Posts

কবিতা

ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র'র কবিতা

December 1, 2025

ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র

34
View

সন্ধ্যা 
♦️
তেপান্তর পেরিয়ে, আকাশসম পাহাড় ছাড়িয়ে- ঠিক সন্ধ্যায় সন্ধ্যার মুখোমুখি। নেই আলাপন, নেই স্মরণ; শুধু চোখে তাকিয়েই মরণ। য্যানো ফেঁসে গ্যাছি যাবজ্জীবন।

হুটহাট দুয়েক কথা। কথার সূত্রে দীর্ঘসূত্রতা। এগিয়ে গিয়ে আবার পিছিয়ে যায় সমুদয় সময়ের নিদারুণ ব্যস্ততা। এ কী মিথ, না বাস্তবতা? সন্ধ্যা এসে কয়, এ তো মিছে নয়; বোশেখ মাসের শীতের তপ্ততা।

শীতের পাটাতনে বর্ষণের পূর্বাভাস, সয়ে যায়-রয়ে যায় যাবতীয় অভ্যাস। অভ্যাসের আভাসে গতি ও প্রকৃতির জালে সুগন্ধি রুমাল ছুঁয়ে যায়; স্মৃতিতে অনুভবে সে সন্ধ্যা আমারে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য 
♦️
জটিলতার জ্বরে জর্জরিত, জ্বর শয্যায় ডাকি তোমারে অবিরত 
নারী এসে কপাল ছুঁয়ে দাও, জলপট্টি মেখে দাও
তুশ জ্বালিয়ে প্রতিচিন্তার তত্ত্ব তালাশে আমার জীবন নাও
লকলকে গল্পে-কবিতায় সান্ত্বনা টুকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দাও।

মাঝরাতের ভবঘুরে আলাপে ছন্দ তুলে আবার  ঘুম কেড়ে নাও
ওষুধ হয়ে দু্ঃখবোধের যাতনা কেড়ে 
অসুখের সুখ ছড়িয়ে দাও;
আজীবন থেকে যাও, কালান্তরের গভীরতর সময়ে মিশে যাও।

মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়ে গ্যাছো জীবনদর্শনের সৃজনভুবনে
হিমোগ্লোবিনের মতো মিশে যাচ্ছো, বিশেষ দ্রষ্টব্যের পেন্ডুলামে।

বনভাঙার দুঃখ 
♦️
হেঁটে যায় ইচ্ছারা, এগুতে চায় না ব্যথারা। থেমে থেমে বাড়ন্ত প্রেম প্রলয়ের ঝুঁকিতে চারিপাশে বাঁধে বাসা। হায়, হায় এরই নাম কী ভালোবাসা! মিনারের পাদদেশে বসে মৃতনদীর নিবেদিত উপমায় কথার ফুলঝুরি, নিত্যনৈমিত্তিক স্তব্ধতার স্তবকে থেমে যায় ঘড়ি!

ফিরি। ফিরে এসে মনোজগতে ভিড় করি।  প্রেম যায়, প্রেম আসে; মনোহর বদ্ধ সময়ে শালুক মাখি। আঁচলের পাশ ধরে তোমার শানে রেখে গ্যাছি এ জীবন চাবি।  

পাঠ-পরাপাঠের কারবালায় দাঁড়িয়ে বেলা কেটে গ্যাছে। থেমে গ্যাছে নিয়ন আলোর মুখ। চাড্ডায় বসে স্বস্তির নিঃশ্বাসে ঝরে পড়ে বনভাঙার দুঃখ।

ভাঁটফুল
♦️
দুর্দশার গালিচায় পা ফেলে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটছি। তোমার কাছে যাচ্ছি। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। খুব সন্নিকটে পৌঁছে উল্টো রথে  ফিরছি। ঋণগ্রস্ত দুনিয়ার বোঝা বইতে না পারার দায় নিয়ে মৃত্যুর  ডগায় সুড়সুড়ি দিচ্ছি।

অবেলায় ফোঁটা কাশফুল নিয়তির নির্মম পরিহাসে হাসছে, আমাকে- তোমাকে দেখছে। জম্পেশ আয়োজনে নিন্দার সভা বসাচ্ছে, তা দেখে অধিষ্ঠিত ভাবনায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি; অধিকারহীনতায় সব রেখে ঘুমিয়ে গ্যাছো; ঘুম ঘুম চোখের পানি তোমার চিবুক ছুঁয়ে গ্যালো। কার তরে এ পানির আবদার; আমার? মোটেও না। যতোই করো তর্কের মশগুল; আমি তো অবহেলায় অনাদরে জেগে থাকা ভাঁটফুল।

সন্ধ্যা মালতী 
♦️
দুঃখবোধের সলতে কেরোসিনে চুবিয়ে দিয়াশলাই বক্স থেকে কাঠি সন্তর্পণে বের করে কপালে মাখছি। আগুন ধরাচ্ছি। দুঃখ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সুখী মানুষ হবার লোভে সুখের সন্ধানে তোমার সাথে ভাব জমাচ্ছি, অকূল সাগরে ভেসে গেছে তোমার সুখ, দুঃখবোধের বাক্স নিয়ে ঘুরছো তা ভেবে পাইনি।  

ব্যথার পাপকে পাশ কাটিয়ে দীর্ঘজীবী করো ভালোবাসার চাষাবাদ, অখণ্ড হৃদয় পূর্ণ করে ধরো বিবমিষার হাত। সন্ধ্যা মালতী, কোনক্রমে টাল মাটাল হয়ে প্রেম উপচে দাও, যাপিত জীবনের প্রেম উস্কে দাও। সব রেখে বাঁচো; ছয়কে ভয়, ভয়কে ছয়ের কাছে রাখো। দুঃখ রেখে সুখকে মাখো, বাঁচো এবং বাঁচো।

বোটানিক্যাল 
♦️
বৃষ্টিমুখর রাস্তায় ছায়াহীন জীবনের ছাতা বিহীন ধর্মঘট। যেতে যেতে বোটানিক্যাল গার্ডেন। শাপলার লম্ফঝম্পে ব্যাঙের অনশন, দেখে ইচ্ছে করে থাকি আরো কিছুক্ষণ। থাকা, মূলত তোমাকে রাখা- বহুদলীয় গণতন্ত্রের মোড়কে মোড়ানো আছে ভাঙা জীবন।

স্টেশনের চত্বরে কোলাহল, কোলাহলে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে কথার আবদার তথা কৌতূহল।  তথাকথিত বিরোধী বাহাসে পক্ষাবলম্বনে ফিরে দেখি সেই বোটানিক্যাল। শাপলা। ব্যাঙ। গেইট ফুল। থেমে থাকা আধো ভাঙা সিঁড়ি। সব মাথায় রেখে পাতি এক জাল; সামনে এসে খাবি খায় রাতের বোটানিক্যাল কঙ্কাল।

#ইরু_কবিতা

Comments

    Please login to post comment. Login