পোস্টস

গল্প

ঈদ আনন্দে বিষাদ

৪ জুন ২০২৪

মোফাজ্জল হোসেন (শান্ত)

সকাল ৭টা বেজে ৩০ মিনিট। ফোনে রিং হচ্ছে। রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো, কিরে ছোটন কেমন আছিস? ছোটন বললো, আরে ভাইয়া তুমি!... হ্যাঁ,মা’কে বলিস, আমি আসছি।

রবি, মা-বাবার বড় ছেলে। আর সিফাত হচ্ছে রবি’র একমাত্র ছোট ভাই। রবি আদর করে তাকে ছোটন বলে ডাকে। শুধু রবি নয়, পরিবারের সবাই তাকে ছোটন বলেই ডাকে। আর মাত্র তিন দিন পর ঈদ। রবি চাকরি পাওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঈদ। সে খুব খুশি। কারণ, সে তার চাকরির বেতন থেকে মা-বাবাসহ ছোটনের জন্য ঈদের শপিং করেছে। আজ রবি সকাল সকাল রাস্তায় বেরিয়েছে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাস কাউন্টারে এসে টিকিট নিয়ে সে বাসে উঠে। অল্প কিছুক্ষণ পরই বাস তার গন্তব্যে যাত্রা করে। 

রবি জানালার ধারে বসে মৃদু হাওয়ায় ভাবছে তার অতীতের স্মৃতি। তার মা-বাবা তাকে কত কষ্ট করে লেখা-পড়া করিয়েছে। তার মনে পড়ে ছোটবেলার সেই ঈদের কথা। যে ঈদের আগে তার খুব মন খারাপ ছিলো। কারণ বাবা তাকে নতুন জামা কিনে দেয়নি। কিনে দেয়নি বললে ভুল হবে, আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় কিনে দিতে পারেনি। রবি’র মন খারাপ দেখে, ঈদের আগের দিন বিকেলবেলা মা তাঁর শখের দু’টো মুরগি বাবা’র হাতে তুলে দেয় বিক্রি করতে। বাবা সেই মুরগি বিক্রি করে, সেদিন-ই রবিকে নতুন জামা কিনে দেয়। তখন রবি’র খুশির শেষ ছিলো না। এই ভাবতে ভাবতে রবি ঘুমিয়ে যায়। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখছে, আজ তার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে মা বার বার পথে এসে উঁকি দিচ্ছে, ছেলেকে দেখা যায় কি না! আর ছোটন বাবাকে বারংবার জিজ্ঞেস করছে, “বাবা! ভাইয়া কখন আসবে?” উত্তরে বাবা বলছে, এই বুঝি চলে আসলো, আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। অতঃপর রবি যখন বাড়িতে যায়, তখন সবাই খুব খুশি। রবি ছোটনকে নতুন জামা দিলে, জামাটি দেখে ছোটন বলছে ভাইয়া আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। বাবা বলছে আমাদের জন্য এত টাকা খরচ না করলেও পারতে। আর মায়ের চোখ বেয়ে ঝড়ে পড়ছে অশ্রু। রবি দেখে বলছে মা তু…..!

হঠাৎ বিকট শব্দে রবি’র ভেঙে গেলো স্বপ্নময় ঘুম। আর চোখ দু’টো মিলতে না মিলতেই ভর করলো আঁধার। রক্তাক্ত দেহে না ফেরার দেশের যাত্রী হয়ে ওপারে পারি জমালো রবি। ওদিকে মায়ের অন্তরে ছটফটানি শুরু হয়েছে। মা ছোটনকে বললো, তোর বড় ভাইকে ফোন দিয়ে শোনতো কত দূর আছে এখন? ছোটন মায়ের কথা মতো ফোন দিলে, কল যাচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছে না। তাই সে তার মাকে বললো, “মা রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না। হয়তো ভাইয়া গাড়ির শব্দে বুঝতে পারছে না। 

দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, তবুও রবি’র কোনো খবর নেই। তার মা-বাবা খুবই চিন্তা করছেন। আর ভাবছেন ছেলেটা সেই যে সকালে রওনাা হলো, সারাদিন কোনো খোঁজ-খবর নেই। ফোন দিলে ফোনও ধরছে না। ছেলেটার কিছু হলো না তো। মা খুব চিন্তান্বিত। 

হঠাৎ ছোটন চিৎকার করে তার মা-বাবাকে ডাকছে। ছোটনের চিৎকার শুনে তার মা-বাবা দু’জনেই আসলো। মা বললেন তোর আবার কি হলো? ছোটন অশ্রু ভেজা চোখে বললো, মা দেখো টিভি’তে দেখাচ্ছে বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে। আর রক্তাক্ত ঐ লাশটিকে আমার রবি ভাইয়ার মতো দেখাচ্ছে। মা-বাবা দেখা মাত্রই চিনতে পারেন তার আদরের ছেলেকে। মা রবি’র মৃত চেহারা দেখা মাত্রই জ্ঞান হারিয়ে ধপ করে মাটিতে পরে গেলেন। অশ্রু চোখে হতবিহ্বল তার বাবা। আর ছোটনের কানে এখনো বাজছে, “কিরে ছোটন কেমন আছিস? …..মা’কে বলিস, আমি আসছি।”