Posts

গল্প

হাওয়ার কাছে ঋণী একটি দুপুর”

November 29, 2025

Sohan

Original Author sohan

9
View

ভোরের আলো তখনো পুরোপুরি নামেনি।
কুয়াশার পাতলা পর্দার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে একটা কাঁচা বাড়ি—
মাটির গন্ধে ভেজা,
যেন ঘর নয়, কোনো প্রাচীন দোয়া।

এই ঘরেই থাকে সামিউল।
চোখ দু’টো তার যেন নদীর ধারে রাখা দুটি জ্বলা প্রদীপ—
হাওয়ায় দুলে, তবু নেভে না।

তার বাবা অসুস্থ;
মা ভোরের রুটি বানাতে বানাতে দিনের কষ্টগুলো গুনে যান।
তাদের সংসার যেন মাটির প্রদীপের মতো—
কম তেল, তবু আগুন ধরে থাকে বিশ্বাসের কারণে।

সামিউল প্রতিদিন স্কুলের পথে হাঁটে
চাষের জমির পাশ দিয়ে।
মাটিতে পোতা বীজগুলো তাকে শেখায়—
“অল্প আলো পেলেও, বাঁচার ইচ্ছে থাকলে জন্ম হয়।”
এই লাইনটাই যেন তার মনের কবিতা।

একদিন স্কুলে ঘোষণা হলো—
গ্রাম পর্যায়ে কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতা।
সবাই খুশি।
কিন্তু সামিউল চুপ।
তার ভয় নয়, তার লজ্জা—
কারণ তার ভেতরের কথা সে কখনো উচ্চারিত করেনি।
সে যা অনুভব করে, সবই বুকের ভেতরে লুকানো
পাতাহীন গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

সেদিন সন্ধ্যায়,
মা চুলোর আগুন ধরালে
সামিউল আগুনের লাল নড়াচড়া দেখে বুঝল—
শব্দও আগুনের মতো,
মুখে এলে আলো ছড়ায়।

রাতে সে খাতা খুলল।
লণ্ঠনের হলুদ আলো তার হাতে পড়ে
শব্দগুলোকে যেন সোনার মতো ঝলমল করে তুলল।
সে লিখল—

“মা, তোমার হাতে যে ঘাম থাকে
তা শুধু পরিশ্রম নয়—
তা আমার ভবিষ্যৎ গড়ার সিন্দুর।”

“বাবা, তোমার কাশির শব্দ
নদীর ঢেউয়ের মতো—
আমাকে শেখায়, ব্যথাও কখনো কখনো সাহসের ভাষা।”

এসব লাইন কোনো নিয়মে বাঁধা নয়,
এগুলো তার জীবন থেকে উঠে আসা প্রার্থনা।

প্রতিযোগিতার দিন।
মাঠে সাজ সাজ রব।
ফুলের মালা, পোস্টার, রঙ।
সামিউল মঞ্চে দাঁড়াল।
তার কণ্ঠ প্রথমে কাঁপল,
ঠিক মাটির ঘরে বাতাস ঢুকলে যেমন দরজা শব্দ করে।
কিন্তু তারপর—
শব্দগুলো যেন নদীর মতো বয়ে গেল।

দর্শকরা নিস্তব্ধ।
শিশুরা খেলা থামিয়ে তাকিয়ে আছে।
শিক্ষকের চোখে চিকচিক করা জল।

শেষ লাইনটা উচ্চারণ করতেই—
তালি নয়, নীরবতা নামল।
যে নীরবতা সম্মানের, বিস্ময়ের,
যে নীরবতা বলে—
“এই ছেলেটার শব্দে মাটি, মানুষ, জীবন—সব আছে।”

ফল ঘোষণায় শিক্ষক কেঁপে ওঠা কণ্ঠে বললেন—
“প্রথম — সামিউল হাসান।”

সামিউল ট্রফি নিয়ে দৌড়ে বাড়ি এলো।
মা উঠোনে ভেজা ধান উল্টাতে ব্যস্ত।
সামিউল কাছে গিয়ে ট্রফিটা মায়ের হাতে দিল।
কিছু বলল না—
শুধু দেখল, মায়ের চোখের কোণে আলো জন্মাতে।

মা ধীরে বললেন,
“বাবা, আমি তোকে জীবন দিয়ে লিখেছি—
তুই তার কবিতা হয়ে ফিরলি।”

সেদিন সন্ধ্যার আকাশ যেন একটু বেশি গোলাপি ছিল,
একটু বেশি শান্ত,
ঠিক এক মায়ের বুকের মতো

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Sohan 5 days ago

    if you like it, then love it as you can