Posts

গল্প

জীবন নিয়ে খেলা

December 2, 2025

Md. Lalon Shaikh

7
View

জীবন নিয়ে খেলা

সদ্য শহরের প্রান্তে গড়ে ওঠা ভরসাপুর বাজার ছিল মানুষের প্রাণের জায়গা। সেই বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল জাহিদ মিয়ার বিশাল খাবারের গুদাম। 

ব্যবসায় বুদ্ধিমান আর কথায় মিষ্টি বলে লোকজন তাকে খুব বিশ্বাস করত। তার দেওয়া সামান প্যাকেট, ঘি, মসলা—সবই ‘খাঁটি’ নামে চলে।

কিন্তু সবার অজান্তে জাহিদ মিয়ার গুদামের ভেতরে চলত ভয়ানক ভেজালের কারখানা।
নকল ঘিতে মিশত সস্তা প্যারাফিন, মসলায় রঙ তুলতে ব্যবহৃত হতো শিল্প রং, আর চাল চকচকে দেখাতে লাগত প্লাস্টিক কণার ব্যবহার।

জাহিদ মনে করত—
“মানুষ তো দেখে না। যতক্ষণ লাভ আছে, ততক্ষণ সব ঠিক।”

১. মৃত্যুর দাওয়াত

একদিন শহরের বিখ্যাত স্কুল “জনকল্যাণ একাডেমি”–র বার্ষিক উৎসব। ছোট ছোট বাচ্চারা আনন্দে ভরপুর। 

রান্না করা হলো বিরিয়ানি, হালুয়া, মিষ্টি—সবই জাহিদের গুদাম থেকে আনা মাল দিয়ে।

সন্ধ্যার আগেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটল—
হঠাৎ করেই শিশুদের একের পর এক বমি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট!
পুরো মাঠে শুনতে পাওয়া গেল মা–বাবাদের অসহায় চিৎকার।

হাসপাতাল থেকে জানাল—
বিরিয়ানির ঘিতে শক্তিশালী রাসায়নিক মেশানো ছিল।
তার প্রভাবে কয়েকজন শিশুর অবস্থা হলো সংকটাপন্ন, একজনের দৃষ্টিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

২. মুখোশ উম্মোচন

পরদিন শহরে ঝড় উঠল। সংবাদমাধ্যম, পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থা মিলে তদন্ত শুরু করল। গুদামে হানা দেওয়া হলে দেখা গেল—
স্তূপ করে রাখা নকল কেমিক্যাল, শিল্প রং, প্লাস্টিক কণা—সবই প্রমাণের মতো লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জাহিদ পালাতে চাইলে এক বৃদ্ধ তাকে থামিয়ে বলল—
“বাবা, আমরা তোমার উপর ভরসা রেখেছিলাম। আমাদের বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলা করলে কেন?”

জাহিদের মুখ থেকে শব্দ বের হলো না।

৩. বিচার শুধু আদালতে নয়

আদালত তাকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দিল। গুদাম জব্দ হলো, দোকানসমূহ বন্ধ করা হলো।
কিন্তু সবচেয়ে বড় বিচার হলো মানুষের চোখে—
একসময় যে মানুষরা তাকে  সম্মান দিত, আজ তারা মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আখিরাতে আল্লাহর বিচারতো আছেই। 

জেলের অন্ধকার ঘরে বসে জাহিদ প্রতিদিন শুনত—
স্কুলের সেই শিশুটির ডাক্তারি রিপোর্ট, তার চোখ আর আগের মতো কাজ করবে না।
প্রতিটি শব্দ যেন তার বুক বিদ্ধ করত।
সে শুধু ব্যবসা নয়—একটি শিশুর ভবিষ্যৎ, অসংখ্য পরিবারের শান্তি, শত মানুষের বিশ্বাস—সবকিছু নষ্ট করেছে।

৪. শিক্ষা
** খাদ্যে ভেজাল দেওয়া শুধু অপরাধ নয়, এটি মানুষের জীবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
** এ যুদ্ধ কখনো কারও জয় এনে দেয় না—
**  শেষে সব হারায় ভেজালকারী নিজেই।

Comments

    Please login to post comment. Login