🍯 ভেজাল ও খাঁটি গুড় বিক্রেতা 📜

🍯 ভেজাল ও খাঁটি গুড় বিক্রেতা  📜

দামেস্কের এক শহরে 'বাহরাইন' নামে এক ধনী ব্যবসায়ী ছিল। সে খেজুরের গুড়, আখের গুড় ও মধু বিক্রি করত। বাহরাইন দেখল, গুড়ের চাহিদা খুব বেশি, সামনে রমাদ্বান (রোজা) মাসও আসছে। কিন্তু খাঁটি গুড় উৎপাদনে খরচ ও সময় বেশি লাগে। তাই সে দ্রুত ধনী হওয়ার লোভে এক জঘন্য পথ ধরল: গুড়ের সাথে সস্তা আটা, অতিরিক্ত চিনি এবং কিছু ক্ষতিকর রং মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করতে শুরু করল। বাজারে তার গুড় দামেও কম ছিল, তাই ক্রেতারা লোভে পড়ে তার ভেজাল গুড়ই বেশি কিনত।

বাহরাইন তার এই অসাধু ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ জমিয়ে নিল এবং আস্তে আস্তে সে অনেক ধনী হয়ে গেল, কিন্তু তার মনে বিন্দুমাত্র আখিরাতের ভয় ছিল না।

ঐ একই বাজারে 'সাঈদ' নামেও এক সাধারণ সৎ গুড় বিক্রেতা ছিলেন। সাঈদ ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহভীরু। তিনি নিজ হাতে উৎকৃষ্টমানের খাঁটি গুড় তৈরি করতেন। তাঁর গুড় সামান্য দামি হলেও, গুণগত মান ছিল অতুলনীয়। দাম একটু বেশি হওয়ার কারণে তার গুড়  বেশি  বিক্রি হতো না। তবে আল্লাহর অনুগ্রহে তার সংসার সুখে-শান্তিতেই চলতো। 

বাহরাইন সাঈদকে একদিন বিদ্রূপ করে বলল, "সাঈদ, তুমি এখনো খাঁটি গুড় বিক্রি করে দিন কাটাচ্ছো? এভাবে তুমি কবে ধনী হবে? দেখো, আমি ভেজাল দিয়ে কারসাজি করে কত সহজে সম্পদ গড়ছি! ব্যবসা হলো চাতুরীর খেলা!"

সাঈদ শান্তভাবে উত্তর দিলেন, "বাহরাইন, আমি আল্লাহর এই বাণীকে ভয় করি:

'সুতরাং তোমরা যখন মাপবে, তখন পূর্ণ মাপে দেবে, আর দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করবে ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। এটাই উত্তম এবং পরিণতির দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ।' (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৩৫)"

তিনি আরও বললেন, "ভেজাল দেওয়া, বিশেষ করে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, হলো ধোঁকাবাজি , আর আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) স্পষ্ট বলেছেন: 'যে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।' এই ভেজালের প্রতিটি টাকা আমার কাছে হারাম।"

বাহরাইন সাঈদের কথা হেসে উড়িয়ে দিল। বলল, আরে এখন কামায় করে নিই, এখন না কামায় করলে কখন করবো।  পরে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিব।

শাস্তি ও পরিণাম

কিছুদিন পর রমাদ্বান (রোজা) মাস শুরু হল।  রোজাদারগণ ইফতারিতে গুড়ের সরবত পান করত, গুড় দিয়ে বিভিন্ন রকমের ইফতারি তৈরি করত এবং খেত।

১. পার্থিব শাস্তি: ভেজাল গুড় খেয়ে রোজাদারসহ এলকার বহু শিশু ও বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ল। অসুস্থ রোজাদার, শিশুসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের চিকিৎসা করে  চিকিৎসকরা জানতে পারলেন এই অসুস্থতার কারণ ভেজাল গুড়, তখন জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বাহরাইনের দোকান ঘেরাও করল এবং স্থানীয় প্রশাসককে তার ভেজাল ব্যবসার প্রমাণ দেখাল। প্রশাসক ইসলামী বিচার অনুযায়ী বাহরাইনের সব গুড় নষ্ট করে দেওয়ার এবং তাকে কঠোর আর্থিক জরিমানাসহ জেলে প্রেরণের নির্দেশ দিলেন। এক মুহূর্তে বাহরাইনের সব সম্পদ ও সুনাম ধ্বংস হয়ে গেল।

২. আখিরাতের ভয়: সবচেয়ে বড় শাস্তি বাহরাইন পেল তার হৃদয়ে। তার কঠিন অনুশোচনা শুরু হলো। অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষগুলোর কথা বিশেষ করে রোজাদার মানুষগুলোর কথা মনে করে সে অনুতপ্ত হলো, কারণ সে মানুষের স্বাস্থ্য ও বিশ্বাস নিয়ে জঘন্য ব্যবসা করেছে।

আল্লাহর কাছ থেকে আসা কঠোর হিসাবের ভয়ে সে রাতে ঘুমাতে পারত না। সে বুঝতে পারল, দুনিয়ার সাময়িক সম্পদ তাকে পরকালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না। তার হারাম উপার্জনের ফলস্বরূপ তার হৃদয়ে কোনো বারাকাহ বা শান্তি ছিল না।

এদিকে, সাঈদের খাঁটি গুড়ের সুনাম বাজারে আরও ছড়িয়ে পড়ল। তার ব্যবসায় বারাকাহ এত বেড়ে গেল যে, দূর-দূরান্তের বণিকরা তার কাছ থেকে গুড় কিনতে আসত। সাঈদ তার হালাল উপার্জনে শুধু নিজেই শান্তি পাননি, বরং অভাবী মানুষকে সাহায্য করতে পেরেও খুশি ছিলেন।

উপদেশ

** খাদ্যে ভেজাল বা ধোঁকাবাজি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ: খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বড় পাপ (কবীরা গুনাহ)।

** হালাল উপার্জনই আসল বারাকাহ: হারামের মাধ্যমে দ্রুত ধনী হওয়া যায়, কিন্তু তাতে শান্তি বা কল্যাণ থাকে না। প্রকৃত মুসলিম ব্যবসায়ী সর্বদা হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করে।