Posts

গল্প

ইমানের রুটি

December 4, 2025

Md. Lalon Shaikh

35
View

ইমানের রুটি

সকল প্রকার ভেজাল, ছলচাতুরি ও অসততা পরিহার করে হালাল রিজিকের সন্ধান করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। কারণ কিয়ামতের দিন প্রতিটি হালাল-হারামের হিসাব দিতে হবে।

 কিন্তু আজকের সমাজে আমরা হালাল -হারামের চিন্তা না করে দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম অবৈধ,

 অন্যায় পন্থায় উপার্জন করছি। এ প্রসঙ্গে একটি ছোট্ট গল্প উপস্থাপন  করা হলো। 

রাসেল সাহেবের "পিউর হোম বেকারি" শহরের সবচেয়ে পুরনো বেকারিগুলোর একটি।

পঞ্চাশ বছর আগে তার বাবা এটি শুরু করেছিলেন, তখন দোকানের সামনে

 একটি কাঠের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল: "আল্লাহর নামে শুরু, পরিশুদ্ধ উপাদানে প্রস্তুত।"

কিন্তু সময় বদলেছে। আজকাল পাশে তিনটি আধুনিক বেকারি খুলেছে—চকচকে শোকেস, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, আর খাবারে স্বাদের কৃত্রিমতা বাড়ানোর নানা রাসায়নিক।

 রাসেল সাহেবের বেকারিতে বিক্রি কমতে শুরু করেছে।

একদিন তার ছেলে আরিফ বলল, "বাবা, আমাদেরও তো কম খরচে উৎপাদন বাড়াতে হবে।

 অন্যথায় আমরা ব্যবসায় টিকতে পারবো না। 

রাসেল সাহেব চিন্তিত চোখে তাকিয়ে বললেন, "বেটা, আমাদের বেকারির ভিত্তি তো শুদ্ধতার ওপর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, 'নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট।' আমরা কী করে হারাম বা সন্দেহজনক জিনিস ব্যবহার করব?"

কিন্তু ব্যবসা তো চালাতে হবে। মাসখানেক পর, যখন ঋণের চাপ বাড়ল, বিক্রয় কমে গেল তখন রাসেল সাহেবও সস্তা, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার শুরু করলেন।

 রুটিতে সুস্বাদু হওয়ার কৃত্রিম রাসায়নিক, কেকের ক্রিমে সস্তা ট্রান্সফ্যাট—

সবই চলে আসল এবং বিক্রি ও লাভের পরিমাণ বেড়ে গেল।

এক রমজানের দিন। রাতে এশা ও তারাবীর নামাজ আদায়ের পর রাসেল সাহেব ঘুমাতে পারছিলেন না।

 হঠাৎ একসময় ঘুমিয়ে পড়লেন এবং স্বপ্নে দেখলেন, তার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে একটি রুটি।

 সেই রুটি থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনি বলছেন, "বেটা, আমি যে বেকারি দিয়ে গেলাম ইমানের আমানত হিসেবে, তুমি তাতে খিয়ানত করছ?"

রাসেল সাহেব ঘুম থেকে জেগে তাসবিহ পড়তে লাগলেন।

 ভোরবেলা ফজরের আজানের পর তিনি স্থির করলেন, আর নয়।

সকালেই তিনি সব নিম্নমানের উপকরণ ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন। 

দোকানের সামনে একটি নতুন সাইনবোর্ড লাগালেন: 

"আল্লাহর নামে শুরু, পরিশুদ্ধ উপাদানে হালাল পদ্ধতিতে প্রস্তুত।

 আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভয়েই আমাদের মান নিয়ন্ত্রণ।"

প্রথমদিকে বিক্রি আরও কমল। লোকজন দাম বেশি বলে কিনতে চায় না।

 কিন্তু রাসেল সাহেব দমলেন না। 

তিনি মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে পরামর্শ করে একটি কার্যপদ্ধতি শুরু করলেন:

১. প্রতিটি উপাদানের হালাল সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা।

২. দোকানের সামনে স্পষ্টভাবে উপকরণের তালিকা টাঙানো।

৩. একটি অংশ দরিদ্র ও এতিমদের জন্য বরাদ্দ রাখা।

একদিন স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেব জুমার খুতবায় বললেন, "ভাইসব, আমরা কী খাচ্ছি তা নিয়ে ভাবি কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে শরীর হারাম থেকে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' আমাদের উচিত সেসব ব্যবসায়ী ও  দোকানকে সমর্থন করা যারা শুদ্ধতার প্রতিশ্রুতি দেয়।"

লোকজন সচেতন হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে রাসেল সাহেবের বেকারিতে ভিড় বাড়ল। মানুষ বুঝতে পারল, স্বাদের চেয়ে স্বাস্থ্য ও ধর্মীয় বিধান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আজ "পিউর হোম বেকারি" শহরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত খাদ্য প্রতিষ্ঠান। রাসেল সাহেব প্রায়ই তার নাতিদের বলেন, "মনে রেখ, আমাদের ব্যবসা শুধু রুটি বিক্রি নয়; এটি একটি আমানত। আল্লাহ আমাদের রিজিক দেন, আর আমাদের দায়িত্ব সে রিজিককে হালাল ও পবিত্র রাখা।"

**গল্পের শিক্ষা:** 

ধন-দৌলতের প্রতিযোগিতায় আমরা যেন ভুলে না যাই:

১. আল্লাহর দেওয়া রিজিক হালাল উপায়ে উপার্জন করা ফরজ
২. হারাম মালে বরকত থাকে না, তা ধ্বংসের কারণ হয়
৩. সৎ উপার্জনে শান্তি ও সম্মান আছে, অসৎ উপার্জনে আছে অশান্তি ও লজ্জা
৪. দুনিয়ার সম্পদ ক্ষণস্থায়ী, আখেরাতের সম্পদই চিরস্থায়ী

** ইসলামে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বা হারাম উপাদান ব্যবহার করা একটি বড় গুনাহ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।" (সহীহ মুসলিম)। ব্যবসায় লাভের চেয়ে হালাল-হারামের বিচার বেশি গুরুত্বপূর্ণ,

 কারণ প্রতিটি নগদ লেনদেনই শেষ বিচারের দিনে আমাদের আমলনামায় যোগ হবে।

Comments

    Please login to post comment. Login