নদীর ধারে সেই সন্ধ্যা
পদ্মা নদীর জল সেদিন অদ্ভুত শান্ত ছিল।
হাওয়া নেই, ঢেউ নেই, শুধু দূরে কারও বাঁশির সুর ভেসে আসছিল।
প্রতিটি সুর যেন কেউ অদেখা হাতে আকাশে আঁকছিল রাতে উঠতে থাকা নতুন চাঁদের দাগ।
ঐ নদীর ধারের তালগাছটার নিচে বসে ছিল মায়া।
চোখে অন্যমনস্কতা, হাতে পুরনো একটি ডায়রি, আর বুকের কাছে হাজার অজানা প্রশ্ন।
সে যেন নিজের সঙ্গেই কথা বলছিল—
“মানুষ কি সত্যিই নিজের ভাগ্য লেখতে পারে?”
হঠাৎ পিছন থেকে একটি কণ্ঠ—
“তুমি আজকাল এখানে বেশী আসো কেন?”
মায়া চমকে ঘুরে তাকালো।
সামনে দাঁড়িয়ে রায়হান, গ্রামের স্কুলের নতুন শিক্ষক।
চশমার কাঁচে নদীর আলো ঝিকমিক করছে।
মায়া হালকা হাসল, “ভাগ্য বদলায় কি না, তা দেখার জন্যই আসি।”
রায়হান একটু এগিয়ে এসে বসে পড়ল।
“ভাগ্য বদলায় নদীর মত, কখনো শান্ত, কখনো উথাল— কিন্তু থেমে থাকে না।”
এক মুহূর্ত নিরবতা।
নদী বয়ে চলেছে নিজের মত।
চাঁদ উঠেছে আরও উঁচুতে।
হঠাৎ দূরে কুয়াশার মধ্যে ছায়া দেখা গেল—
কারও নৌকা, ধীরে ধীরে তীরে আসছে…
নৌকাটি দেখে মায়ার শ্বাস কিছুটা থমকে গেল।
রায়হান খেয়াল করে বলল,
“তোমার চেনা কেউ?”
মায়া ডায়রিটা শক্ত করে বন্ধ করল।
“হ্যাঁ… হয়তো সে-ই।
যে ফিরে আসার কথা ছিল না কখনো…”
ওই মুহূর্তে নদীর উপর দিয়ে বয়ে গেল হালকা বাতাস।
এবং বাতাসে ভেসে এল এক অদ্ভুত গন্ধ—
যেন পুরনো স্মৃতি, হারিয়ে যাওয়া এক গল্প,
যা আবার ফিরে আসতে চাইছে।