Posts

গল্প

ধোঁকাবাজি

November 30, 2025

Md. Lalon Shaikh

12
View

ধোঁকাবাজি

দামেস্কের উপকণ্ঠে এক ছোট্ট বাজার ছিল। সেখানে মারুফ নামে এক যুবক ছিল, যিনি তার বাবার পুরোনো একটি দোকান সামলাতেন। বাজারের বেশিরভাগ দোকানদারই চতুর বুদ্ধিতে লাভ করত কেউ ওজনে কম দিত, কেউ পণ্যের মান লুকিয়ে দাম বেশি নিত, কেউ ভেজাল দিতত, আবার কেউ দু’মুখো কথা বলে ক্রেতাকে ধোঁকা দিত।

 ধোঁকাবাজির পরীক্ষা

একদিন মারুফের দোকানে এক বৃদ্ধ লোক এলেন। তিনি বললেন,— “বাবা, খেজুরটা কি ভালো? আমার নাতির জন্য নিতে চাই।”

মারুফ খেজুরের দামে সামান্য লাভ হবে—এমনটাই আশা করছিল। কিন্তু খেয়াল করল, উপরের স্তরের খেজুরগুলো খুব ভালো, কিন্তু নিচের স্তরে কিছু খেজুর পুরোনো এবং নিম্ন মানের।

বাজারের লোকেরা পরামর্শ দিয়েছিল, উপরের ভালো খেজুর দেখিয়ে নিচের খারাপ খেজুরগুলোসহ বিক্রি করলে বেশি লাভ হবে।

মারুফ বৃদ্ধ ক্রেতা দেখে দ্বিধায় পড়ে গেল। তবে সে জানত, ধোঁকা দিয়ে লাভ করা সহজ, কিন্তু দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতির কারণ।

কুরআনের আয়াত স্মরণ

মারুফ হঠাৎ তার বাবার শেখানো আয়াতটি মনে করল— “ধোঁকা দেওয়া এবং ওজনে কম দেওয়া মানুষের জন্য ধ্বংস।”
(সূরা আল-মুতাফ্ফীফিন, ১–৩) 

আরো মনে পড়ল—“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না …”
 (সূরা আন-নিসা: ২৯)


এই আয়াতগুলো তার অন্তরকে নরম করে দিল। সে বুঝল, ক্ষুদ্র লাভের জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনা ঠিক নয়।

সত্যবাদিতার সিদ্ধান্ত

মারুফ বৃদ্ধকে বলল— “চাচা, উপরের খেজুরগুলো ভালো, কিন্তু নিচের কিছু খেজুর তেমন ভালো নয়। আপনি চাইলে আমি সব ভালো খেজুর আলাদা করে ওজনে দেব।”

বৃদ্ধ লোকটি অবাক হয়ে বললেন— “বাবা, আজকাল এমন কথা কেউ বলে না!”

তিনি হাসলেন এবং বললেন— “তুমি নিশ্চয়ই নবি (ﷺ)-এর শিক্ষার অনুসারী।”

হাদিসের বাস্তব প্রয়োগ

মারুফ মনে মনে নবীজি (ﷺ)-এর হাদিসটি স্মরণ করল—“যে প্রতারণা করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম)

আরেকটি হাদিসও তার অন্তরে আলো ছড়াল— “সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিনে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।” (তিরমিজি)

পরিবর্তন শুরু

বৃদ্ধ লোকটি অল্প পরিমাণ খেজুর নিলেন কিন্তু দাম বেশিই দিলেন। তিনি বললেন—“তোমার সততার মূল্য আমি দিয়েছি। আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন।”

এই ঘটনার পর বাজারের অনেকেই লক্ষ্য করল যে মারুফের দোকানে বেচা কেনা বাড়ছে, বরকত বাড়ছে। প্রতিদিন তার দোকানে মানুষের ভিড় বাড়তে লাগল। যারা আগে তাকে ধোঁকা দিতে বলেছিল, তাদের কেউ কেউ এসে বলল— “মারুফ, সত্যিই আল্লাহ সত্যবাদীকে উত্তম ফল দেন। আমরা তো শুধু ক্ষণিকের লাভই দেখতাম।” আমরাও এখন থেকে সততার সাথে ব্যবসা করব।

 শেষের শিক্ষা

মারুফ বলল—“ধোঁকা দিলে মানুষকে সাময়িকভাবে ফাঁকি দেওয়া যায়, কিছু লাভবান হওয়া যায় কিন্তু আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়া যায় না। আল্লাহ সত্যবাদীদের ভালোবাসে, বরকত দেন, আর ধোঁকাবাজদের পরিণাম কুরআনেই স্পষ্ট বলেছেন।”

গল্পের শিক্ষা

  • ধোঁকা দেওয়া ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
  • কুরআন ধোঁকাবাজদের জন্য ধ্বংস ঘোষণা করেছে।
  • নবী (ﷺ) সততার উপর বরকত এবং প্রতারণার উপর শাস্তির কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।
  • দুনিয়ার ছোট লাভের জন্য আখিরাতের বড় ক্ষতি ডেকে আনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
  • মানুষ ভালো কাজ দেখে অনুপ্রেরণা পাই এবং খারাপ পথ ছেড়ে ভালো পথে ফিরে আসে।
  •  

** পরিশেষে বলতে চাই-আজ আমাদের সমাজে, দেশে ধোঁকা আর প্রতারণায় ভরপুর হয়ে গেছে। কেউ আখিরাতের কথা চিন্তা করছে না। দুনিয়ার সামান্য সুখের আসায়, লাভের আসায় পরকালকে নষ্ট করছে। আসুন আমার এধরণের পাপের কাজ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করি। 

Comments

    Please login to post comment. Login