Posts

গল্প

অপূর্ব ফেরা

November 24, 2025

Md. Lalon Shaikh

36
View

আরিফ, ঢাকার একটা নামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র। বয়স মাত্র ২২। বাবা বড় ব্যবসায়ী, মা ফ্যাশনেবল। বাড়িতে টাকার অভাব নেই, কিন্তু নামাজ-কালামের চর্চা প্রায় ছিলই না। আরিফের দিন কাটত পার্টি, গার্লফ্রেন্ড, ক্লাব, আর রাত জেগে গান শুনে। মনে একটা খালি ভাব, কিন্তু সে বুঝত না কীসের জন্য।

এক রাতে পার্টি থেকে ফেরার পথে তার গাড়িটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট করে। গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে গেল, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, আরিফের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগেনি। পুলিশ এসে বলল, “ভাই, তুমি নতুন করে জন্ম নিয়েছ। এমন অ্যাক্সিডেন্টে কেউ বাঁচে না।”

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আরিফের চোখে জল এল। প্রথমবার মনে হলো, “আমাকে কেউ বাঁচিয়েছে। কিন্তু কে?”

পরদিন বিকেলে তার রুমে এল একজন অচেনা যুবক। সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, মুখে হাসি। নিজের নাম বলল, “আমি সাকিব। তোমার বন্ধু রাফির কাজিন।” আরিফ অবাক। সাকিব হাতে একটা ছোট কুরআন এনে দিল আর বলল, “তোমার জন্য দোয়া করছিলাম। আল্লাহ তোমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। এবার একটু ভেবে দেখো, কার জন্য বাঁচবে?”

আরিফ কথা বলতে পারল না। সাকিব চলে গেল। রাতে আরিফ প্রথমবার কুরআন খুলল। সে কুরআন পড়তে জানতো না। কিন্তু কুরআন খুলে যে আয়াতে প্রথমে চোখ পড়ল সূরা আর-রহমানের আয়াতে: “فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ”, সে  নিচের অর্থ পড়লো “তোমাদের রবের কোন কোন নেয়ামতকে তোমরা অস্বীকার করবে?”

চোখ দিয়ে পানি গড়াতে লাগল। মনে হলো, এতদিন সে আল্লাহর হাজারো নেয়ামত নিয়ে শুধু অহংকারই করেছে।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আরিফ বাড়ি ফিরল। কিন্তু মন আর আগের মতো রইল না। সে পুরোনো বন্ধুদের বলল, “আমি আর পার্টিতে যাব না।” সবাই হাসল, অ্যাক্সিডেন্টের পর আরিফ পাগল হয়ে গেছে!”

কিন্তু আরিফ থামল না, তাদের কথায় কোন কিছুই মনে করল না। সে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করল। প্রথম জুম'আয় মসজিদে গেল। ইমাম সাহেব খুতবায় বলছিলেন, “যে একবার তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তার পুরো জীবনের গুনাহ মুছে দেন, যেন সে এইমাত্র মায়ের পেট থেকে বের হয়েছে।”

আরিফের বুক কেঁপে উঠল। জুম'আর নামাজের পর সে ইমামের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি সব ছেড়ে দিতে চাই। আমাকে শিখিয়ে দিন।”

সেই থেকে আরিফের জীবন বদলে গেল। সে ফজরের নামাজ পড়তে শুরু করল। কুরআন শিখতে লাগল। গার্লফ্রেন্ডকে বলল, “যদি বিয়ে করতে চাও, হালাল পথে করব। নইলে বিদায়।” সে বিয়েটা করল না। বরং একটা এতীমখানায় গিয়ে কাজ শুরু করল।

বাবা-মা প্রথমে রাগ করলেন। কিন্তু একদিন বাবা দেখলেন, আরিফ রাত তিনটায় উঠে তাহাজ্জুদ পড়ছে আর কাঁদছে। বাবা চুপি চুপি দরজার আড়াল থেকে শুনলেন, আরিফ বলছে, “ইয়া আল্লাহ! আমি এতদিন তোমাকে ভুলে ছিলাম। আর ভুলব না। আমাকে ক্ষমা করে নাও।”

বাবা আর থাকতে পারলেন না। তিনিও সেদিন প্রথম ফজরের নামাজ পড়লেন আরিফের সঙ্গে। পুরো পরিবার এখন ইসলামের সরল পথের পথিক।

আজ পাঁচ বছর পর আরিফ ঢাকার একটা বড় মাদ্রাসায় কুরআনের হাফেজ হয়েছে। তার ইউটিউব চ্যানেলে লাখো যুবক তওবার গল্প শুনে কাঁদে। আর সে প্রতিবার বলে, “আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ আমাকে খুঁজে নিয়েছেন। যে কেউ হারিয়ে গেলেও, একবার শুধু ফিরে আসার ইচ্ছে করলেই আল্লাহ দৌড়ে আসেন। কারণ তিনি তো আর-রহমান, সবচেয়ে দয়াময়।”

আর তার মুখে সবসময় একটা কথাই ঘুরে: “আমার গাড়ি দুমড়ে গিয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ আমার হৃদয়টা ঠিক করে দিয়েছেন। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাক্সিডেন্ট থেকে রেসকিউ।”

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুসতাকিমে অটল রাখুন। আমিন।

Comments

    Please login to post comment. Login