পরীক্ষার জালা
(হাসির গল্প — পড়তে প্রায় ৫ মিনিট লাগবে)
রাশেদ নামের এক ছেলে ছিল। দেখতে পুরো নরমাল, কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু— পরীক্ষা। পরীক্ষা শব্দটা শুনলেই তার বুকের ভেতর যেন ঢাক-ঢুক… ঢাক-ঢুক…
রাশেদ বলত,
“পরীক্ষা মানে হলো—মন খারাপ করার আন্তর্জাতিক উৎসব।”
পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের জ্বালা
পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে ক্লাসের সবাই খাতা-কলম নিয়ে পড়তে বসে গেছে। শুধু রাশেদ ছাড়া। সে পড়া শুরু করতে গেলেই একটা অদ্ভুত জিনিস ঘটত—তার মাথা যন্ত্রের মতো বন্ধ হয়ে যেত।
রাতে পড়তে বসে সে বলত,
“আজকে না হয় সহজ একটা অধ্যায় দেখি…”
বই খুলতেই তার চোখ এমন ধীরে ধীরে বন্ধ হতো—মনে হতো বইয়ের ভেতরে ঘুমের স্প্রে মাখানো।
তার মা এসে বলতেন,
“পড়তে বসেছ নাকি ঘুমাতে?”
রাশেদ চোখ কচলে বলত,
“মা, পড়তে গিয়ে ঘুম এসে পড়ে… কিছু করার নেই, এটা ন্যাচারাল ট্যালেন্ট।”
মুখস্থ করার জ্বালা
ইংরেজি পড়ার সময় রাশেদ নিজেই নিজের ওপর হাসত।
“Write about your aim in life”—এই লাইন দেখেই সে বলত:
“আমার aim হলো পরীক্ষায় পাশ করা—এটা লিখলে হবে?”
বিজ্ঞান পড়তে গেলে সে সংজ্ঞা মুখস্থ করে এমনভাবে—
“শক্তি হলো… শক্তি হলো… শক্তি হলো…”
তার মা রুমে ঢুকে ভাবতেন—বুঝি ছেলে পড়ছে!
কিন্তু আসলে রাশেদ শুধু শক্তি হলো বলেই শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
পরীক্ষার দিনের আসল জ্বালা
অবশেষে বড় দিনটা এলো। রাশেদ পরীক্ষার হলে ঢুকলো যোদ্ধার মতো, কিন্তু প্রশ্নপত্র দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখের রং এমন পাল্টে গেল যেন কেউ তাকে বলেছে—“বিকালে আবার পরীক্ষা আছে।”
প্রথম প্রশ্ন পড়েই রাশেদ মাথায় হাত।
সে ভাবল—
“এ প্রশ্নগুলো কবে বইয়ে এসেছে? আমি তো দেখিই নাই!”
লেখার বদলে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আল্লাহ, আপনি যদি চান আমি পাশ করি, তবে কলমটা নিজে থেকেই লিখবে।”
কিন্তু আল্লাহও বুঝি পরীক্ষার হলে সাহায্য করেন না—সুতরাং কলম নড়লো না।
যা পারে লিখতে শুরু করল রাশেদ—
ইংরেজিতে লিখতে বলা হলো:
“Write 10 sentences about your daily life.”
রাশেদ লিখল—
“I wake up at 10. Then I sleep again at 11. Then I eat. Then I sleep. My daily life is very active.”
সারাদিন ঘুমানোকে সে অ্যাকটিভ লাইফস্টাইল বলে চালিয়ে দিল।
ফলাফল প্রকাশের মহা জ্বালা
ফলাফল বের হওয়ার দিন রাশেদের হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগল—মনে হচ্ছিল প্রশ্নপত্র তখনো তাকে তাড়া করছে।
ফল বের হলো।
রাশেদ সব মিলিয়ে পেল— বাঁচার মতো নম্বর, কিন্তু গর্ব করার মতো না।
বন্ধুরা বলল,
“ভাই, তোর নম্বর দেখে মনে হচ্ছে প্রশ্নপত্র তোকে সহ্য করতে পারে নাই!”
রাশেদ মাথা নিচু করে বলল,
“কোনো সমস্যা নাই, জীবনে সাফল্যের আগে ব্যর্থতা থাকতেই হয়। আমি ভবিষ্যতে খুব মানুষ হব।”
মা শুনে বললেন,
“আগে পাস কর, পরে মানুষ হবি।”
শেষ জ্বালা—প্রতিজ্ঞার জ্বালা
রাশেদ ফল পেয়ে বলল,
“এইবার ঠিক করলাম—আগামী বছর পড়বো! বদলে যাবো!”
কিন্তু রাতেই দেখা গেল সে মোবাইল নিয়ে গেম খেলছে।
বন্ধু জিজ্ঞেস করল,
“এই কি মানুষের বদল?”
রাশেদ বলল,
“বদল অবশ্যই হবো… কিন্তু একটু পরে।”
শেষ কথা
পরীক্ষার জ্বালা রাশেদের শুধু না—সবাইয়ের।
কারো ঘুম আসে,
কারো বই দেখলে মাথা ঘোরে,
কারো প্রশ্নপত্র দেখলে চুল পড়ে,
আর রাশেদের মতো কারো ঘুমই তার ডেইলি লাইফ।
এই গল্পের নাম পরীক্ষার জালা—
কারণ রাশেদের জীবনটাই পরীক্ষার আগুনে পুড়ে ফানিতে পরিণত হয়।
— সমাপ্ত —