Posts

ভ্রমণ

বরিশাল দুর্গ সাগর ভ্রমনে যাচ্ছি। (চতুর্থ খন্ড)

November 29, 2025

Shafin pro

12
View

আমরা এখন বরিশাল নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড চলে আসলাম। সাকুরা গাড়ি নির্দিষ্ট সময় বরিশাল চলে আসলো। গাড়ি থেকে সবাই নামতেছে। বাচ্চাকাচ্চা থাকাতে আমরা একটু দেরিতে নাম লাম লাভ। মেজ ভাই বাসস্ট্যান্ডে এসে  হলেই দাঁড়িয়েছিল। গাড়ি থানার সাথে সাথে মেজ ভাই গাড়িতে উঠে আসলো। বাচ্চাদেরকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। আমরা ধীরে ধীরে গাড়িতে গেলাম না। বক্সের ভিতরে লাকেশ থাকা কারণে আমরা বক্সের কাছে গেলাম। টোকেন দিতে ইনবক্স থেকে আমাদের লাকেশ গুলো বের করে দিল। এর ভিতরে পাঁচ সিট মাহিন্দার গাড়ি সামনে চলে আসলো। ৩০০ টাকার ভিতরে গাড়িটি ঠিক করে ফেলব বাসায় যাওয়ার জন্য। গাড়ির ভেতরে সমস্ত সকল ব্যাগ ঢুকায় নিলাম। গাড়ি স্টার্ট দিতেই দেখি মেজ দুলাভাই চলে আসছে। রিক্সায় বসে সে সাকুরার দিকে তাকিয়ে আছে আমাদের জন্য। আমরা গাড়িতে থাকার কারণে সে আমাদের দেখতে পায়নি। আমি সাথে সাথে নেমে তাকে ডাক দিলাম দুলাভাই বলে। দ্রুত রিকশা ভাড়া দিয়ে তাকে আমরা মাইন্ডারে তুলে নিলাম। আমার এই ভগ্নিপতি খুব ভালো মনের মানুষ। সকল সময় আমাদের খেয়াল রাখত এবং আমাদের এলাকায় তাকে সবাই দুলাভাই বলে ডাকে। বিশেষ করে আমার বন্ধুরা তাকে খুব ভালোবাসে । বন্ধুদের সাথে যখন তার দেখা হয় সবাই তাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে বসায়। দুলাভাই কি খাবেন বলে কি খাবেন। সবাই তাকে পেয়ে যে যার মত খাইতে থাকে। কিন্তু বিলের সময় দেখা যায় বিল সেই দিয়ে দিয়েছে। আবার তাকে সবাই ভালবাসলেও সবাই জানে তার রক অনেক চটা তার এলাকায় সবাই তাকে ভয় পাও এবং ভালবাসি সম্মান করে তার গুণের জন্য। তার সব সময় মানুষের উপকার করার মনমানসিকতা থাকে বিদায় তাকে সবাই ভালবাসে। যাই হোক তার বর্ণনা দিতে গেলে। অনেক লম্বা সময় দরকার। এর ভিতরে আমরা চলে আসলাম বিএম কলেজ। কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। ছেলেরা কলেজ টা দেখে খুব খুশি। ছোট  ছেলে বলে উঠলো বাবা কলেজ টা তো খুব বড়। তারা বললো এই কলেজের নাম কি। আমি বললাম বর্জ্য মোহন বিশ্ববিদ্যালয় । তবে এই কলেজ এর বয়স ১০০ বছর অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। এই কলেজ কে বলতো দক্ষিণ বাংলার  অক্সফোর্ড। তারা বলল পুকুরটি তো খুব বড় কলেজে ভিতরের। আমি বললাম ভাই কলেজের পুকুরের অনেক স্মৃতি আমাদের রয়ে গেছে। আমরা এই পুকুরে যখন মাছ ধরতে আসতাম বড়শি  নিয়ে। বেশ ভালোই মাছ পেতাম বরশি দিয়ে। তবে বেশি বড় মাছ না পেলেও অনেক মাছ পেতাম এই পুকুরে। বেশিরভাগ সময় মাছ পেতাম কিন্তু যেদিন মাছ পেতাম না সেদিন টিকিটের টাকা না দিয়ে চলে যেতাম। একদিন না মাছ না পাওয়ার কারণে চলে যাচ্ছিলাম। অগ্নি সময় ইজারাদার এসে আমাদের বলল। তোরা এত সকালে চলে যাচ্ছিস মাছ না পেয়ে কিছুক্ষণ বসে দেখ নিশ্চয়ই পাবি। ছেলেদের সাথে কথা বলতে বলতে আমরা চলে আসলাম বনমালী গাঙ্গুলীহোস্টেলের সামনে। এটি হলো মেয়েদের ছাত্রী নিবাস। এখানে দিনের বেলা সব সময় ছাত্রদের আনাগোনা থাকে। এবং মহল্লার ছেলেরাও আশেপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। বিনা কারণে কেউ চা খাচ্ছে কেউ আড্ডা দিচ্ছে কেউ চটপটি খাচ্ছে এখানে বসে। তবে আমরা ছাত্র থাকাকালীন এখানে কখনোই আড্ডা দেইনি। কারন আমাদের অত্র এলাকার সবাই কম বেশি চিনতো। এখানে বেশিরভাগ আসতে হতো এখানে একটি পেট্রোল পাম্প থাকার কারণে। শহরের ভিতরে এই একটি পেট্রোল পাম্প ছিল তখন। তাই এই পেট্রোল পাম্প থেকে আমরা বাইকে তৈরি নিতাম। ড্রাইভারকে বললাম ভাই আপনি নতুন বাজারে জগার দোকানে মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়িয়েন। তবে অনেকে জগার নাম না বললে তার মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়ায় না। মূলত তার নাম ছিল জগদীশ। তার মিষ্টি এই দক্ষিণাঞ্চলের সবার পছন্দের। মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়াতেই আমরা মিষ্টির দোকানে নেমে  পড়লাম। প্রথমে আমি মেজ দুলুভাই নামলাম তারপর মেজ ভাই গেল আমাদের দেখে ছেলেরাও গেল। ছেলেদের দেখে ছেলেদের মা ও গেল। পরের ড্রাইভার কেও ডেকে আমরা সবাই সেখানে মিষ্টি খেতে বসলাম। যে যার খুশি মিষ্টি নিয়ে বসে পড়েছে। কেও রসমালাই খাচ্ছে কেউ আমিতি দেখাচ্ছে কেউ জিলাপি খাচ্ছে কেউ নিমকি খাচ্ছে কেউ রসগোল্লা খাচ্ছে। বাসার জন্য রসগোল্লা দুই রসমালাই নিয়ে নিলাম। আমরা আবার সবাই গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম। নতুন বাজার পর হয়ে বন বিভাগের সামনে চলে আসলাম। আসতেই দেখি বন্ধুরা এক পাল  আড্ডা দিতেছিল কারণ সেদিন বন্ধের দিন ছিল। আমাদের আমাকে দেখতেই সবাই ডাক দিয়ে উঠল। আমি তাড়াতাড়ি নেমে সবার সাথে দেখা করলাম। বেশি দেরি না করে আবার গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। এখন আমরা শীতলা খোলা পার হচ্ছি। এখানে দেখি আমার এক চাচা দাঁড়িয়ে আছে। চাচা আমাদের দেখি হাত নাড়তে শুরু করল। আমরা দেখে দ্রুত নেমে পড়লাম। আমার এই চাচা বিএম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। তার ইচ্ছা ছিল বিএম কলেজ থেকে সে ভিপি নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে বের হবে একদিন। বিভিন্ন ছাত্রকে নিজের টাকা দিয়ে ভর্তি করা তো এবং ছাত্রদের বিভিন্ন উপকারে সে সব সময় নিয়োজিত ছিল কলেজে। তার সাথে যখনই দেখা হতো তখনই বলতো যে চাচা বাসায় এসো। এবারও সেই একই রকম মরল চাচা বাসায় এসো। তার সাথে অল্পতে কথা শেষ করে আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম। এখন আমরা মুন্সিগেরেজ পার হয়ে যাচ্ছি। মুন্সি গে রে যে আসলেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কারণ এখন তো আর গোরস্তান মসজিদে নামাজ পড়া হয়না। কবর জিয়ারত করা হয় না। আগে প্রতি শুক্রবারেই এই গোরস্থানে আসতাম জুমার নামাজ পড়ার জন্য । নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করতাম সবার জন্য। বাবা দাদা এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। এখন দূরে থাকার কারণে আর সেটা সম্ভব হয় না। বলতে বলতে আমরা চলে আসলাম অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। এটি হলো খ্রিস্টানদের একটি বড় গির্জা যা বরিশালের ভিতরে বেশ বড় বলেই চলে। এটি হলো খ্রিস্টানদের উপাসনাগার। এর ভিতরের স্কুলের ছাত্ররা বেশিরভাগই হোস্টেলে থাকে বাকি সব বাহিরে। স্কুল মাঠে অনেক খেলাধুলা করেছি এক সময়। ভিতরে একটি পুকুর আছে খুব বড় ধরনের। হোস্টেলের ছাত্ররা যখন ভাত খেয়ে ফেলে দিতে আসতো পুকুরে তখন দেখতাম মাছগুলো সব হেডলার পারে এসে খাবার গুলো খেতে। এই পুকুরে আমরা বেশিরভাগই গোসল করতাম বন্ধুরা সবাই মিলে। ইস্কুল বন্ধু থাকলে গেট আটকানো থাকতো কিন্তু আমরা গেটের গ্রিলের ভেতর দিয়ে চলে আসতাম গোসল করার জন্য। এখন তো এই গ্রিল থেকে আমার পাওয়াই যাবে না। কিন্তু এমন সময় গেছে যে ওই গ্রিলের ভিতর থেকে সমস্ত শরীরেই চলে যেত। পুকুরটা এমন ছিল যে ঘাটলার দুই পাশে পুকুরের দিকে দুইটি রেলিং ছিল বেশ চওড়া। এর উপরে উঠে আমরা সিংহাসন তৈরি করতাম। যুদ্ধ ছিল যে যে যাকে হারিয়ে পানিতে ফেলতে পারতো যে ।যে শেষে থাকতে সেই রাজা হতে। ওই রেলিং দিয়ে লাফিয়ে পড়তাম পুকুরের ভিতরে। একে অপরকে ধাক্কিয়ে ফেলে দিতাম পানিতে। ওই পুকুরে অনেক সময় কাটিয়ে। তবে বলা হয়নি আমরা যে  রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম সেটি হল বগুড়া রোড। এখন আমরা ভূতের বাড়ির গলির মাথায় চৈতন্য স্কুলের সামনে। স্যালাইন ক্রস করে যাচ্ছি। কিছুক্ষণের ভিতরেই আমরা বাসায় পৌঁছে যাব। এখন আমরা সদর গার্লসস্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। এই স্কুলের মাঠেও আমরা অনেক খেলাধুলা করেছি। কিছুক্ষণ পরেই আমরা বাসায় সামনে চলে আসলাম। দেখি মা দরজার সামনে জানলা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের অপেক্ষায়। মা সবসময়ই সন্তানের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। যতক্ষণ সন্তান ঘরে না ফেরে ততক্ষণ পর্যন্ত মা-বাবাদের চিন্তা থেকে যায়। এখন আমার মা আমাকে দেখে আমার সন্তানদের দেখে খুব আনন্দিত। গাড়িওয়ালা কে ভাড়া দিয়ে ব্যাড লাকেছ নিয়ে আমরা ঘরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। এখন ভাই আপনাদের সাথে আর কথা বলবো না আমি আমার মার সাথে কথা বলিনি। কারণ তার সাথে অনেকদিন থেকে দেখা হয় না। শুধু মোবাইলেই কথা হয়। তাই বাকিখন্ড গুলো পরবর্তীতে লিখে শেষ করব। (চতুর্থ খন্ড এখানে শেষ করছি)

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Shafin pro 6 days ago

    বরিশাল দুর্গ সাগর ভ্রমণে যাচ্ছি। লেখার ভিতর যদি আরো কিছু লেখার দরকার ছিল তা যদি ভালো জানেন তাহলে লিখে জানাবেন আপনি নিজেও পারবেন এবং অন্যকে পড়ার জন্য উৎসাহিত করবেন ধন্যবাদ