গল্পের নাম: ইন্টারনেটের দুনিয়া
পৃথিবী এখন এক নতুন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। ইন্টারনেট, যা এক সময় শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম ছিল, আজ মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে গেছে এমনভাবে যে তার ছায়া কোথাও দেখা না গেলেও সে সর্বত্র বিরাজমান। মানুষের আনন্দ, দুঃখ, আশ্রয়, বিচ্ছেদ, সবকিছুই এখন এই অদৃশ্য নেটওয়ার্কের জালে আটকানো।
শহরগুলোতে মানুষ একের পর এক স্ক্রিনে চোখ রেখেছে। বাড়ির ছোট বাচ্চারা মায়ের আঁচল থেকে ফিসফিস করে মোবাইল নিয়ে বসে থাকে, হাসি খুশি সব ভার্চুয়াল ছবির মাঝে হারিয়ে যায়। বৃদ্ধরা, যারা এক সময় গল্পের মাধ্যমে জীবনের শিক্ষা পেত, এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে একাকিত্ব মিটাতে চেষ্টা করে। সব দেশের মানুষই, প্রাচ্যের ধনী থেকে পাশ্চাত্যের দরিদ্র, একই জালের মধ্যে বাঁধা।
কেউ জানে না, কতজন রাতে ঘুমের আগে স্ক্রিনের নীল আলোতে চোখ জ্বালিয়ে কষ্টে কাঁদে। কেউ জানে না, কত পরিবারে কথার অভাব, সরাসরি মানবিক স্পর্শের অভাব, এবং প্রতিদিনের অনলাইন প্রতিযোগিতার চাপ মানুষকে নিঃসঙ্গ করে তুলছে। সামাজিক মিডিয়ার ছায়ায় মানুষরা নিজেদের আনন্দ ভেঙে ফেলে, হিংসা, ঈর্ষা, অবজ্ঞা—সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দেয়া যায় না।
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সবকিছুই দ্রুত, কিন্তু সেই দ্রুততায় মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে। খবরের খবরে, মানুষের যন্ত্রণা এখন ক্লিকের দামের সমান। শিশুর মৃত্যু, বন্যার বেদনা, যুদ্ধের চিৎকার—সবকিছু মুহূর্তে ভাইরাল হয়। কিন্তু কেউ থেমে তাকায় না, কেউ কেউ শুধু স্ক্রল করে চলে যায়। এই দুনিয়ায় মানবিক সংবেদনশীলতা যেন ডেটার মতো কমে যাচ্ছে।
অনেক মানুষ এই দুনিয়ায় নিজেদের পরিচয় হারিয়েছে। প্রোফাইলের হাসি, স্ট্যাটাসের আনন্দ, লাইকের খোঁজ—এগুলো জীবনের মূলতত্ত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই দুনিয়ায় যারা শূন্য চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের কষ্ট কেউ দেখে না। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় মানুষের সংযোগ ঘটছে, কিন্তু একেকজন একাকীত্বের গভীরে ডুবে যাচ্ছে।
এভাবেই, পুরো পৃথিবীর মানুষের দুঃখ, আশা, আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া, লড়াই—সবকিছু যেন এই অদৃশ্য নেটওয়ার্কে মিশে যাচ্ছে। মানুষ নিজেদের হারাচ্ছে, কিন্তু এই হারানো স্বভাবকেই তারা আনন্দের খোঁজ বলে মনে করছে।
পৃথিবী অচেনা হয়ে গেছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটের মধ্যেই খুঁজে ফিরছে জীবনের মানে, অথচ আসল জীবনের আনন্দ, কষ্ট, ভালোবাসা—সবই যেন কেবল স্ক্রিনের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
শেষ।