Posts

গল্প

মাটির নিচের শহর

November 24, 2025

Md Josam

Original Author মোঃ জসিম

Translated by মোঃ জসিম

39
View

মাটির নিচের শহর

মাটির নিচে এক অদ্ভুত শহর আছে—যে শহরকে দিনের আলো স্পর্শ করে না। কেউ বাইরে থেকে এই শহরের কথা জানে না, কেউই প্রবেশদ্বার খুঁজে পায় না। শহরের প্রবেশপথটি এমন অদৃশ্য যে একমাত্র স্থানীয়রা জানে কোথায়। এই শহরকে কেউ তৈরি করেনি, এটি নিজেই জন্ম নিয়েছে মাটির গভীর অন্ধকারে।

শহরের মানুষরা এক অদ্ভুত নিয়মে জীবন কাটায়। বাইরে যেমন মানুষ প্রাধান্য দেয় ধন, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা—এখানে তা নেই। এখানে মানুষের মূল্য নির্ধারণ হয় তার অন্তরের আঙ্গিক, দয়া, ভালোবাসা, শিখতে চাওয়া এবং নিজের জীবনের গল্পকে বাঁচানোর ক্ষমতার মাধ্যমে।

শহরের গলি ছোট, ঘরগুলো মাটির মতো শক্ত, তবে মানুষের হৃদয় সেখানে আকাশ ছুঁয়। প্রতিটি গলিতে প্রতিটি বাড়িতে আলাদা গল্প বয়ে চলে—হাসি, কান্না, স্বপ্ন, ব্যর্থতা। এখানে কেউ ধনী বা গরীব বলে বিভাজিত নয়। সকলের জীবন সমান, কিন্তু অনুভূতির গভীরতা আলাদা।

শহরের কেন্দ্রে আছে বড় মাটির আঙিনা। প্রতিদিন সকাল-বিকালে মানুষ এখানে আসে। কেউ এসে নিজের সুখ ভাগ করে, কেউ আসে দুঃখ নিয়ে। এখানে শেখানো হয়—একটি হাসি কখনো ছোট নয়, একটি কান্না কখনো অমূল্য নয়। এখানে কেউ নিজের ব্যথা বোঝে না, কেউ বোঝে না অন্যের প্রেমের মানে। কিন্তু তারা একে অপরের পাশে থাকে, শিখে, বোঝে, এবং ধীরে ধীরে নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তোলে।

শহরের মানুষদের জীবনের গল্পগুলো এত গভীর যে বাইরে থেকে কেউ সহজে বুঝতে পারে না।

  • ছোট্ট ছেলে অয়ন আছে, যে ভাবত, “আমরা মাটির নিচে আছি, কিন্তু আমাদের মন আকাশ ছুঁয়।” প্রতিদিন সে শহরের মানুষের গল্প শোনে, হাসে, খেলে, কখনো কাঁদে।
  • জয়ন্ত, নিজের ব্যর্থতার ভারে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়ায়। সে চায় সুখ, কিন্তু নিজের ভুল ও অনিশ্চয়তার ভার বয়ে বেড়ায়।
  • সীমা, যে ভালোবাসা বোঝে না, প্রেম বোঝে না, কিন্তু তার হাসি শহরের মানুষদের জীবনে আলো দেয়।
  • মঞ্জু, দুঃখের কারণে আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে, কিন্তু শহরের গল্প শুনে ধীরে ধীরে জীবনের আশা খুঁজে পায়।
  • রিশা, শহরের বৃদ্ধা, যিনি জীবনের প্রতিটি ব্যথা বোঝেন, আবার তাদেরকে শক্তি দেন। তার কণ্ঠে এমন অভিজ্ঞতার ছাপ যে, শহরের নতুন প্রজন্ম শিখতে চায়।

শহরের মানুষের দিন শুরু হয় নীরবতা দিয়ে। সকাল বেলায় মাটির আঙিনায় সবাই এসে মিলিত হয়। কেউ গানে মন ভরে, কেউ নিজের কষ্টের কথা বলে। সবাই শুনে, বুঝে, এবং একে অপরকে সমর্থন দেয়। কেউ হাসে, কেউ কাঁদে, কেউ আশা করে আবার কেউ হাহাকার করে। এই সব অনুভূতির সমাহারে শহর জীবন্ত।

শহরের পরিবেশ অদ্ভুত। মাটির নিচে আলো নেই, কিন্তু মানুষের অন্তরের আলো পুরো শহরকে উজ্জ্বল করে। খাবার, পানি, বস্ত্র—সবকিছুই একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করা হয়। প্রতিটি মুহূর্তে তারা শিখছে—সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভুল, ক্ষমা। এখানে শিখানো হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সম্পর্ক, বোঝাপড়া, এবং নিজেদের সঙ্গে ও অন্যের সঙ্গে সত্যিকার সংযোগ।

কিন্তু শহরের অন্ধকারের মাঝেও অশান্তি আছে। কেউ কখনো হিংসা করে, কেউ অবহেলা করে, কেউ অহংকারে হারায়। কেউ নিজের দুঃখ লুকিয়ে রাখে, কেউ অপরের ব্যথা বোঝে না। এই সমস্ত মিলিয়ে শহরের জীবন জটিল, গভীর, এবং অনেকবার আঘাতপূর্ণ। তবু, এই অন্ধকারে মানুষ আশা খুঁজে।

একদিন অয়ন শহরের মানুষদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমরা মাটির নিচে থাকি, কিন্তু আমাদের অন্তরের আলো আকাশ ছুঁয়। আমরা যা অনুভব করি, তা আমাদের সত্য। প্রতিটি সুখ, প্রতিটি দুঃখ, প্রতিটি ভালোবাসা, প্রতিটি ভুল—সবই আমাদের জীবন। আমরা মাটির নিচের শহরের মানুষ, কিন্তু আমাদের হৃদয়, আমাদের আত্মা, আমাদের স্বপ্ন—সবই মুক্ত।”

মাটির নিচের শহর শুধু স্থান নয়। এটি মানুষের আবেগ, স্বপ্ন, সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতা এবং মুক্তির প্রতীক। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি গল্প—একটি নতুন জীবনের চিত্র আঁকে। এখানে দুঃখ ও সুখ, ভালো ও মন্দ, আশা ও হতাশা—সব মিলিয়ে জীবন বয়ে চলে, এবং সেই জীবন বাইরে কেউ কখনো পুরোপুরি বুঝতে পারে না।

শহরের মানুষের জন্য একমাত্র সত্য হলো—অন্ধকার যত গভীরই হোক না কেন, মানুষের হৃদয় এবং অনুভবের আলো সবসময় পথ দেখায়। আর সেই আলোই এই শহরকে বাঁচায়।

(গল্পটি একটি কল্পনা আকারে লেখায় কেউ সিরিয়াস নিবেন না)

Comments

    Please login to post comment. Login