হারানো দিনের খোঁজে
রাতের নিস্তব্ধতা শহরকে নিঃশব্দে ঢেকে রেখেছিল। আরিফ তার ছোট কক্ষে বসে পুরনো আলবাম খুলল। প্রতিটি ছবিতে যেন জীবনের এক অদৃশ্য গল্প ধীরে ধীরে খোলার চেষ্টা করছিল। এক ছবি তার চোখে আটকে গেল—ছবিতে সে আর তার বন্ধুরা এক সময় হাসছিল, দৌড়াচ্ছিল, আর আকাশের দিকে চিৎকার করে কথা বলছিল। সে হঠাৎ মনে করল, কতটা সহজে সবকিছু চলে যায়, আর কত দ্রুত জীবন বদলে যায়।
আরিফ দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তার মনে হলো, হারানো দিনের খোঁজ শুধু ছবি বা স্মৃতিতে নেই—এটি হৃদয়ের গভীরে লুকানো। সে ভাবল, যদি একবারই সেই আনন্দ ফিরে আনা যেত, সব যন্ত্রণার বোঝা যেন হালকা হয়ে যেত।
পরদিন সকালে, সূর্যের নরম আলো ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকল। আরিফ তার বন্ধুরা সবাইকে ফোন করল। “চলো, সেই জায়গায় যাই, যেখানে আমরা এক সময় সবকিছু ভুলে কেবল আনন্দ করতাম।” বন্ধুরাও উত্তেজিত হয়ে প্রতিশ্রুতি দিল।
তারা শহরের ভিড় পেরিয়ে প্রায় পাহাড়ের ধারে পৌঁছাল। চারপাশে সবুজের ছায়া, পাখির কিচিরমিচির, আর বাতাসে মধুর সুগন্ধ—সব মিলিয়ে যেন তাদের ছোটবেলার সেই দিনের সঙ্গে মিলছিল। তারা দৌড়াল, লাফালাফি করল, একে অপরের গল্প শুনল, হেসে ফেলল—আর সেই মুহূর্তে মনে হলো, হারানো দিনগুলো হয়তো আর ফিরে আসে না, কিন্তু নতুন স্মৃতি তৈরি করা যায়।
দিন যত বাড়ল, তারা গাছের নিচে বসে কথা বলল—কত ভুলে যাওয়া মুহূর্ত কতো আনন্দের ছিল। আরিফ বুঝল, জীবনের সত্যিকারের সুখ শুধু স্মৃতিতে নয়, তা মানুষকে আবার একত্রিত করতে, হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে।
বিকেলের আলো যখন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসল, তারা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু আরিফের মনে নতুন এক শক্তি জন্ম নিয়েছিল—হারানো দিনের খোঁজ কখনো শেষ হয় না। তা শুধু অপেক্ষা করে, আবার ফিরে এসে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান করে তুলতে।
যে দিনটি তারা হারিয়েছিল, তার আনন্দ আর নেই, কিন্তু সেই স্মৃতি তাদের কাছে নতুন শক্তি ও নতুন আশা নিয়ে এসেছে। আরিফ বুঝল, জীবনের ক্ষণস্থায়ী ক্ষতি বা হারানো দিন কেবল মধুর স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়, এবং মানুষ তার হৃদয়ের গভীরে সেসব খুঁজে বের করে নতুন দিশা পায়।
রাত্রি যখন নেমে এলো, আরিফ জানল, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মনে রাখা এবং নতুন স্মৃতি তৈরি করা—এইই প্রকৃত খোঁজ। হারানো দিনের খোঁজ কেবল অতীতে নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে লুকিয়ে আছে।