাপ্ত
চলবে…