writer:- #রাজ পর্বঃ-(০১)
রাজ ও প্রিয়ার প্রথম ছায়া, প্রথম অপমান, আর এক সাধারণ ছেলের হৃদয়ে জন্ম নেয়া ঝড়
~~~তার চোখে স্বপ্ন, বুকভরা আশা—নতুন ভার্সিটিতে পড়বে, মানুষ হবে
~~~মা ছেলের গাল ছুঁয়ে শুধু বলেছিল, “ভালো থাকিস বাবা”
~~~রাজ জীবনের প্রথম বড় যাত্রা শুরু করল
~~~গ্রামের মাটির গন্ধ পেছনে ফেলে শহরের কোলাহলে পা রাখল
~~~শহর তাকে নতুন, অচেনা, ভয়ানক মনে হচ্ছিল
~~~ক্যাম্পাসে ঢুকতেই মনে হলো যেন অন্য এক দুনিয়ায় এসেছে
~~~চারদিকে আধুনিক পোশাক, স্টাইল, আভিজাত্যের ছড়াছড়ি
~~~রাজের সাদামাটা পাঞ্জাবি আর পুরনো ব্যাগ দেখে অনেকে তাকাল
~~~মনে হলো তাদের চোখে কৌতুক, বিদ্রুপ, অবজ্ঞা
~~~প্রথম দিনই সে শুনল—“এই যে ক্ষেত ছেলে, পথ চেনো?”
~~~রাজ শুধু হাসল, কিছু বলল না
~~~তার অন্তরে রাগ জমতে লাগল, কিন্তু বাইরে প্রকাশ করল না
~~~ক্লাসে ঢুকেই আরও কিছু ছেলের হাসি শুনতে পেল
~~~একজন বলল, “এই জামা পরে কে ভার্সিটি আসে রে!”
~~~আরেকজন ফিসফিস করে বলল, “গ্রাম্য একটা নমুনা”
~~~রাজ বুকের ভেতর কেমন একটা ব্যথা অনুভব করল
~~~তবু সে চুপচাপ নিজের সিটে বসল
~~~কেউ তার পাশে বসেনি
~~~কেউ কিছু বলতেও চাইল না
~~~সে প্রথমদিন বুঝে গেল—এই শহর তাকে আপন করে নেবে না এত সহজে
~~~ক্লাস শেষে বাইরে বের হতেই একটা মেয়েকে দেখল
~~~মেয়েটা অন্যদের মতো হাসছিল না
~~~সে রাজের দিকে একটু বিস্ময়ের চোখে তাকাল
~~~মেয়েটার নাম প্রিয়া—বিভাগের সবচেয়ে শান্ত স্বভাবের মেয়ে
~~~রাজ হঠাৎ চোখ সরিয়ে নিল
~~~প্রিয়া কিন্তু কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল
~~~বন্ধুরা প্রিয়াকে ঠেলে বলল, “দেখিস না, ক্ষেত ছেলেটা তোকে দেখছে!”
~~~প্রিয়া বিরক্ত হয়ে বলল, “এভাবে কাউকে ছোট করা ঠিক না”
~~~বন্ধুরা আবার হাসাহাসি শুরু করল
~~~রাজ সব দেখল, কিন্তু কিছু বলল না
~~~মনের ভেতর এক ধরনের লজ্জা আর কষ্ট জমে উঠল
~~~হোস্টেলে ফিরে সে নিঃশব্দে বিছানায় বসে রইল
~~~মোবাইল বের করে গ্রামের ছবি দেখল
~~~সেখানে কেউ তাকে হাসিঠাট্টা করত না
~~~মানুষ তাকে মানুষ হিসেবেই দেখত
~~~এই শহরে যেন সবকিছু উল্টো
~~~রাতে খাবার খেতেও ইচ্ছা হলো না
~~~তবুও সে নিজেকে বোঝাল—“সব ঠিক হয়ে যাবে”
~~~পরদিন ক্যাম্পাসে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো
~~~একদল ছেলে তার ব্যাগ টেনে নিয়ে বলল, “দেখি ভিতরে কাস্তে আছে নাকি!”
~~~সবাই হেসে উঠল
~~~রাজ নিজের ব্যাগ শক্ত করে ধরল
~~~তার চোখ লাল হয়ে উঠল, কিন্তু সে কাঁদল না
~~~সে বুঝল, দুর্বল দেখালে তারা আরও চড়াও হবে
~~~হঠাৎ প্রিয়া সামনে এসে দাঁড়াল
~~~সে ছেলেগুলোকে বলল, “তোমরা এসব কী করছ?”
~~~কেউ গুরুত্ব দিল না
~~~একজন বলল, “তুই না থাক, আমাদের ফান নষ্ট করিস না”
~~~প্রিয়া রেগে গিয়ে বলল, “এটা ফান না, হ্যারাসমেন্ট!”
~~~ছেলেরা একটু থমকাল
~~~রাজ অবাক হয়ে তাকাল
~~~প্রিয়াকে আগে কখনো এত দৃঢ়ভাবে কথা বলতে দেখেনি
~~~ছেলেরা বিরক্ত হয়ে চলে গেল
~~~রাজ ধীরে ধীরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ”
~~~প্রিয়া বলল, “দরকার নেই, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা উচিত”
~~~এই কথাটা রাজের মনে গেঁথে গেল
~~~প্রিয়া চলে যাওয়ার পর সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল
~~~তার মনে প্রথমবার একটা অদ্ভুত আলো জ্বলে উঠল
~~~যেন কেউ তাকে বুঝল, কেউ তাকে ছোট করল না
~~~সেই আলোই একদিন আগুন হয়ে উঠবে
~~~সেদিন ক্লাসে রাজ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ল
~~~কিন্তু বাইরে বের হতেই আবার কয়েকজনের ব্যঙ্গ–কথা শুনল
~~~“এই ক্ষেত ভাই, শহরে টিকতে পারবি?”
~~~“চরাতে যাস, এখানে নয়!”
~~~রাজ দাঁত চেপে রইল
~~~যে ব্যথা সে গিলে নিচ্ছে, তা ওদের ধারণার বাইরে
~~~সন্ধ্যায় হোস্টেলে ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়াল
~~~নিজের সাদামাটা চেহারা দেখতে লাগল
~~~মনে হলো সে নিজেই নিজের শত্রু
~~~হতাশা তাকে গ্রাস করছিল
~~~কিন্তু মনের গভীরে আরেকটা অনুভূতি জন্ম নিল
~~~“একদিন আমি দেখিয়ে দেব”
~~~এই কথাটি তার হৃদয়ের ভেতর বজ্রপাতের মতো বাজল
~~~রাতের আকাশে চাঁদ ছিল উজ্জ্বল
~~~রাজ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল
~~~“আমাকে যারা অপমান করছে…
~~~একদিন তারা আমার নাম শুনলেই কাঁপবে”
~~~সে জানত না, এই প্রতিজ্ঞাই একদিন তাকে
~~~এক সাধারণ গ্রাম্য ছেলে থেকে
~~~ভয়ংকর অন্ধকার জগতের মাফিয়া কিং বানিয়ে ফেলবে
~~~কিন্তু সেই গল্পের শুরু হলো আজ
~~~আর এই গল্পের প্রথম আলো ছিল প্রিয়া
~~~যে আলোর জন্যই রাজের ভেতরে লুকানো আগুন
~~~একদিন রুদ্রমূর্তি হয়ে উঠবে
~~~রাজ ধীরে দরজা বন্ধ করল
~~~আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
~~~“যা শুরু হলো…
~~~এটার শেষ হবে আগুনে”
কেমন হলে জানাবেন আপনাদের উৎসাহ পেলে গল্প লিখতে আগ্রহী হব
চলবে ---❤️