চিন্তার কারাগার
রিশানের মনের মাঝে এক অদ্ভুত দৌড় চলছে।
প্রশ্নের জন্ম হয়েছে, কিন্তু সেই প্রশ্নগুলো কীভাবে মুক্তভাবে বিকশিত হবে—তা সে এখনও বুঝতে পারছে না।
কলেজের ভিড়ে, রিশান দেখতে পায় অনেকেই নিজের চিন্তার সীমাবদ্ধতায় আটকে আছে। তারা একে অপরের কথায় বিশ্বাস করে, কখনো নিজের যুক্তি বা বোধের পরীক্ষা করে না। যারা ভিন্ন মত দেয়, তাদের কথা হয় অগ্রহণযোগ্য, কিংবা অবজ্ঞার জন্ম দেয়।একদিন ক্লাসে অধ্যাপক একটি কঠিন প্রশ্ন তুললেন—
“তোমরা কি সত্যিই স্বাধীনভাবে চিন্তা করো? নাকি কারো আগে থেকে নির্ধারিত ধারনাগুলো অনুসরণ করছো?” এই প্রশ্নে পুরো ক্লাস স্থবির হয়ে গেল। কেউ কিছু বলতে পারল না। রিশানের মনের ভিতরে এক ধাক্কা লাগল।
সে বুঝল, সে অনেক দিন ধরে নিজের চিন্তার বন্দি।একটা অদৃশ্য কারাগারে আটকে আছে।
সেখানে চারপাশে প্রচলিত বিশ্বাসের উচ্চ প্রাচীর আর অসংখ্য যমজ দ্বিধা-সংকোচ। রিশান লক্ষ্য করল, সমাজের নিয়ম-কানুনই এক ধরনের কারাগার। শিক্ষকরা নিয়মে বাধ্য, বন্ধুরা একই মত পোষণ করে, পরিবারও নির্দিষ্ট বিশ্বাস ধরে রাখে। যারা এসব ভেঙে নতুন চিন্তা করেন, তাদের প্রতি অবজ্ঞা বা বিচ্ছিন্নতার ভয় থাকে। সে স্মরণ করল, তার ছোটবেলায় স্কুলে একবার প্রশ্ন করেছিল,
শিক্ষক বিরক্ত হয়ে বলেছিল, “সব প্রশ্নের উত্তর হয় না, মেনে নিতে শিখো।” তার সেই কথাগুলো আজও তার মনের গভীরে প্রভাব ফেলে।
রিশান বুঝতে পারল, বাহ্যিক বাধার চেয়ে ভয়ঙ্কর হলো তার নিজের ভীতির বেড়াজাল।
ভয় ছিল— “ভুল বললে কি সবাই আমাকে আঘাত করবে? ভুল হলে কি আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলব?” এই ভয়ের গ্লানিতে সে নিজের মনের স্বাধীনতাকে নিজেই বন্ধক রেখেছিল। সে উপলব্ধি করল, সত্যিকার মুক্তি পেতে হলে প্রথমে এই ভীতি কাটিয়ে উঠতে হবে। নিজের ভুল স্বীকার করার সাহস অর্জন করতে হবে। অবশেষে নিজের বোধ ও যুক্তির ওপর ভরসা করতে হবে।
এক সন্ধ্যায় রিশান একাকী বসে ভাবল,
“আমি আর কারো কথা শুনে আমার চিন্তা বাঁধতে দেব না।
আমি নিজের ভুলকে নিজের শক্তি বানাবো।
আমি নিজের যুক্তির আলোয় পথ খুঁজে নেব।”
তার চোখে তখন নতুন এক আশা জ্বলজ্বল করছিল।
সে জানত, এই যাত্রা সহজ হবে না, তবে প্রয়োজনীয়।
🧠চিন্তার প্রশ্ন:
১. আপনার চারপাশে এমন কী কী সামাজিক বাধা আছে যা আপনাকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে বাধা দেয়?
২. নিজের ভেতরের ভয়গুলোকে কীভাবে চিনতে ও মোকাবিলা করতে পারেন?
৩. আপনি কীভাবে নিজের চিন্তার স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করবেন?