চাকরি এবং দক্ষতা গড়ে তোলা: আজকের সময়ে এগিয়ে যাবার নকশা
বর্তমান বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, তথ্যপ্রবাহ ও বিশ্বায়নের প্রভাবে চাকরি ও ক্যারিয়ারের মানদণ্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যে দক্ষতা ১০ বছর আগে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আজ তার মূল্য অনেকটা কমে গেছে; আবার কিছু দক্ষতা হঠাৎ করে অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই ক্যারিয়ার গঠন এখন আর শুধু ভালো রেজাল্টের উপর নির্ভর করে না - বরং নির্ভর করে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট, মানসিক প্রস্তুতি, অভিযোজন ক্ষমতা এবং নিয়মিত শেখার চেষ্টার ওপর।
আজকের এই লেখায় ক্যারিয়ার ঠিক করা, নিজের দক্ষতা গড়ে তোলা, আগামীদিনের চাকরির হাওয়া বোঝা, কোন স্কিল লাগবে তা খুঁজে বার করা থেকে শুরু করে নিজের পথ মজবুত করার টিপস - প্রায় সবকিছুতেই চোখ রাখব।
১. ক্যারিয়ার মানে কী, আর তার জন্য পরিকল্পনা দরকার কেন?
চাকরি মানেই সব না - আসলে এটা হচ্ছে ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পথ, যেখানে কেউ তার দক্ষতা, আগ্রহ আর লক্ষ্য জুড়ে এগিয়ে যায়।
অনেকে চাকরিই মানে ক্যারিয়ার, তবুও আসল কথা হচ্ছে -
আপনি কোন স্কিল গড়ে তুলছেন
তুমি কোনদিকে গড়ে উঠছ? হয়তো আস্তে আস্তে পথ খুঁজে নিচ্ছ।
আগামীতে কোথায় ঠিক দাঁড়াতে চাইছেন
আর তার জন্য কীভাবে এগোচ্ছেন
কীভাবে ক্যারিয়ারের পথ ঠিক হয়? সেটা নিয়ে ভাবা দরকার।?
1. যথাযথ দিকনির্দেশনা দেয়
2. ভাবলেই মনে হয়, সময় আর জোরে কাজ করা এখন অনেকটা বাঁচছে।
3. নিজের পারদর্শিতা আর কমজোর দিকগুলো বোঝা যায়।
4. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজের ছাপ ফেলা গড়ে ওঠে।
5. আর্থিক ভাবে স্থিতিশীলতা পেলে মন অনেকটা শান্ত হয়।
একটা নৌকার মতোই ভাসতে থাকবে যদি ঠিকঠাক পথ না ধরো, তখন হাওয়া যেদিকে নেয় সেদিকেই যাবে। আসল জিনিসটা হচ্ছে - দক্ষতা গড়ে তোলা: এটাই তোমার চাকরির খুঁজ।
এখনকার সময়ে ডিগ্রি মানেই দরজা খোলা, আসল ভিতরে প্রবেশের উপায় হচ্ছে দক্ষতা।
স্কিল হয় তিন ধরনের।
(১) টেকনিক্যাল স্কিল
যেগুলো একটা নির্দিষ্ট কাজ করতে লাগে। ধরো মাইনে
- প্রোগ্রামিং
- গ্রাফিক ডিজাইন
- ভিডিও এডিটিং
- অ্যাকাউন্টিং
- বৈদ্যুতিক অথবা যান্ত্রিক দক্ষতা
- ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা
- ওয়েব ডিজাইন
(২) সফট স্কিল
চাকরি পাওয়া আর তা লক্ষ্য রাখা দুটোই একদম জরুরি। মানে, হিসাব-নিকাশ ঠিক থাকলে ভালো চান্স পাওয়া যায়।
- যোগাযোগ দক্ষতা
- টিমওয়ার্ক
- নেতৃত্বদানের ক্ষমতা
- সমস্যা সমাধান
- সময় ব্যবস্থাপনা
- ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স
(৩) লাইফ স্কিল
এগুলো শুধু চাকরি নয়, দৈনিক জীবনেও কাজে আসে। মানে,
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা
- আর্থিক সচেতনতা
- মনোযোগ ধরে রাখা
এই তিন রকম দক্ষতা জুড়ে কাউকে চাকরির প্রস্তুত করা হয়।
পরের সময়ে চাকরির দুনিয়া: কোথায় আসলে পাওয়া যাবে ভালো সুযোগ?
গবেষকদের খোঁজে পাওয়া গেছে, আগামী একটা দশকে যেসব জায়গায় সুযোগ বাড়বেই, সেগুলো হচ্ছে -
- আইটি আর প্রযুক্তি খাত
- এআই-র সঙ্গে মেশিন শেখা
- ওয়েব/অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- ডাটা সায়েন্স
- সাইবার সিকিউরিটি
- ক্লাউড কম্পিউটিং
২. ডিজিটাল ক্রিয়েটিভ সেক্টর
- গ্রাফিক ডিজাইন
- ভিডিও এডিটিং
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- UI/UX ডিজাইন
৩. সুস্থতা আর চিকিৎসার জগত
- নার্সিং
- মেডিকেল টেকনোলজি
- ফিজিওথেরাপি
৪. ব্যবসা ও ফাইন্যান্স
- অ্যাকাউন্টিং
- ব্যবসা বিশ্লেষণ
- ব্যাংকিং
- উদ্যোক্তা
৫. শিক্ষা আর দক্ষতার প্রশিক্ষণ
- অনলাইন টিউটর
- স্কিল ট্রেইনার
- ভাষা শেখানো
৪. ক্যারিয়ার বাছাইয়ের একটা ভালো পদ্ধতি
- ঢের মানুষ চাকরি নিরিয়ে ফেলে -
- বন্ধুর কথায়
- চাপের মুখে
- পরিবারের প্রত্যাশায়
- না বুঝে
তবে ডান ক্যারিয়ার চালনার জন্য ৪টা ধাপ আছে -
- প্রথমে তোমার কীসে মন যায়, সেটা খতিয়ে দেখো।
- কী করলে তুমি খুশি হও? কখন বুঝতেই পারো না সময় চলে গেছে?
পরবর্তী ধাপ: নিজের সামর্থ্যগুলো খুঁজে বার করা
- কী কী জিনিস তুমি করতে পারো?
- আপনার শক্তি কোথায়?
ধাপ ৩: বাজারে এটার চাহিদা আছে তো?
ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা মাথায় রেখেই ফিল্ড বাছতে হবে।
ধাপ ৪: শেখা যাবে কীভাবে?
- একটা চাকরি বেছে নাও, যেখানে সামনে এগোনো যাবে ঘটা শেখার মধ্যে দিয়ে।
৫. দক্ষতা বাড়ানো কীভাবে শুরু করবেন?
দক্ষতা গড়ে তোলা লাগাতার চেষ্টা মানে। শুরু করা যায় পাঁচটি ধাপেও -
১. আগে তো একটা লক্ষ্য স্থির করো।
চাকরি দরকার? নাকি ফ্রিল্যান্সিংয়ে মন ভরছে না? হয়তো নিজেদের ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা? আপনি কোন লাইনে যেতে চান?
২. তাই মতো পড়াশোনা চালিয়ে যাও।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো—
Coursera
Udemy
YouTube
Google Career Certificates
বাংলাদেশে—
LEDP
ICT Division
BD Skills
Bohubrihi
Shikhbe Shobai
৩. প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘন্টা করে পড়লে ভালো হয়।
৪. প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস
যেমন—
একদিনে একটা পোস্টার তৈরি করলেই ডিজাইনের মজা আসবে।
কোডিং শেখা হচ্ছে? তবে প্রতি দিন ১০-১৫ লাইন লেখা চালিয়ে যাও।
৫. পোর্টফোলিও তৈরি করুন
দক্ষতা প্রমাণের জন্য লাগবে -
প্রজেক্ট
নমুনা কাজ
GitHub বা Behance লিংক
একটা পোর্টফোলিও থাকলে নিয়োগদাতা আপনার দিকে বেশি নজর দেয়।
৬. চাকরির ইন্টারভিউ আর ক্যারিয়ারের দক্ষতা
চাকরি পেতে গেলে দক্ষতা থাকা জরুরি, তবে তা-ও যথেষ্ট নয়।
১. সিভি লেখার কৌশল ১–২ পৃষ্ঠা যথেষ্ট
সঠিক ফরম্যাট দক্ষতা আর এর পাশেই কাজের ধরন খুঁজে নাও।
ভুল ছাড়াই বানান
২. ইন্টারভিউ স্কিল
- আত্মবিশ্বাস
- পরিষ্কারভাবে কথা বলা
- সমস্যা দূর করার পদ্ধতি বলছি।
- লক্ষ্যটা ঠিকঠাক বুঝতে হবে।
৩. অফিস কালচার বোঝা
- সময়মতো কাজ
- টিমওয়ার্ক
- ইমেইল আর রিপোর্ট লেখা কতটুকু ভালো হয়
- সিনিয়রের প্রতি শ্রদ্ধা
আজকের চাকরিতে প্রয়োজন হওয়া জিনিসগুলো এখনকার সময়ের ১৫টা হাতের দরকারি জিনিস -
- যোগাযোগ দক্ষতা
- ক্রিটিক্যাল থিংকিং
- সমস্যা সমাধান
- ডিজিটাল লিটারেসি
- সফটওয়্যার স্কিল
- লিডারশিপ
- টিমওয়ার্ক
- ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স
- সৃজনশীলতা
- ডাটা বিশ্লেষণ
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতা
- প্রেজেন্টেশন স্কিল
- টাইম ম্যানেজমেন্ট
- প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং
৮. চাকরি বা পেশাতে এগোনোর জন্য ভাবনার ধরণ গড়ে তোলা
মাথার খোল ঠিক হলে দক্ষতা জুড়েই যায়।
মনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো হচ্ছে -
- ১. Growth Mindset মানে হলো - আমি পারব শেখা, এটা ভাবা।
- ২. একদিনে সাফল্য পাওয়া যায় না।
- ৩. নিজের উপর আস্থা রাখলে কেউ বড় হতে পারে না যদি তাকে ছোট মনে করে।
- ৪. ভুল থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। হার মানেই সব ফিরে আসবে না - এটা তো শুধু একটা শুরু।
- ৫. সম্পর্ক গড়ে তোলা। ভালো যোগাযোগ নতুন দরজা খুলে দেয়।
৯. ছাত্রটি কীভাবে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবে?
বাংলাদেশে ঢের ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যত নিয়ে হিমসিম খায়। ওদের জন্য একটি সহজ গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।
1. একদম প্রথম বছর থেকেই দক্ষতা আয়ত্ত করা যায়।
2. সেমিস্টারের প্রতি মোড়ে ১টা নতুন কিছু শেখা।
3. ওয়েবভিত্তিক শেখা আর অনুশীলন
4. ছোটখাটো কাজ করলে একটু একটু বোঝা যায়।
5. ইংরেজি উন্নত করা
6. কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানো
7. কোনও সেমিনারে গা দিয়েছি, আবার কখনও বা হাত পাকানো ঘটেছে ওয়ার্কশপে।
8. সিভি বানাও। আর LinkedIn-এ প্রোফাইল খুলে ফেলো।
এভাবে এগোলে পড়াশোনা শেষ করেই ঝটপট চাকরি মিলবে। ১০. ঘরে বসে কাজ - কি সত্যিই তা থেকে চাকরি হয়?
অবশ্যই পারে।
এখন কয়েক লাখ মানুষ পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সিং করছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা—
- বাড়ি থেকে কাজ
- আপনার ইচ্ছা মতো সময়ে কাজ করুন।
- আয়ের বহুমুখিতা
- বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্ট
আর তো পারবে না, যদি স্কিল না থাকে।
শুরু করতে হলে—
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- গ্রাফিক ডিজাইন
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ভিডিও এডিটিং
- কনটেন্ট রাইটিং
ওইগুলোর মধ্যে যে-কোনো একটা দক্ষতা শেখা লাগবে।
১১. ক্যারিয়ার আর দক্ষতা তৈরির পথে বাংলাদেশে অসুবিধা
চ্যালেঞ্জগুলো হলো—
1. সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব
2. দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব
3. শহর–গ্রাম বৈষম্য
4. প্রযুক্তিগত সুবিধার সীমাবদ্ধতা
5. ইংরেজি না পারা, আবার কথা বলতেও ভয়।
6. চাকরির খুঁজে মানুষের ভিড় লেগেছে।
আজকে আর সেই ঝামেলা নেই, কারণ ইন্টারনেট পেয়েছি।
১২. চাকরির জগতে এগিয়ে যাওয়ার উপায় - এক নজরে।
1. তোমার নিজের টার্গেট সেট করো।
2. দরকারি স্কিল শিখুন
3. প্রতি দিন টুকিতুকি অভ্যাস করলেই হবে।
4. পোর্টফোলিও তৈরি করুন
5. নেটওয়ার্ক তৈরি করুন
6. সিভিতে দক্ষতা আর ইন্টারভিউয়ে নৈপুণ্য থাকা জরুরি।
7. দামি জিনিসের চাহিদা বাড়লে তুমি ও একটু পরিবর্তন করো।
শেষ কথা
স্কিল আর চাকরির পথ চলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। আজকের দুনিয়ায় নতুন শেখা, বদলানোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, ধারালো ভবিষ্যৎ ঠিক করা - এগুলো ছাড়া এগোনো অসম্ভব।