Posts

ভ্রমণ

বরিশাল দুর্গ সাগর ভ্রমণে যাচ্ছি। (পঞ্চম খন্ড)।

December 5, 2025

Shafin pro

5
View

ঢাকা থেকে এসে পরদিন সকালে ছোট একটি ৩২ সিটের বাস ঠিক করে নিলাম সবাই যাওয়ার জন্য। রাত্রে খাওয়ার সব আয়োজন ঠিক করে ফেলেছিলাম। ব্যাগ হাড়ি পাতিল  প্লেট গ্লাস ডেকোরেটরের মালামাল ফোন করে মাধবপাসা থেকে রেডি করে ফেলেছি সকালেই। কারণ এগুলো টানাটানি একটা ঝামেলা রয়েছে। তাই দুর্গাসাগরের পাশে বাজার থেকে ডেকোরেটরের মালামাল ফোন করে রেডি করে ফেলেছি। সকাল আটটার ভিতরে বাস চলে আসবে। এদিকে ভাই বোনেরা অনেকেই এসে পৌঁছেছে। মামার বাসা থেকে এখনো তারা এখনো আসতে পারেনি। সবাই আট টায়  ভিতরে চলে আসবে কারণ সবার বাসায় কাছাকাছি রিক্সা যাতায়াত করে আসতে পারে। এখন সাড়ে আটটা বেজে গেছে সবাই আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি বাসের কাছে। সকালের নাস্তা আমরা দুর্গা সাগরে গিয়েই খাব। বাসা থেকে অবশ্য দুর্গাসাগরে যেতে এক ঘন্টা বেশি মনে হয় সময় লাগবে না। মামি মামাতো ভাই বোন সবাই চলে এসেছে মামা হয়তো কোন কাজে একটু দেরি করতেছে বাইরে গেছে এই জন্য। ভাগ্না ভাগ্নি আত্মীয়-স্বজন মিলে আমরা ৩০ থেকে ২৫ জন হয়তো হতে পারি। এদিকে কালকে যেসব মিষ্টি কিনেছিলাম তা বাসার বেশি খাওয়া হয়নি সেগুলো নিয়ে নিলাম দইগুলো নিয়ে নিলাম সকালের নাস্তার জন্য জিজ্ঞেস করলাম আমার ছোট বোন কি কি তৈরি করেছিস। সে বলল ভাজি  পড়াটা কলিজা ভুনা এবং মুগ ডাল তৈরি করা হয়েছে আর বাচ্চাদের জন্য বন রুটি জেলি অন্যান্য তৈরি করা হয়েছে তাদেকে  সেটা দেওয়া হবে সমস্যা নাই। সকালের নাস্তা নিয়ে তোর কোন চিন্তার দরকার নেই। যে পরিমাণ সকালের নাস্তা নিয়েছি তাতে আমাদের সকলের হয়ে যাবে। বাসার সবাই সাজুগুজুতে ব্যস্ত ভাই বোন ভাগনা ভাগ্নিরা সবাই  যার জোর কাজে ব্যস্ত আছে। মেজ মামা চলে এসেছে। তাড়াতাড়ি রিক্সা ভাড়া দিয়ে মেজ মামাকে নামিয়ে নিলাম। তবে দুঃখের বিষয় এই ভুবনে আমাদের কোন বন্ধুদের খবর দেওয়া হয়নি। কারণ আমরা এবার যাচ্ছি পরিবার সকলে মিলে। তাই বন্ধুদের কোন খবর দেওয়া হয়নি। যদি যাওয়ার সময় কেউ না দেখে বসে তাই সেটাই ভালো হয়। আমরা সবাই বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে রওনা দিলাম। দেখে মনে হচ্ছে যে আমরা কোথাও বিয়ে খেতে যাচ্ছি। কারণ এটা একজনের গেট আপ দেখলে মনে হয় যে বিয়ে বাড়িতে রওনা দিচ্ছে। সবাই গাড়িতে চলে আসলো আম্মা এখন দরজা দিয়ে বের হয়নি। আমি আর মেজ ভাই হুট করে নেমে  পারলাম গাড়ি দিয়ে আবার। চলো তো দেখি আম্মু কি করতেছে। গিয়ে দেখি ঘরের দরজা জানালা সব দিচ্ছে। আমরা বললাম আপনি যান আমরা তালা দিয়ে বের হচ্ছি। মেজ ভাইয়ের সাথে মা কে দিয়ে আমি দরজা জানালা সব দেখে শুনে আটকিয়ে নিলাম। সামনের দরজার তালা দিতে গিয়ে  এখন দেখি তালা আটকাতে পারতেছি না। কারণ আমি তো এই বাসায় এখন আর সচরাচর তালা দেওয়া হয় না। তাই কোন তালার কোন চাবি সেটাও আমার খেয়াল নেই। আবার গিয়ে মেজ ভাইকে   দেখে কোন তালার কোন চাবি। দেখলাম যে তালা আটকাতে ভুল করেছি ভিতরে একটা সামনে দিয়ে দিয়েছি। মেজ ভাই বলল সমস্যা নেই তুই যা গাড়িতে আমি সব ঠিক করে আসছি। যেভাবে সচরাচর ভ্রমনে যাই। এখনকার ভ্রমণটা একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। বাচ্চারা হইচই করছে গাড়ির ভিতর। ড্রাইভ বললাম গাড়ি ঘুরিয়ে মাঠ থেকে রাস্তায় উঠুন। আমি আর মেজো ভাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম গাড়িটি  ঘুরিয়ে আসলো রাস্তার উপরে। বাচ্চারা হইচই করতেছে তাদের পিকনিক শুরু হয়ে গেল। মেজ মামা আর মেজ  দুলাভাই কিছু চকলেট আর বিস্কুট নিয়ে উঠলো সে সময় গাড়িতে রেখেছিল। সেগুলো এখন বাচ্চাদের বিলি করে দিল এবং আমাদের কেউ দিল। বড় আপু বড় দুলাভাই অন্যান্য ভাবনা-ভাগ্নিরা সবাই কথা বলতেছে একে পর এক কথা চালিয়ে যাচ্ছে। বাসার খালারা উঠে গেল। আর আমাকে জিজ্ঞেস করল পিয়াজগুলো গাড়িতে কেটে ফেলবো নাকি। আমি বললাম না দরকার নেই ওখানেই বাবুর চিঠি করা আছে। আমি খালাকে বললাম খালা আপনি শুধু প্যাকেট গুলো আলাদা আলাদা করে রাখেন যাতে তাদের বুঝতে সহজ হয়। ইংলিশ  মাছগুলো পানি ঝরতেছে ইলিশ মাছগুলোর নিচে একটি পুলি দিয়ে রাখো। আর গরুর মাংসগুলো থেকে যেন রক্ত বের না হয় তা একটু খেয়াল করে দেখুন। দই গুলোভাবে আছে সেভাবেই থাক। মিষ্টি গুল সরিয়ে পিছনের সিঁথি দিয়ে যান। চালগুলো বাচার প্রয়োজন নেই। সবগুলো ভালো আছে । সালাতের শশা  গুলো দেখেন যাতে চাপা না পারে। খালাকে এগুলো বুঝিয়ে দিলাম কিভাবে কি করতে হবে গাড়িতে বসে। আমার ছেলে দুটো খানে আসার পর ওদেরকে পেয়ে  আমার সাথে আর বেশি কথা প্রয়োজন মনে করে না। ছেলের মা তো কোন খবরই নেই আমার সাথে কথা বলার মত। ছেলের মা বোনেরা সবাই যার যার প্রশংসায় ব্যস্ত। মামি আর আম্মা মিলে তাদের প্রশংসা করতে ছে। মামা আছে নাকি নিয়ে খেলাধুলার ভিতরে। গাড়ি এর  ভিতরে আমরা নতুল্লাবাদ পার হয়ে গড়িয়ার কাশিপুরের দিকে রওনা দিচ্ছি। ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে দিল সুরভী পেট্রোল  পাম্পের দিকে। ড্রাইভার তৈল  নিচ্ছে বাসের জন্য  আবার গাড়ি থেকে নেমে পড়ল কেউ ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য। বাঁসের তৈরি নেওয়া শেষ। কিন্তু ওয়াশরুমের কাছ থেকে এখন  বাসে সবাই উঠে পড়েনি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হইতেছে। সবাই এখন এসে পড়েছে আমরা আবার বাস ছেড়ে দিলাম যাত্রা পথে। মিনি বাসটি এখন কাশিপুর চৌমাথা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই আমরা ঘড়ি আর পার চলে আসব ।এখন আমরা রেন্ডি চলা পার হয়ে যাচ্ছি। হায়রে রেন্ডি তলা এখানে কত না স্মৃতি পড়ে আছে। এখানে আসলেই মনে পড়ে সোনার কথা। এই শোন না যাওয়ার জন্য আমরা মোটরসাইকেলে দুই তিনজন চলে আসতাম ভীষণ ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে ।  যাই এ নিয়ে আজকে আর এ পর্যায়ে আলোচনা করব না। চিন্তা করতেই দেখি যে আমাদের বাসটি গরিয়ার পার থামিয়ে দিল। সবাই ধীরে ধীরে নেমে পড়তেছে চা খাওয়ার জন্য। আমি পিছনের সিটে বসা ছিলাম খাবার দেখাশোনা করার জন্য। তাই আমিও চা খেতে নেমে পরলাম সবার সাথে। শুধুমাত্র আম্মা আর মামি মেজো মামি আর খেলাই গাড়িতে রয়ে গেল। হোটেলে ঢুকে যে যা ইচ্ছা চা খাচ্ছে তা খাচ্ছি সেখানে মজমা শুরু হয়ে গেল। তবে এখানে না নামলেই মনে হয় ভালো ছিল। পরিচিত লোকজনের সাথে দেখা হয়ে গেল কেউ জিজ্ঞেস করে বিয়ে যাচ্ছেন নাকি। কেউ জিজ্ঞেস করে পিকনিকে যাচ্ছেন বুঝি।।যাকে যেভাবে বলার দরকার তাকে সেভাবেই বলে দিলাম। দুলাভাই ইশারা বুঝতে পারাতে আমরা সবাই আবার দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িতে সবাই উঠেই হৈচৈ কাচামেচি শুরু করে দিল। কেউ জোরে জোরে গান গাচ্ছে। কেউ  টাকিয়ে তবলা বাজাজে। কেউ হই হই করতেছে। তবে জার্নিপথে নিজেরা হলে এভাবেই সাধারণত ফুতি হয়। সবাই হই করে উঠলো। চেয়ে দেখি আমরা দুর্বোসাগরের কাছাকাছি চলে আসলাম এই বলেই মনে হয় হই করে উঠলো। দুর্ব্যাসাগরের আমরা পশ্চিমপাড়ের গেট  দিয়ে ঢুকবো তাই দুর্গা সাগরের ওয়াল গেলে  গাড়িটি রাস্তা দিয়েপশ্চিম দিকের গেটের দিকে আসতে চলতেছে। গেটের কাছে এসে আমরা পুরুষেরা নিমে পরলাম। গেট খুলে দিতেই আমরা গেটের ভিতরে বাসটি ঢুকিয়ে নিলাম। বন্ধুরা এই পর্যন্ত আসতেই আমাদের ভ্রমণের কয়েকটি খন্ড তৈরি করতে হয়েছে যা একসাথে লিখো লিখতে পারতাম না। তাই খন্ড করে লেখা ভালো হয়েছে। তাই দুর্গাসাগর ভ্রমণের বাকি খন্ডগুলো এখানে আমরা সন্ধ্যার পর্যন্ত ছিলাম তা কি কি করেছি সবই আমরা পরবর্তী খন্ড তে জানিয়ে দেবো। তাই (পঞ্চম খন্ড )এখানেই শেষ করছি।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Shafin pro 13 hours ago

    বরিশাল দুর্গা সাগর ভ্রমনে যাচ্ছি। পঞ্চম খন্ড। এত আনন্দদায়ক ছিল যা লিখে বা ভাষায় কল্পনা করা যায় না এভাবে সব পরিবার নিয়ে ভ্রমণে যাওয়া যে কি মজার তা বুঝে বলতে পারবো না ধন্যবাদ