ফেলে আসা স্মৃতি
ডায়েরিটা আবার আলতো করে খুলে রিমি জানালার পাশে বসল।
বাইরে বিকেলের আলো আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে। আলোটা ঠিক সেই রকম—যেমন ছিল তার ছোটবেলায়, যখন স্কুল থেকে ফিরে সে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখত।
পাতা উল্টাতে উল্টাতে রিমি একটা পুরনো ছবির কাছে থেমে গেল।
ছবিটাতে সে আর তার দুই বন্ধু—হাসছে, যেন পৃথিবী তখন খুব ছোট আর খুব সহজ ছিল।
সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রিমির বুকটা কেমন করে উঠল।
বন্ধুরা এখন কে কোথায় আছে—তার কোনো খবর নেই।
তবুও মনে হলো তারা যেন এখানেই আছে, ঠিক তার পাশেই।
হাওয়া আবার হালকা করে বইল।
ঘরের স্যাঁতসেঁতে গন্ধের সঙ্গে পুরনো আমলের সেই নির্দোষ দিনের গন্ধ মিশে গেল।
রিমি চোখ বন্ধ করল—মনে পড়ল, কীভাবে তারা শেষ বিকেলে মাঠের ধারে গল্প করত, ঝগড়া করত, আবার একটু পরেই মিলেও যেত।
বয়স বাড়লে মানুষ কি এমনভাবে আর একসাথে হাসতে পারে?
ডায়েরির শেষ পাতায় একটা ছোট্ট লেখা—
“একদিন আমরা সবাই বড় হবো, তবু এই দিনগুলো যেন মনে থাকে।”
লাইনটা পড়েই রিমির চোখ ভিজে উঠল।
কেউ তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে এত সুন্দর বিশ্বাস নিয়ে লিখেছিল।
আজ এত বছর পরে সে বিশ্বাসটাই যেন তাকে আবার শক্তি দিল।
বাক্সটা বন্ধ করে রিমি ধীরে ধীরে দাঁড়াল।
দরজার কাছে গিয়ে একবার পিছনে তাকাল—পুরনো ঘরটা যেন স্মৃতির মতোই তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছে।
রিমি শান্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল—
“আমি ভুলিনি… আর ভুলবও না।”