#ক্ষেত_ছেলে_যখন_মাফিয়া
writer:- #রাজ পর্বঃ-(০২)
রাজের অপমানের চুড়ান্ত রূপ, প্রিয়ার নীরব দৃষ্টি, আর এক সাধারণ ছেলের মনে জন্ম নেয়া ঝড়ের দ্বিতীয় ধাপ
~~~হোস্টেলের জানালার বাইরে শহরের ব্যস্ততা স্পষ্ট
~~~সে ভাবল—আজ নতুন কিছু হবে কিনা
~~~মনে একটুখানি আশা, হয়তো আজ কেউ তাকে তুচ্ছ করবে না
~~~কিন্তু ভেতরে আবার সন্দেহ—শহর কি বদলায় এত সহজে
~~~সে দ্রুত তৈরি হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিল
~~~পথে দেখা হলো প্রিয়ার সাথে, মেয়েটা শান্তভাবে হাঁটছিল
~~~রাজ নরম স্বরে বলল, “গুড মর্নিং”
~~~প্রিয়া তাকিয়ে একটু হাসল, “মর্নিং”
~~~মাত্র একটা হাসি রাজের পুরো সকালকে সুন্দর করে দিল
~~~সে বুঝল, অচেনা শহরে অন্তত একজন মানুষ আছে তাকে ছোট করে না
~~~তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না
~~~ক্যাম্পাস গেটে ঢুকতেই আগের দিনের ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে ছিল
~~~তাদের চোখে আজ আরও তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ
~~~একজন বলে উঠল, “এ যে আমাদের ক্ষেত ভাই হাজির!”
~~~আরেকজন বলল, “আজও গ্রামের জামা? বাহ!”
~~~রাজ চুপচাপ মাথা নিচু করল
~~~তাদের কথায় তার বুকটা চেপে এল
~~~হঠাৎ একজন তার ব্যাগটা টেনে ধরল
~~~“ভাই, ব্যাগটা দেখি—ভেতরে গরুর ঘাস আছে নাকি?”
~~~সবাই হাসতে লাগল
~~~প্রিয়া দূর থেকে দেখছিল
~~~সে এগিয়ে এসে বলল, “এটা বন্ধ করো!”
~~~একজন বিরক্ত হয়ে বলল, “বেয়ারা নাই, আমাদের মজা নষ্ট করিস না।”
~~~প্রিয়া কঠিন গলায় বলল, “মজা? এটা বুলিং!”
~~~কিন্তু ততক্ষণে ছেলেগুলো রাজের ব্যাগ মাটিতে ছুঁড়ে দিয়েছিল
~~~রাজ হেঁটে ব্যাগ তুলল, তার হাত কাঁপছিল
~~~প্রিয়া কষ্ট পেয়ে বলল, “তুমি ঠিক আছো?”
~~~রাজ মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, কিছু না।”
~~~কিন্তু ভেতরে আগুন জ্বলছিল
~~~সে আঘাত পায়নি শরীরে—পেয়েছে মাথায়, মনে
~~~ক্লাসে যাবার পথেও অনেকে ফিসফিস করে কথা বলছিল
~~~“দেখেছো? গ্রামের গন্ধ নিয়ে এসেছে!”
~~~“খেতে যাক, দুধ দোয়ানোর সময় হয়ে গেছে!”
~~~রাজ নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছিল
~~~ক্লাসে বসে সে বই খুলল
~~~কিন্তু শব্দগুলো ঝাপসা লাগছিল
~~~তার মাথায় ঘুরছিল শুধু অপমানের মুহূর্তগুলো
~~~হঠাৎ শিক্ষক ঢুকলেন
~~~সবার চোখ সোজা হয়ে গেল
~~~ক্লাস চলল শান্তভাবে
~~~কিন্তু রাজের মন শান্ত হলো না
~~~পাশে বসা প্রিয়া ফিসফিস করে বলল, “তাদের কথায় মন খারাপ করোনা।”
~~~রাজ শুধু তাকিয়ে রইল
~~~সে বুঝতে পারছিল না—প্রিয়া কেন তার প্রতি এত ভাল?
~~~হয়তো মানবিকতা, হয়তো আরও কিছু
~~~ক্লাস শেষে বাইরে বের হতেই আবার ছেলেগুলো জড়ো হলো
~~~আজ তারা আরও এক ধাপ এগোল
~~~একজন বলল, “এই যে রাজ, তোর নামটা চেঞ্জ করে ‘ক্ষেতরাজ’ রাখা উচিত!”
~~~সবাই হো হো করে হাসল
~~~রাজ দাঁত চেপে ধরল
~~~এক মুহূর্তে তার মাথায় ঝড় বয়ে গেল
~~~সে চেয়েছিল এক থাপ্পড় বসিয়ে দিক
~~~কিন্তু সে জানত, এই ঝগড়া করলে শিক্ষক বরং তাকে দোষী মনে করবে
~~~সে আবার চুপ রইল
~~~প্রিয়া আর সহ্য করতে পারল না
~~~সে ধমক দিয়ে বলল, “Enough! আর একবার করলে স্যারকে বলে দেব।”
~~~একজন হেসে বলল, “আহা, দেখো দেখো, ক্ষেত ভাইয়ের বউ এসেছে!”
~~~এই কথাটা রাজের ভেতরে ছুরি হয়ে বিঁধল
~~~সে ফুঁসছে, কিন্তু নিজেকে ধরে আছে
~~~প্রিয়া লজ্জায় মুখ নিচু করল
~~~রাজের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, “চলো, এখান থেকে যাই।”
~~~রাজ ধীরে হাঁটতে লাগল
~~~তার মুঠি শক্ত হয়ে আছে
~~~হৃদপিণ্ড জোরে ধুকপুক করছে
~~~সে নিজেকে থামিয়ে রেখেছে, কারণ এখন তার কিছুই নেই
~~~শক্তি নেই, ক্ষমতা নেই, প্রভাব নেই
~~~সে জানে—এই শহরে শক্তিহীন মানুষকে কেউ মূল্য দেয় না
~~~হোস্টেলে ফিরে সবকিছু একা একা ভাবতে লাগল
~~~তার মাথায় হাজারো প্রশ্ন
~~~“আমি কি ভুল করেছি?”
~~~“আমি কি এতটাই নিচু?”
~~~“আমাকে কেন মানুষ মতো দেখা হয় না?”
~~~চোখে পানি এসে গেল
~~~রাজ চেয়েছিল শহর তাকে বদলাবে
~~~কিন্তু আজ সে বুঝল—
~~~শহর বদলায় না
~~~যদি কেউ বদলায়, সে হলো মানুষ
~~~রাতে খাবার না খেয়ে ছাদে চলে গেল
~~~শহরের আলো নিচে ঝলমল করছে
~~~রাজ মনে মনে ভাবল, “এ শহর আমাকে অপমান দিয়েছে… কিন্তু একদিন আমি এই শহরকে কাঁপিয়ে দেব।”
~~~তার চোখে তখন আর দুর্বলতা ছিল না
~~~ছিল শুধু আগুন
~~~হঠাৎ প্রিয়ার মেসেজ এল
~~~“হাই, তুমি ঠিক আছো?”
~~~রাজ দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের পর্দার দিকে তাকিয়ে রইল
~~~ধীরে টাইপ করল, “হ্যাঁ… চেষ্টা করছি।”
~~~প্রিয়া লিখল, “সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি খারাপ না।”
~~~রাজের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল
~~~সে বুঝল—অন্ধকারের মাঝেও একটুকু আলো রয়ে গেছে
~~~কিন্তু সে জানত না—এই আলোই একদিন তাকে অন্ধকারের রাজা বানাবে
~~~রাতে ঘুমানোর আগে সে মনে মনে বলল
~~~“আমি বদলাবো… এমনভাবে বদলাবো… তারা আমাকে চিনতেও পারবে না।”
~~~চোখ বন্ধ করতেই ভবিষ্যতের এক ভয়ংকর ছায়া তার সামনে ভেসে উঠল
~~~এটাই ছিল তার রূপান্তরের শুরু
~~~এটাই ছিল সামনে আসা ঝড়ের আগমন-বার্তা
~~~রাজের ভেতরের আগুন জ্বলে উঠেছে
~~~আর এ আগুন আর নেভার নয়
চলবে,,,❤️❤️