কিশোরগঞ্জের সেই চেনা রাস্তায় হেটে চলেছে শায়ন। সময়ের স্রোতে আটকে আজ প্রায় আট বছর পর নিজের জন্মস্থানে পা রাখল সে। একটা সময় কতো চেনা ছিল তার এই পথ এই রাস্তা প্রতিটি গলি ছিল কতো পরিচিত কিন্তু আজ তাকে রাস্তা চিনতেই অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। ভাবনার মধ্যেই আরিয়ান (শায়নের বেস্টফ্রেন্ড ) হটাৎ শায়নকে প্রশ্ন করলো এতো কি ভাবছিস? জবাবে শায়ন বল্লো , ভাবছি একটা সময় এই শহরটা আমার কতো পরিচিত ছিল কিন্তু আজ দেখ এই শহরে আমি একজন অতি অপরিচিত মানুষ । চার দিক কতো বদলে গেছে। আশে - পাশে কতো আধুনিকতার ছোয়া পেয়েছে। জহির কাকুর বাড়ির সামনে আমাদের যে খেলার মাঠটা ছিল ওইটা ও এখন আর নেই। আরিয়ান মুচকি হেসে বলে সময় পরিবর্তনশীল কিন্তু তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই সেই আগের মতোই আছিস। শায়ন হালকা হেসে জবাব দেয় , চাইলেই কি নিজের অস্তিত্ব ভোলা যায়। আরিয়ান উত্তরে বলে, বাবা সাহিত্য পরে তো ভালোই কাব্যিক কথা বলতে শিখে গেছিস। দুই বন্ধু খোশ গল্প করছিল আর রাস্তা দিয়ে হাটছিল , কতোটা সময় পর তাদের দেখা। কিন্তু হটাৎ আরিয়ান খেয়াল করলো শায়ন কথা বলতে বলতে কোন ঘোরে যেন আটকে গেছে , কোন সাড়া শব্দ নেই কি যেন ভাবছে। আরিয়ান শায়নের মাথায় ঘাট্টা দিয়ে বল্ল , শালা আমি কতোক্ষন ধরে বকবক করছি আর তুই এই মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে কি ভাবছিস। শায়ন কেমন ছটফট করতে করতে বল্লো , দোস্ত আমার হার্টবিট কন্ট্রোল করতে পারছি না আমার কেমন জানি নার্ভাস লাগছে দোস্ত আমার মন বলছে ও আমার আশে-পাশে আছে। আমি তাকে অনুভব করতে পারছি দোস্ত ও আমার খুব কাছেই আছে। আরিয়ান শায়নের এই অবস্থা দেখে গাবড়ে গেলো বার বার প্রশ্ন করতে লাগলো কার কথা বলছিস তুই।
শায়ন লাজুক হেসে জবাব দিল হ্রিদয়হরনী।
আরিয়ান এবার রেগে বলতে লাগলো ,
তুই কি শালা মানুষ হবি না এতো গুলা বছর তোকে আমাদের থেকে দুরে রাখা হলো যেন তুই মিমোকে ভুলতে পারিস আর তুই কি না এখনো এই মেয়ের কথা মনে রেখেছিস , কি আছে এই মেয়েতে এতো কিছুর পরে ও তোর কেন এই মেয়ের পিছেই যেতে হবে।
জবাবে শায়ন হালকা হেসে বল্ল , তোকে কিন্তু আমি একটু আগেই বলেছিলাম সব কিছু ভুল্লেও নিজের অস্তিত্বকে কিন্তু ভুলা যায় না আর ও আমার অস্তিত্ব না ও আমার পুরো দুনিয়া।
আরিয়ান এবার রাগ দেখিয়ে বল্ল , তোর যা খুশি তুই তাই কর আমি আর তোর বিষয়ে কোন কথা বলব না।
শায়ন এখন আর নিজের মধ্যে নেই আশে পাশে তার হ্রিদয়ের রানী কে খুজতে ব্যস্ত আপাতত আরিয়ানের কোন কথায় সে মাথা ঘামাচ্ছে না কারন সে জানে আর যাই হোক তার বন্ধু কখনো তাকে ফেলে যাবে না। তাই সে আশে পাশে ভালো করে দেখছে হটাৎ তার চোখ এক জায়গায় আটকে গেছে তার চোখের পলক যেন পড়ছেই না রাস্তার অপর পাশে ওকিলের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে মিমো আর তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শায়ন। সাদা জামা পরিহিতা মাথায় ওড়না দেওয়া কোন প্রকার সাজসজ্জা বিহীন ক্লান্ত নারীকে দেখে শায়নের মনে হচ্ছে এই পৃথীর সবচেয়ে সুন্দর নারীই যেন সে তার মনে হচ্ছে আসমানের হুর যেন জমিনে নেমে এসেছে , শায়ন তার দিকে তাকিয়ে গুন গুন করে বল্লো মাশাল্লাহ।
আরিয়ান এবার চোখ বড় বড় করে শায়নকে বলছে , তুই কি যাবি এখান থেকে নাকি আমি আঙ্কেল কে ফোন দিব।
শায়ন মুচকি হাসি দিয়ে বল্লো দাড়ানা একটু দোস্ত , আমার পিপাসা কাতর চোখ গুলো তাদের তৃষ্ণা নিবারনের সম্পদ পেয়ে আট বছরের তৃষ্ণা মিটানোর বৃথা চেষ্টা করছে তোর কি আমার প্রতি মায়া হয় না।
আরিয়ান বল্লো মায়া হয় বলেই তোকে এতো বছর বাহিরে রাখা তোর জন্য আঙ্কেল - আন্টি কে কি কি ফেস করতে হয়েছে তুই জানিস অবশ্য জানবি কিভাবে তুই তো কখনো আমাদের কথা চিন্তাই করিস নি। আচ্ছা আমাকে একটা সত্য কথা বলবি?
শায়ন জবাবে বলে কি জানতে চাস বল।
আরিয়ান ডিরেক্ট প্রশ্ন করে বসে , তুই যে হটাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে ২ বছর আগে দেশে চলে এসেছিস এটা ওই মেয়ের জন্য তাই না?
শায়ন সোজা জবাব দেয় , তুই আমার বন্ধু আমি তোকে মিথ্যা কথা বলবো না আমি যখন জানতে পারি আমার মায়াবীনি ভালো নেই তখন আমি আর ওই দেশে থাকতে পারছিলাম না , আমার কেমন জানি দম বন্ধ লাগছিল তাইতো আর্জেন্ট ভিসা মেনেজ করে চলে এসেছি।
আরিয়ান বেশ অবাক হয়ে , তার মানে তুই সব জানিস।
শায়ন ছোট করে জবাব দেয় হ্যা।
আরিয়ান বিশ্ময়ে , আমি বুজি না তুই এতো দুরে থেকে এতো খবর কিভাবে পাস , আমরা তো কেউ তোকে জানাতে চাই নি। ভাই তুই যখন সব জানিস তাহলে তুই এটা ও জানিস যে কেসটা ড্রাগ কেস , তোর পরিবারের একটা সম্মান আছে আমার মতে তোর এই কেসে না যাওয়াই ভালো আমি কখনো তোর খারাপ চাইনা এটা মাথায় রাখিস। আর তুই আমার বন্ধু তুই যাই সিদ্ধান্ত নিবি আমাকে তোর পাশে পাবি যেমন ৮ বছর আগে আমি তোর পাশে ছিলাম।
শায়ন মুচকি হেসে বলে শালা আমি যানি তো তুই মুখে যাই বলিস না কেন তুই আমাকে ছেড়ে কখনো যাবি না।
আরিয়ান শান্ত ভাবে বলে , হয়েছে আর পাম দিতে হবে না এখন তোর বাড়ি চল আর কোথাও দারানোর দরকার নেই । শায়ন আর ও কিছুক্ষন তার হ্রিদয়ের রানী কে মন দিয়ে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু এখন তাকে যেতে হবে না হলে আবার আরিয়ান রেগে গেলে সমস্যা হতে পারে তাই মুচকি হাসি দিয়ে বল্লো চল।
এই কথা বলে তারা দুই জনেই বাড়ির দিকে রওনা হলো আর মিমো এখনো দাড়িয়ে ওকিলের সাথে কথা বলছে সে জানতে ও পারলো না এই অল্প কিছু সময়ে এক যুবক তাকে নিয়ে কতো কল্পনা - জল্পনা করে ফেলেছে।
খান বাড়ির বসার ঘরে সবাই বসে কথা বলছে। এমন সময় শায়ন ও আরিয়ান খান বাড়িতে প্রবেশ করলো তাদের দেখে আজমিন খান আরিয়ানকে কাছে ডেকে প্রশ্ন করলো ,
তুমি তোমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছ সে হটাত কাউকে কিছু না জানিয়ে দেশে চলে এসেছে আর হ্যা একটা কথা তোমায় বলে দেই আমি তুমি তাকে বলো আসছে ভালো করেছে কিছু দিন থেকে যেন দ্রুত চলে যায় আমি আবার কোন ঝামেলা চাই না।
নিজ স্বমীর এই কথা শুনে মাহমুদা বেগম সামান্য রেগে গেল এবং বল্লো , এতোদিন পর আমার ছেলে দেশে আসছে তুমি তার সাথে এভাবে কথা বলবে না আমার ছেলের যখন সময় হবে তখন সে ঠিকই ফিরে যাবে।
মা - বাবার কথা শুনে শায়ন বলতে শুরু করলো ,
প্রথমে আমাকে মাফ করবেন আব্বু - আম্মা আমি আপনাদের জানিয়ে দেই আমি আর ওই দেশে ফিরবো না আমি একবারে চলে এসেছি তাই বাহিরে যাওয়ার কথা আমাকে বলবেন না প্লিজ এবং আমার বেয়াদবি মাফ করবেন।
ছেলের কথা শুনে আজমিন খান ভড়কে গেল এবং বল্লো , যাবে কেন এতো কিছু করেও তোমার স্মাদ মিটেনি এখন আবার নতুন কি পরিকল্পনা নিয়ে দেশে এসেছ কে জানি শোন তুমি যা ইচ্ছা তা করো কিন্তু খেয়াল রেখ তোমার বাবার কিছু হলে ও সম্মান আছে দ্বিতীয় বার যদি তোমার জন্য আমার সম্মানে আঘাত আসে আমি কিন্তু এবার সম্মান কেই বাছবো তুমি কে আমাকে ভুলে যেতে বাধ্য করো না আর আরিয়ান তুমি ওকে বলে দাও ও যদি এই দেশ এই থাকতে চায় তাহলে কলকে থেকে ওকে আমার কোম্পানি জয়েন করতে বলো এন্ড এক মাসের ভিতরে আমি ওর বিয়ে দিব আমি আবার কোন অঘটন চাই না তোমরা যে যাই বলো আমি জানি ও কেন হটাত দেশে এসেছে আর কেন এই দেশ ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না।
শায়ন বাধা দিয়ে বল্লো সরি আব্বু আমি একটা পরিকল্পনা নিয়ে দেশে এসেছি আমি আমার বিজনেস করতে চাই আমি নিজের পায়ে দাড়াতে চাই আমি আশা করি আপনি বুজবেন
আজমিন সাহেব অবাক হলেন , তুমি যদি নিজের বিজনেস শুরু করো তাহলে আমার এতো বড় ব্যবসা কে খেয়াল রাখবে আর এই গুলো তো তোমারই।
শায়ন হালকা হেসে জবাব দিল , আমি জানি আব্বু আপনি এইগুলো আমার জন্যই করেছেন কিন্তু আমি ও চাচ্ছি প্রথম থেকে শুরু করতে ধাপে ধাপে এগোতে আমি ও চাই আপনি জীবনে যেমন বাধা বিপত্তি ফেস করেছেন আমিও এইসব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই আপনি সব কিছু একা করেছেন তাই যেই কোন সমস্যা আপনাকেই দেখতে হয়েছে কিন্তু আমি যানি আমার পাশে আপনি আছেন আমার যেই কোন বিপদে আমি আপনাকে কাছে পাবো তাই প্লিজ আমাকে বিজনেস করার পারমিশন দিন।
আজমিন সাহেব ছেলের কথায় সামান্য খুশি হলো তিনিও একজন ক্রিয়েটিভ মানুষ তাই তিনি তার ছেলেকে পারমিশন দিলেন কিন্তু সাথে একটা শর্ত ও দিলেন তিনি বল্লেন , তোমাকে আমি এক বছরের সময় দিচ্ছি তুমি যদি সফল হও তাহলে ভালো না হলে তোমাকে আমার বিজনেস জয়েন করতে হবে। এখন তোমরা ঘরে যাও আর আবার ও বলছি যাই করো আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিও না।
ঘরে এসে আরিয়ান শায়ন কে বল্লো তা তুই কি বিজনেস প্লেন করলি শুনি।
শায়ন বল্লো আমি আগেই জানতাম আমি যদি দেশে থাকার কথা বলি তাহলে আব্বা অবশ্যই আমাকে তার ব্যবসা জয়েন করতে বলবে সাথে বিয়ের জন্য ও প্রেসার দিবে কিন্তু আমি তো বিয়ে করলে একজনকেই করবো কিন্তু তার আগে আমার তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে তাই আমি বিজনেস শুরু করার কথা বলেছি কারন আব্বার কোম্পানি জয়েন করা মানে তার নজর বন্দি আমার ফ্রিডম না থাকলে আমি মায়াবতী কে কিভাবে রক্ষা করব তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম আর আমি জানি তুই আমাকে সাহায্য করবি।
আরিয়ান রাগ দেখিয়ে বল্ল , তুই কিভাবে জানিস?
জবাবে শায়ন একটি কথাই বল্ল , কারন তুই আমার বন্ধু যে।
আরিয়ান মুচকি হেসে জবাব দিল তুই আর মানুষ হবি না।
শায়র চোখ মেরে বল্ল সবাই মানুষ হয়ে গেলে যে অমানুষের কদর কমে যাবে দোস্ত।
আরিয়ান বলে তাহলে তুই আবার ও তার পিছে যাবি আচ্ছা আমি শুনেছিলাম মানুষ চোখের আড়াল হলে নাকি মনের ও আড়াল হয়ে যায় তাহলে এতো বছর সবার থেকে দুরে থেকেও কেন তুই মিমো কে ভুলতে পারলি না?
শায়ন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জবাব দেয় , যার বাস আমার হ্রদয়ে তাকে কি সহজেই ভোলা যায় আর যে দিন দেখবি আমি তাকে ভুলে গেছি সেদিন দেখবি আমার অস্তিত্ব ও বিলীন হয়ে যাবে আমার মাঝে আর আমাকে খুজে পাবি না।
আরিয়ান কপট বিরক্ত হয়ে বলে , আমার সবচেয়ে বড় ভুল তোকে কিছু বোঝানো আর সাহিত্য পড়ে তোর যেই অবস্থা তুই দিন দিন দেব দাস হয়ে যাচ্ছিস আমি তোর সাথে বেশি সময় থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাব তাই আমাকে ক্ষমা কর ভাই আমি চল্লাম।
শায়ন আরিয়ানকে আটকে বল্লো আমার একটা হেল্প করতে পারবি দোস্ত।
আরিয়ান শায়নের দিকে তাকিয়ে , যা বলার সোজাসাপটা বল।
জবাবে শায়ন , আমাকে কি মুশফিকের ফাইল টা জোগাড় করে দিতে পারবি এটা আর্জেন্ট তোর মামাকে একটু বলে দেখ না প্লিজ ভাই।
আরিয়ান ভেবে বল্ল , তুই যেহেতু বলেছিস আমি জোগাড় করে দিব কিন্তু এতো কিছুর পরেও এই কেসে তুই জড়াবি এটা কি ঠিক হবে আঙ্কেল যদি জানে আমি তোকে সাহায্য করেছি আমার কি হবে জানিস।
শায়ন জবাবে বলে , আমার একমাত্র শালা জেলে আর তুই আমাকে ভালো - মন্দের হিসাব শিখাস আর রইলো আব্বার কথা তাকে জানাবে কে আমার এই উপকার টা করে দে।
আরিয়ান ভেবে বলে আচ্ছা আমি দেখছি তাহলে তুই আবার তার মুখ মুখি হবি।
শায়ন মুচকি হেসে বলে হুম কিন্তু এইবার আর শায়ন হয়ে নয় এইবার SK হয়ে ভিন্ন রুপে ভিন্ন নামে তার ঢাল হবো আমি তার কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না।
আরিয়ান বলে ভাই তুই যা করবি ভেবে চিন্তে করিস তোকে আমি আরেকটু সময় দিলাম তুই ভাব আর বিকালে আমি ফাইল নিয়ে তোর সাথে দেখা করব এখন বাই।
শায়ন ও বলে বাই বেবী সাবধানে যাস।
সময়টা বিকাল ৩ টা ১৩ মিনিট এই সময় শায়নের ফোনে একটা কল আসল শায়ন ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত হতে সালাম আসলো শায়ন সালামের জবাবে ,
ওয়ালাইকুম সালাম রবি আপডেট কি?
উওরে রবি বলে , জ্বী ভাই আপডেট টা বেশি সুবিধা না আপনার সন্দেহই ঠিক ছিল ভাবির পিছনে শকুনের চোখ পরেছে বলতে পারেন ভাবি দিন দিন মাফিয়ার জালে আটকে যাচ্ছে এই জাল থেকে ভাবিকে জলদি মুক্ত করতে হবে না হলে হীতে বিপরীত ও হতে পারে।
শায়ন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে , আর বলিস না পাগলিটাকে কতো বলেছি সবাই কে নিজের মতো না ভাবতে এই দুনিয়াটা মুখোশধারী মানুষে ভরা কিন্তু ও আমার কথা শুনলে তো। আচ্ছা তুই কি কোন ক্লু পেয়েছিস কোন গ্যাং এর কাজ এটা হতে পারে?
জবাবে রবি বলে আসলে ভাই আমি শিওর না কিন্তু কিছু দিন আগে আমার কাছে খবর আসছিল মেয়র রাকিবের ভাতিজা আনোয়ার মোল্লা নাকি রাস্তায় ভাবিকে ডিস্টার্ব করেছিল ভাবি এর প্রতিবাদে সকলের সামনে আনোয়ারের গালে জুতার বাড়ি দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে ভাবি তার নামে নাকি মামলা ও করে ছিল ঘটনাটা পাবলিক প্লেসে হওয়ার কারনে মেয়র ও তার ভাতিজাকে সেভ করতে পারেনি আনোয়ারকে ৬ দিন জেলে থাকতে হয়েছিল পরবর্তীতে আনোয়ারের মায়ের অনেক কান্নাকাটির পর ভাবি কেস টা তুলে নেয় আমার মনে হয় এই জেদে মেয়র রাকিব ও তার ভাতিজা এই কাজ করতে পারে আর ভাই আমি আনোয়ারের ছেলেদের মুখে আরো একটা কথা শুনেছি আসলে আপনাকে কিভাবে বলি তা বুজতে পারছি না।
শায়ন রাগী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে এতো ধানাই পানাই না করে যা জানিস সোজা সাপ্টা বল।
রবি জবাবে , আসলে ভাই আমি শুনেছিলাম আনোয়ার নাকি তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শপথ করেছে যে সে নাকি ভাবিকে এক রাতের জন্য হলেও বিছানায়............ নিয়ে ছাড়বে।
শায়ন বাস্টার্ড বলে চিল্লান দিয়ে ওঠে এবং বলে , কুত্তার বাচ্চার এতো সাহস ও আমার কলিজা এই শায়ন খান এর কলিজার দিকে নজর দিয়েছে ও মনে হয় ভুলে গেছে আমার হ্রিদয় হরনী কে ছুতে গেলে প্রথমে আমাকে টপকাতে হবে। রবি এই কুত্তার বাচ্চাকে আর এই দুনিয়াতে রাখা যাবে না ও আমার ভালোবাসায় নজর দিয়েছে ওকে মরতে হবে রবি ওর কবর খোরার ব্যবস্থা কর আমি আসছি।
রবি ভয়ার্ত গলায় , ভাই বেয়াদবি মাফ করবেন আপনি চাইলেই আনোয়ারকে দুনিয়া থেকে গায়েব করে দিতে পারবেন কিন্তু পরে ভাবির ভাইকে এই কেস থেকে কিভাবে রক্ষা করবেন প্লাস আনোয়ারের মার্ডারে আপনি বা ভাবি যদি কেউ ফেসে যায় তাহলে বুজতে পারছেন কি একটা অবস্থা হবে। তাই আমি বলি কি ভাবির ভাইকে বের করার আগ পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরুন।
শায়ন একটু শান্ত হয়ে ওকে আমি আরিয়ান কে বলছি কেসের ফাইলটা আমাকে জোগাড় করে দিতে আমি ফাইল টা দেখি পরে তোকে জানাচ্ছি আর তুই তোর ভাবিকে চোখে চোখে রাখিস আজকে তো আমি তোর ভাবির আশে - পাশে তোকে দেখলাম না তুই আদৌ আমার মায়াবতীর খেয়াল রাখছিস তো?
রবি জবাবে বলে ভাই আপনার কি মনে হয় আপনি আমাকে না দেখলেও ভাবি কে দেখে আপনার যেই অবস্থা হয়েছিল সবটাই কিন্তু আমি দেখেছি আর আমি আপনাদের চোখে ইচ্ছে করেই পরিনি আমি দেখেছিলাম আরিয়ান ভাই আপনার সাথে ছিল ওনি যদি আমাকে দেখতো ভাবির আশে পাশে তাহলে বুঝে যেত যে গত আট বছর ভাবির ইনফোরমেশন আমি আপনাকে দিয়েছি তখন আমি বিপদে পরে যেতাম তাই আপনাদের সামনে আসি নি ভাই আপনি কোন চিন্তা করবেন না আমি থাকতে ভাবির কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
শায়ন বলে আমি তোকে আমার নিজের থেকেও বিশ্বাস করি আমি জানি আমার পরে যদি কেউ আমার মায়াবীনির খেয়াল রাখতে পারবে সে হলো তুই তাই তো আট বছর আমি নিশ্চিন্তে দুর প্রবাশে থাকতে পেরে ছিলাম আমি তোকে অনেক বিশ্বাস করি। তুই ভাই দেখ কোন প্রুভ নি জোগাড় করতে পারস আর আমি ও ফাইল পড়ে তোকে জানাচ্ছি ।
অপরপ্রান্ত হতে রবি বলে জ্বি ভাই তাহলে আজ রাখছি ফিআমানিল্লাহ ।
শায়ন জবাবে ফিআমানিল্লাহ বলে ফোন রেখে দেয়।
বিকাল প্রায় শেষ, গোধূলির নরম আলোয় শায়নের ঘরের জানালা দিয়ে কমলা রঙয়ের আভা এসে পড়েছে। আরিয়ানের যাওয়ার পর থেকে শায়ন মুশফিকের কেসের ফাইলটি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। রবি তাকে যে তথ্যগুলো দিয়েছে, তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আনোয়ার মোল্লার মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়া সহজ হবে না, কিন্তু তার প্রিয় মানুষটিকে রক্ষা করার জন্য শায়ন যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।
হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে আরিয়ানের নাম দেখে শায়নের মুখে হাসি ফুটে উঠল। 'কিরে, ফাইল পেয়েছিস?' শায়নের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর শুনে আরিয়ান একটু হাসল। 'আস্তে কথা বল, আমি তোর বাড়ির সামনে। ফাইলটা নিয়ে এসেছি, কিন্তু ভেতরে ঢোকার আগে তোকে কিছু কথা বলতে চাই।'
শায়ন দ্রুত দরজা খুলে বাইরে এলো। আরিয়ান তাকে দেখে কিছুটা হতাশ স্বরে বলল, 'ভাই, তুই কি জানিস আমার মামা এই কেসটা লড়তে চাইছিল না? তিনি বলেছেন এটা একটা খুব জটিল কেস, যেখানে ড্রাগস আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব জড়িয়ে আছে। তিনি অনেক অনুরোধের পর শুধু আমার জন্য ফাইলটা দিয়েছেন, তাও শর্ত দিয়েছেন যে তোর বাবাকে যেন কোনোভাবেই এই বিষয়ে কিছু বলা না হয়।'
শায়ন ফাইলটা হাতে নিয়ে বলল, 'ধন্যবাদ বন্ধু, তুই জানিস না আজ তুই আমার জন্য কতটা বড় উপকার করলি।' ফাইলটা খুলতেই শায়নের চোখ আটকে গেল। মুশফিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খুবই গুরুতর, এবং কেসটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন সে কোনোভাবেই নির্দোষ প্রমাণ হতে না পারে। সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল সাজানো।
ফাইলটা পড়তে পড়তে শায়ন বুঝতে পারছিল যে শুধুমাত্র আইন দিয়ে এই কেস জেতা সম্ভব নয়। এর পিছনে যারা আছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হলে তাকে ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে হবে। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে সে বলল, 'এই কেসটা শুধু আইন দিয়ে লড়া যাবে না, দোস্ত। এর জন্য দরকার ভিন্ন কৌশল।'
আরিয়ান শায়নের দিকে তাকিয়ে বলে তুই কি বলতে চাস ডিরেক্ট বল ঘুরানো পেচানো কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যায়।
শায়ন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে দোস্ত তোকে এখন আমি যা বলব তোর তা করতে হবে আর তুই আমাকে প্রমিস কর তুই আমাকে কোন প্রশ্ন করবি না।
আরিয়ান সামান্য ভেবে বলে আমি তোর সাথে সবসময় এই আছি তুই বল কি করতে হবে।
শায়ন আরিয়ানের হাতে একটা কালো চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলে এটা মিমোর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা কর আর তোর বিশ্বাস যোগ্য ছেলে দের বল মেয়র রাকিব ও তার ভাতিজা আনোয়ার মোল্লার দিকে নজর রাখতে।
আরিয়ান শায়নকে প্রশ্ন করে , তুই কি করতে চাচ্ছিস আমাকে একটু পরিষ্কার করে বল ভাই?
জবাবে শায়ন বলে তোকে তো আমি আগেই বলেছি কোন প্রশ্ন করিস না সময় হলে ঠিক আই সব জানতে পারবি।
আরিয়ান বলে কি আর করা তোর বন্ধু হয়েছি এই ভুলের মাশুলতো দিতে হবেই আচ্ছা আমি তোর কাজ গুলো করে দিবো এই কথা বলে আরিয়ান চলে গেল শায়ন ও বিছানায় বসে ফাইলটা ভালো করে দেখছে।
সময়টা ৭ টা ৯ মিনিট ছাদে দারানো মিমো হাতে তার শায়নের চিঠি এই চিঠিটা কিছুক্ষণ আগে একটা বাচ্চা তাকে দিয়ে গেছে এখন সে ছাদে দাড়িয়ে চিঠিটা পড়া শুরু করলো যেখানে লিখা ছিলো ,
আমার না হওয়া ভালোবাসা তুমি আমার হাজারো ছোট বড় সুখের কারন কিন্তু আজ যখন তোমেকে ক্লান্ত ও অসহায় দেখলাম তখন আমার অনেক ইচ্ছে করছিল আমি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলি আমার মায়াবতী আমি থাকতে তুমি এতো চিন্তা কেন করছো তোমার সকল দু:খ আমি শুষে নেই কিন্তু আফসোস দেখ এই অধিকার টা তো তুমি কখনো আমাকে দাও নি রাস্তার পাশে তোমাকে এভাবে দেখে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল তুমি একটি কথা সবসময় মনে রাখবে তোমার হাসি চেহারেটা দেখে কোন একজন অনেক দুরে সুখে থাকে তুমি তার সুখটা নষ্ট করো না প্লিজ আর যে তোমার শান্তি নষ্ট করেছে তার পিছনে এখন আমি লাগবো আর তুমি কোন চিন্তাই করো না আমি মুশফিককে বাহির করার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু তুমি আমাকে একটা ওয়াদা করো তুমি এখন থেকে আর উদাস থাকবে না প্লিজ তোমার হাসি দেখার জন্য আমি এই পুরো দুনিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে পারি। তাই একবার আকাশের চাদের দিকে তাকিয়ে হাস আমি একটিবার দেখি কোন চাদটা বেশি সুন্দর।
ইতি তোমার
SK...
চিঠি পরে মিমো মিমো খানিকটা অবাক হলো এবং ভাবছে কে তাকে এই চিঠিটা দিল কে তাকে এতো নিখুঁতভাবে ভালোবাসে কে এই SK কিন্তু কোন জবাব পেল না কিন্তু এই চিঠিটা পরে তার মনে হচ্ছে তার হ্রিদয়ের কষ্ট গুলো কিছুটা হালকা হলো তাই সে চাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল তা আবার রাস্তার অপর প্রান্তে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দেখছিল মিমোকে হাসতে দেখে এখন সে একটু রিলাক্স হয়েছে পাশে থাকা রবি কে বল্লো একটা কাজতো হলো এখন তুই আমাকে আনোয়ারের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা কর।
জবাবে রবি বলে ভাই আপনি এখনি তার সামনে গেলে পরবর্তীতে সে সাবধান হয়ে যাবে তখন ভাবির ভাইকে বাচানো মুশকিল হয়ে যাবে।
শায়ন কিছুটা ভেবে বলে মেয়র রাকিবের একটা শালা আছে না কি জানি নাম তার
রবি ছোট করে জবাব দেয় ইয়াছিন।
শায়ন বলে মালটাকে তোলার ব্যবস্থা কর।
রবি শায়নের দিকে তাকিয়ে ভাই আপনি কি করতে চাচ্ছেন।
শায়ন মুচকি হেসে ওই কুত্তার বাচ্চা আমার শালাকে জেলে পাঠিয়েছে তাহলে ওর শালা কেন বাহিরে ঘুরবে ওর শালাকেও তো বন্দি হতে হবে আর ওকে বন্দি করবো আমি।
রবি কিছুটা ভয়ার্ত হয়ে বলে , ভাই যদি আপনার আব্বা জানতে পারে তাহলে আমাকে জ্যান্ত কবর দিবে।
শায়ন জবাবে বলে এই নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না তোকে যা বলছি তাই কর আর হ্যা আমার এই কার্ডটা রাখ এটার পিন ১৪০৯ যা যা প্রয়োজন হবে এই কার্ড থেকে খরচ করবি আর রাকিবের শালাকে তোলে আমাকে খবর দিবি বাকি ডিল আমি করব।
রবি বলে ভাই কার্ডের কোন দরকার ছিল না আর ভাই কার্ডের পিন টা কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে।
শায়ন মুচকি হেসে বলে হুম পরিচিত মনে হওয়াটাই স্বভাবিক তোর ভাবির বার্থডেট।
রবি জবাবে বলে জ্বি ভাই তাই পরিচিত মনে হচ্ছিল আচ্ছা ভাই আপনি কোন টেনশন করবেন না আমি ইয়াছিন কে তোলার ব্যবস্থা করছি পরে আপনাকে জানাবো।
শায়ন বলে তুই টেনশন করিস না তোর সাথে আমি সব সময় আছি।
জবাবে রবি বলে ভাই আমি জানি আপনি সবসময়ই আমার পাশে ছিলেন এবং থাকবেন আমার বাবা মারা যাওয়ার পর যখন সব আত্মীয় স্বজনরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তখন আপনি আমাদের পাশে ছিলেন এবং এখনো আছে এই ঋন আমি কখনো শোধ করতে পারবো না যদি কোন দিন আপনার আমার জীবনের প্রয়োজন হয় আমাকে জানাবেন আমি হাসতে হাসতে আমার জীবন দিয়ে দিব।
শায়ন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বলে দেখ রবি তুই আমার ভাই আমি সবসময়ই তোকে আমার আপন ছোট ভাই মনে করি আমি যদি এই দুনিয়াতে কাউকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি তাহলে সে একমাত্র তুই আর মনে রাখবি তুই আমার অনেক বড় একটা হাতিয়ার তোকে হারানোর কথা আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারবো না কারন আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কাছের মানুষ গুলোকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোর তাই তুই কখনো মরার কথা বলবি না এখন যা যেই কাজ দিসি ওইটা কর বেশি ইমোশনাল হওয়ার দরকার নেই।
রবি হালকা সম্মতি জানিয়ে বিদায় নেয়।
শায়ন দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো এই সেই ছোট্ট রবি যার জন্মের সময়ই তার মা মারা যায় আর বাবা যখন মারা যায় তখন তার বয়স কতো আর হবে ১৪-১৫ বছর তখন সে ক্লাস এইটে পড়ে । ছোট্ট রবির সাথে সবসময়ই শায়নের ভালো সম্পর্ক ছিল মা-বাপ হারা ছেলেটার প্রতি শায়নের ভীষণ মায়া হতো কিন্তু যখন সে জানতে পারলো তার চাচারা বাবার জমি দখলের জন্য তাকে মিত্যা চুরির অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে সারা রাত বেধে রেখেছিল এবং সকালে পুলিশে খবর দিছিল তখন শায়ন তার বাবাকে বলে রবিকে বাচিয়ে ছিল পুলিশের হাত থেকে বাচালেও রবির চাচারা রবিকে বাড়িতে ওঠতে দেয় নি রবিকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেয় পরবর্তীতে শায়ন ছোট্ট রবির দায়িত্ব নেয় তাকে ভালো বোডিং এ রেখে লেখা পড়া করায় এবং এখন সে একজন শিক্ষিত ও ভালো মনের মানুষ যে শায়নের কথায় চোখ বন্ধ করে যেই কোন কাজ করতে পারে। এইযে এই আট বছর শায়ন ছিল না তবুও তার ভালোবাসার মানুষ গুলোর রবি খেয়াল রেখেছে সকল আপডেট শায়নকে জানিয়েছে শায়ন ও রবি কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। শায়ন এই কথা গুলো ভাবছিল এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তার আব্বা কল দিয়েছে কল রিসিভ করে সালাম জানালো।
অপর প্রান্ত হতে আজমিন খান সালামের জবাব দিয়ে বলে কোথায় আছ তুমি কয়টা বাজে এখনো বাড়ি আসোনি কেন জলদি বাসায় আসো I am waiting for you come fast বলে ফোন রেখে দেয়।
সগায়ন ও ঘড়িতে তাকেয়ে দেখে ৯ টা ৪৫ বাজে কিভাবে যে এতোটা সময় চলে গেল সে বুজতে পারে নি তাই সে দ্রুত বাড়ির পথে রওনা দেয়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই আজমিন সাহেব বলেন এতোক্ষন কোথায় ছিলে।
জবাবে শায়ন বলে একটু রবির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আব্বু বিজনেস এর বিষয়ে কথা বলতে।
আজমিন প্রশ্ন করে তো কি কথা বল্লে কবে স্টার্ট করবে?
শায়ন জবাবে বলে ভাবছি সব গুছিয়ে নিতে ১-১.৫ মাস লাগবে তাই ২ মাস পরে আমার অফিস স্টার্ট করবো।
আজমিন বলেন আচ্ছা দেখ কি করবে তোমার হাতে ১ বছর সময় আছে ১ বছর মানে ১ বছর। এখন খেতে বসো।
শায়ন খাবার খেয়ে নিজ রুমে গিয়ে ভাবছে কিভাবে কি করবে সময় ও কম এতো কিছু সে কিভাবে সামলাবে এই গুলো ভাবভাবতে কখন চোখ লেগে গেছে জানা নেই তার চোখ খুললো ফজরের আজান শুনে অলসতা ভেঙ্গে বিছানা থেকে ওঠে নামাজ পরে তার পর বাহিরে বের হয় হাটার জন্য। কিছুক্ষন হাটা - হাটি করার মধেই রবি কলদেয় শায়ন কে কল দিয়ে বলে ভাই কাজ হয়ে গেছে ইয়াছিন কে আমি তুলে নিয়ে এসেছি এই কথা শুনে শায়ন বলে তুই লোকেশন পাঠা আমি আসছি বলে ফোন কাটতে কাটতে অপর প্রান্ত হতে রবি লোকেশন পাঠিয়ে চিয়েছে।
শায়ন দ্রুত পায়ে হাঁটা শেষ করে আবার ঘরের পথে রওনা হলো। রবির পাঠানো লোকেশন তার মাথায় গেঁথে আছে। ইয়াছিনকে তুলে আনাটা ছিল তার প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি চাল, মিমোকে বিপদমুক্ত করার এক ধাপ। কিন্তু এই কাজে কোনো ভুল করা চলবে না। এখন সে SK, একজন ব্যবসায়ী যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছে, কিন্তু একই সাথে সে মিমোর ঢাল। দুটো পরিচয়কে তাকে সাবধানে সামলাতে হবে।
খান বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকার সময় শায়নের মনে হলো তার বাবা আজমিন খান যেন তার প্রতিটি পদক্ষেপে নজর রাখছেন। বাবার শর্ত আর আরিয়ানের সতর্কতা, দুটোই যেন তাকে তাড়া করছে। সে জানে, এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে বড় শত্রু নিয়েও তার কোন ভয় নেই রয়েছে শুধু তার নিজের পরিবারের চোখে সম্মান হারানোর ভয়।
রবি যে লোকেশন পাঠিয়েছিল, সেটা শহরের বাইরে একটা পরিত্যক্ত গুদামঘর। শায়ন সেখানে পৌঁছাল তার কালো মার্সিডিজ নিয়ে, কিছুটা দূরে নেমে বাকি পথ হেঁটে গেল। ভোরের আলো পুরোপুরি ফোটেনি, চারদিকে একটা রহস্যময় স্তব্ধতা। গুদামঘরের কাছে আসতেই রবিকে দেখতে পেল, চাপা উত্তেজনা নিয়ে সে দরজার কাছে পায়চারি করছে।
"ভাই," ফিসফিস করে বলল রবি, "সব ঠিক আছে। ইয়াছিন ভেতরে। তবে জ্ঞান ফেরেনি এখনও।"
শায়ন ঘাড় নেড়ে ভেতরে ঢুকল। গুদামঘরের কেন্দ্রে একটা চেয়ারে শক্ত করে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে ইয়াছিন, মেয়র রাকিবের সেই দুর্ধর্ষ শালা। শায়নের চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। এখানে কোনো আবেগ দেখানো চলবে না। এটা একটা খেলা, আর শায়ন জানে কখন কোন পাশা ফেলতে হবে।
"কখন জ্ঞান ফিরবে?" শায়ন শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
"আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে," রবি জবাব দিল। "আমি অল্প ডোজ দিয়েছিলাম।"
শায়ন চারপাশে একবার চোখ বুলাল। "শোন রবি, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। তুই ভেতরে থাক । যখন জ্ঞান ফিরবে, আমাকে খবর দিবি। একটা কথা মনে রাখবি - তুই বা আমি কেউ ওকে ছুঁইনি। আমরা ওকে শুধু 'কথা বলার' সুযোগ করে দিয়েছি।"
রবি মাথা নেড়ে তার প্রতিজ্ঞা জানাল। "চিন্তা করবেন না ভাই, কেউ কিচ্ছু জানবে না।"
শায়ন গুদামঘরের পেছন দিকে, যেখানে আবছা অন্ধকারে একটা পুরোনো গাড়ি রাখা ছিল, সেখানে গিয়ে বসল। এখন অপেক্ষা, ইয়াছিনের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা। এই অপেক্ষা কেবল একটা ডিল করার জন্য নয়, এই অপেক্ষা মিমোর জন্য, মুশফিকের মুক্তির জন্য, আর শায়নের নতুন জীবনের গোড়াপত্তনের জন্য।
শায়নের মনে হচ্ছিল সময় যেন থমকে আছে। এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল—আরিয়ানের কল।
"কিরে, এত সকালে বাইরে কেন?" আরিয়ানের কণ্ঠে রাজ্যের উদ্বেগ। "আমি তোর ঘরে এসেছিলাম, দেখি তুই নেই। তোর বাবা জিজ্ঞেস করছে কোথায় গেলি এত সকালে?"
শায়ন নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল, "আরে! একটু ব্যবসার কাজে বের হলাম। একটা সাপ্লায়ারের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। তুই চিন্তা করিস না, আব্বাকে বলিস আমি একটু পরই ফিরছি।"
আরিয়ান ইতস্তত করে বলল, "শোন, আমি একটা কথা জানতে পেরেছি... কাল তুই যে কালো চিরকুটটা মিমোকে দিয়েছিস, সেটা নিয়ে ওর উকিলকে সন্দেহ করতে দেখেছে আমাদের লোক। উকিল নাকি খুব চিন্তিত। তোর মনে হয় না এই SK-এর ব্যাপারটা একটু বেশি দ্রুত হয়ে যাচ্ছে?"
শায়ন হাসল। "দরকার ছিল বন্ধু। ওকে জানতেই হবে যে ও একা নয়, ওর ঢাল হয়ে কেউ একজন আছে। আর উকিল? সে তো কেবল তার কাজ করবে। এই খেলায় মিমো শুধু একটা গুটি নয়, ও হলো দাবা বোর্ডের রানী। আমি চাই না কেউ আমার রানিকে ছুঁতে সাহস পাক। তুই চিন্তা করিস না, তুই শুধু নজর রাখ। আর কোনো প্রশ্ন করিস না।"
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "তোর সব কিছুতেই রহস্য। ঠিক আছে, আমি তোর বাবার কাছে যাচ্ছি। তুই সাবধানে থাকিস।"
ফোন রেখে শায়ন আবার গুদামঘরের দিকে তাকাল। প্রথম ধাপ সফল, কিন্তু আসল কাজটা এখন বাকি। ইয়াছিনের সাথে তার ডিলটা কেবল একটা জিম্মি মুক্তি নয়, এটা ছিল তার নিজের ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়ার শুরু এই সব ভাবতে ভাবতে রবি বাহিরে এসে জানালো ইয়াছিনের জ্ঞান ফিরেছে শায়ন রবিকে বল্লো তুই সব সেটআপ কর আমি আসছি বলতেই রবি ভিতরে চলে গেল শায়ন ও রবির পিছু পিছু গোদামে গিয়ে ইয়াছিনের মুখোমুখি চেয়ারে বসল এবং ইয়াছিন কে তার পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন শুরু করল ,
ইয়াছিন তুই আমাকে চিনবি না আবার চিনতেও পারিস আসলে তোর সাথে আমার তেমন দেখা হয়নি কখনো আমার নাম SK দেখ তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই তাই আমি তোকে মেরে আমার হাত নষ্ট করতে চাই না আমার কিছু ইনফরমেশন দরকার সে গুলো যদি তুই আমাকে ভালোভাবে দিয়ে দিস তাহলে তোর জন্য ও ভালো আমার জন্য ও ভালো আমাকে পরিশ্রম কম করতে হবে আর তুই যদি কোন তেড়ামি করিস তাহলে আমাকে আমার হিংস্র রুপটা দেখাতে হবে তাই প্লিজ আমার ধৈয্যের বাধ ভাঙ্গিস না।
উত্তরে ইয়াছিন একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে শালা তুই মনে হয় জানিস না আমার দুলাভাই কে আমার দুলাভাই এই শহরের মেয়র আর আমি তার শালা তুই কি ভাবছিস তুই আমাকে ভয় দেখাতে পারবি তুই আমার একটা বাল ও ছিরতে পারবি না।
এই কথা বলার সাথে সাথে শায়ন ইয়াছিনের নাক বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে বসে আর বলতে শুরু করে ,
তুই আমাকে তোর সোকল্ড দুলাভাইয়ের পাওয়ার দেখাইস না এই সব পাওয়ার এই SK প্রতিদিন ২-৩ বার টয়লেটে ফ্লাশ করে আর তোর কি মনে হয় আমি যদি তোকে তোর দুলাভাইয়ের হাতের নিচ থেকে কিডন্যাপ করতে পারি তাহলে আর কি কি যে করতে পারি তা তুই কল্পনা ও করতে পারবি না আর তুই তোর দুলাভাইয়ের পাওয়ার দেখাচ্ছিস তুই আমার পাওয়ার কি জানিস তা হল আমার ভালোবাসা আর তোরা আমার ভালোবাসার দিকে নজর দিয়েছিস তোরা ভাবতেও পারবি না আমি আমার কলিজার জন্য কতোটা ভয়ংকর হতে পারি তাই ভালো ভাবে বলছি তুই আমাকে বল তোরা মুশফিককে কেন ফাসিয়েছিস আর কিভাবে ফাসিয়েছিস।
এবার ইয়াছিন আরো বিকৃত হাসি দিয়ে বল্লো ও তাহলে এই ব্যপার এই সামান্য একটা মেয়ে ও তার ভাইয়ের জন্য তুই আমাদের সাথে লড়াই করবি তোর কি মনে হয় তুই একা আমাদের সাথে লড়াই করে পেরে ওঠবি কখনো না এখনো বলছি আমাকে ছেড়ে দে আমি ভাইজান কে বলবো তোকে সহজ মৃত্যু দিতে আর আমি যানি তোরা আমার একটা চুল ও ছীড়তে পারবি না আমার কিছু হলে ভাইজান এই পুরো শহরে আগুন জালিয়ে দিবে আর তোদের আমাকে প্রয়োজন তাই তোরা আমাকে কিছুই করবি না।
শায়ন এইবার একটা হিংস্র হাসি দিয়ে বল্ল এটা তোর ভুল ধারনা বলে সাথে সাথে পকেট থেকে ছুরি বের করে ইয়াছিনের পায়ে আঘাত করে বসল এতে যতোটা অবাক ইয়াছিন হয়েছে তার থেকে বেশি শক হয়েছে রবি শায়ন যে হটাৎ এমন কোন কাজ করবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ছুরির আঘাতে ইয়াছিন বিকট চিল্লান দিয়ে বসে তার চিল্লানো দেখে শায়ন হাসতে হাসতে বলে তুই ঠিক এই বলেছিস ইনফরমেশন এর জন্য তোকে বাচিয়ে রাখতে হবে কিন্তু এর জন্য তোর প্রান আর মুখটা ঠিক থাকলেই হবে তোর অন্য কোন অঙ্গ আমার কোন কাজে আসবে না তাই তুই মুখ খুলতে যত দেরি করবি ততই তোর এক এক করে অঙ্গ কাটা হবে যখন তুই আর সহ্য করতে না পারবি তখন ঠিকই ইনফরমেশন দিবি তাই বলছি একটু ভেবে দেখ আর আমি ২ ঘন্টা পরে আবার আসছি তোখন এসে যদি আমার হিংস্র রুপটা আবার বের করতে হয় তাহলে আমি তোকে আশ্বাস দিতে পারি না যে আমি তোকে বাচিয়ে রাখব। এই কথা বলে শায়ন রবিকে নিয়ে গুদাম থেকে বের হয় এবং রবি কে বলে আমি বাসায় যাচ্ছি আব্বা জান আমাকে খুজছে বেশি দেরি করলে আবার আমার বাপের সন্দেহ হতে পারে তুই ৫ মিনিট পর পর শালাকে টর্চার করা শুরু করবি আমার এসে যেন কোন ইনফরমেশন বের করতে না হয় আমি যেন এসে সব ইনফরমেশন রেডি পাই আর খুব সাবধান। বলে শায়ন বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।
সময় ৯ টা ১২ মিনিট শায়ন খান বাড়িতে প্রবেশ করলো সাথে সাথে তার পথ আটকে দারালো আজমিন খান এবং শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো কোথায় ছিলে তুমি ,
জবাবে শায়ন বলে আব্বা এইতো একটু বিজনেস নিয়ে কিছু প্লেন পরিবর্তন করার ছিল তাই সকাল সকাল একটা মিটিং করেছি তাই আমার একটু লেট হলো ।
আজমিন সাহেব শায়ন কে বলে তোমার কাজের প্রতি তোমার ডেডিকেশন ভালো কিন্তু এর জন্য তুমি তো অনিয়ম করতে পারো না তাই বলছি নিজের প্রতি ও খেয়াল রেখ আর আমি তোমাকে আরেকবার বলছি উল্টা পাল্টা কিছু করো না এইবার যদি কোন ভুল করো তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না এটা মনে রাখবে। এখন যাও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হও তোমার নাস্তা ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে আজমিন সাহেব চলে গেলেন।
শায়ন ও আর লেট করলো না সে ও তার রুমে চলে গেছে।
সময়টা সকালের প্রায় শেষের দিকে মিমো দাড়িয়ে আছে জেলখানার সামনে তাকে ভিতরে ডুকতে দিচ্ছে না ভিতরের কর্মরত অফিসার তাকে জানালো যে ড্রাগ কেসে হওয়ায় তার ভাইয়ের সাথে সে ঘন ঘন দেখা করতে পারবে না। কিন্তু মিমো কারো কথা শুনতে নারাজ সে একটি বার তাই ভাইকে চোখের দেখা দেখতে চায়। দেখতে চায় মুশফিক কেমন আছে কিন্তু তার কথা কেউ শুনছে না তার আকুতি - মিনুতির ও কোন দাম নেই কারো কাছে কিন্তু সে তো আর জানে না দুর থেকে দুটি চোখ তার এই করুন অবস্থা দেখছে আর তার থেকে ও বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তার মায়াবতীকে এভাবে ভেঙে যেতে দেখে সে নিজেও ঠিক থাকতে পারছে না তাই সে কল করলো মহিমাকে যে মেয়েকে শায়ন দুচোখে সহ্য করতে পারে না যার সাথে শায়ন কখনো কথা বলেনি আজ মিমোর জন্য সে ওই মহিমাকেই কল দিল প্রথম কল কেটে গেল কেউ রিসিভ করলো না তাই দ্বিতীয় বার কল দিল এইবার রিসিভ করে অপর পাশ থেকে প্রশ্ন করলো হ্যালো কে?
জবাবে শায়ন বল্লো হ্যালো মহিমা আমি শায়ন।
আমাকে হটাৎ ফোন করার কারন জানতে পারি জিজ্ঞেস করলো মহিমা।
শায়ন শান্ত ভাবে জবাব দিল মহিমা আমার একটা হেল্প দরকার আর আমি জানি যদি এই মুহূর্তে কেউ আমাকে হেল্প করতে পারে সেটা একমাত্র তুমি প্লিজ আমার একটা উপকার করবে।
মহিমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বল্লো কি দ্যা গ্রেট শায়ন খান আমার কাছে সাহায্য চাচ্ছে এতোটা অসহায় তুমি কিভাবে হলে SK আর তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে সাহায্য করবো।
শায়ন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে জীবনের প্রথম আমি তোমার কাছে কিছু চাচ্ছি মহিমা প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
মহিমা বল্লো আমিও কোন একদিন তোমার কাছে তোমাকে চেয়েছিলাম সেদিন কি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাওনি তাহলে আমি যদি তোমাকে ফিরিয়ে দেই বিষয়টা কি খুব বেশি খারাপ হবে বা আমি যদি বলি আমি তোমাকে সব বিষয়ে হেল্প করবো বিনিময়ে আমার তোমাকে চাই তুমি কি আমার হবে।
শায়ন সামান্য হেসে বলে তুমি জান এটা কখনো সম্ভব না তবুও আমি তোমার কাছে হেল্প চাচ্ছি আমার মায়াবতী তার ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলখানার সামনে দাড়িয়ে আছে হাজার আকুতির পরে ও গার্ডরা তাকে ভিতরে যেতে দিচ্ছে না তুমি যদি একবার আঙ্কেল কে বলে তাকে ভিতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে আঙ্কেল তো একজন আইজি ওনার কথা কেউ ফেলতে পারবে না আমার এই উপকারটা করো আমি ওকে দেখতে পারছি না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ ওর ভাই নির্দোষ এটা খুব শীঘ্রই আমি প্রমান করে দিব ওর নাম মিমো এই বারের মতো আমার হেল্প করো না আমি তোমার এই উপকার কখনো ভুলবোনা।
কথা শুনতে শুনতে মহিমা ফোন কেটে দিয়েছে আর ভাবছে কে এই মিমো যেউ SK মহিমার দিকে কখনো তাকিয়ে দেখেনি কখনো তার সাথে কোন কথা বলেনি মহিমা যখন SK কে প্রপোজ করেছিল তখন SK ডিরেকট না করে দিয়েছিল ওই ঘটনার পর শায়ন কখনো মহিমার আশে পাশে ও থাকতো না কিন্তু আজ ওই মেয়ের জন্য শায়ন নিজে কলদিয়ে তাকে এতো রিকুয়েষ্ট করছে। মহিমা প্রথমে হেল্প করার কথা মানা করলেও পরবর্তীতে শায়নের অসহায়ত্ব ও কষ্ট দেখে হেল্প না করে পারলো না সে সাথে সাথে তার বাবাকে কল দেয় এবং পরিস্থিতির কথা জানায়।
মিমো এখনো জেলখানার সামনে দাড়ানো উত্যক্ত রোদে সে চোখে অন্ধকার দেখছে কিন্তু তবুও সে একটিবার তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চায়। এর মধ্যেই ভিতর থেকে একজন গার্ড এসে মিমোকে ভিতরে নিয়ে গেল। ভিতরে প্রবেশ করতেই ডিউটি অফিসার মিমো কে বল্লো , ম্যাডাম আপনি আইজি স্যার কে জানেন এটা আমাদের বল্লেই তো আমারা আপনাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমুতি দিয়ে দিতাম কিন্তু আপনি এই সামান্য ঘটনার জন্য আইজি স্যার কে কল না দিলেও পারতেন। সব ঘটনা মিমোর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে এই নিয়ে খুশি যে সে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পেরেছে। মুশফিকের সাথে দেখা করে মিমো কারাগার থেকে বাহিরে আসা মাত্রই মিমোর দিকে একটি ছোট মেয়ে দৌড়িয়ে আসছে এবং তার হাতে একটি চিঠি ও গোলাপ দিয়ে চলে গেছে। মিমো চিঠি টা নিয়ে পরতে শুরু করল ,
আমার প্রিয় মায়াবতী আমি থাকতে যখন দেখি তুমি কষ্ট পাচ্ছ তখন আমার কলিজাটা মুচোর দিয়ে ওঠে আমি থাকতে যদি তোমাকে অসহায় হতে হয় তাহলে কি তোমাকে ভালোবাসাই আমার বৃথা তুমি আমার পবিত্র ফুল আমি থাকতে তোমার দিকে কেউ আঙুল তোলার ও সাহস পাবে না। জানো আজ তোমার জন্য আমাকে কারো কাছে অসহায়ের মতো রিকুয়েষ্ট করতে হয়েছে কিন্তু এতে আমার কোন আফসোস নেই কারন তোমার মুখে এখন যেই হাসিটা আছে এই হাসির জন্য আমি আমার জীবন ও দিতে পারি। শোন তুমি একটা কথা সবসময় মনে রাখবা তোমার লড়াইয়ে তুমি একা না আমি তোমার সব লড়াইয়ে তোমার ডাল হয়ে তোমার পাশে আছি এবং থাকবো। তুমি এইটুকু বিশ্বাস আমাকে করতে পারো আমি থাকতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না আমি মুশফিককেও খুব তাড়াতাড়ি বাহিরে আনার ব্যবস্থা করছি। তুমি নিশ্চন্তে থাক আর নিজের যত্ন নিউ তুমি জান না তোমায় হাসি খুশি দেখলে আমি কতোটা শান্তি পাই আর তোমার ওই কাজল দেওয়া চোখের জন্যতো আমি পুরো পৃথিবীতে আগুন লাগিয়ে দিতে পারি কিন্তু ইদানিং তুমি আর চোখে কাজল পড়ো না তুমি কি আমার জন্য আরেকটি বার চোখে কাজল পরবে।
ইতি
তোমার ছায়ামূর্তি
SK
চিঠি পড়ে মিমো হতবাক হয়ে গেছে তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না এখন তার ও SK কে দেখার ইচ্ছা হচ্ছে কে এইভাবে তাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসে। মিমো এখন বাড়ির পথে রওনা দিলো সিএনজি করে।
শায়ন মিমোর যাওয়ার পথে চেয়েছিল এমন সময় তার ফোনে কল আসলো শায়ন দেখল কলটা মহিমা করেছে সে কলটা রিসিভ করলো এবং বল্লো অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমার এই উপকার করার জন্য।
অপর পাশে মহিমা বলে আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না তুমিতো জানো আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। আচ্ছা তুমি কি মিমোর একটা ছবি আমাকে দিতে পারবে আসলে আমি দেখতে চাই কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই।
শায়ন মুচকি হেসে জবাব দেয় , তার বিশেষত্ব দেখতে হলে তোমার আমার চোখ গুলো লাগবে কারন এই দুনিয়ায় আমার চোখ ব্যতিত কেউ মনে হয়না তার বিশেষত্ব দেখতে পারবে আচ্ছা তবুও আমি তোমাকে তার একটি ছবি দিব কিন্তু তোমাকে আমায় প্রমিস করতে হবে যে তার ছবি তুমি আর কাউকে দিবে না আর সে যদি কখনো তোমার সাথে যোগাযোগ করে তুমি তাকে বলবে না যে SK আসলে আমি।
তার জন্য তুমি এতো কিছু করছো আবার তার থেকে তোমার পরিচয় ও গোপন করছ তুমি চাচ্ছটা কি মহিমা জানতে চায়।
শায়ন জবাব দেয় আমি এতোতারাতারি তার কাছে ধরা দিতে চাই না আমি জানি তুমিও তাকে আমার পরিচয় দিবে না। বাই বলে শায়ন ফোন রেখে দেয় এবং ইয়াছিনের সাথে দেখা করার জন্য গোদামের উদ্দেশ্যে তার মার্সিডিজ নিয়ে রওনা দেয়। গোদামের সামনে আসতেই দেখে রবি হাত - মুখ ধুচ্ছিল।
শায়ন রবিকে জিজ্ঞেস করলো , ইয়াছিন মুখ খুলেছে।
না ভাই জবাব দিল রবি আরও বল্লো ভাই ইয়াছিন আপনার সাথে দেখা করতে চায় মনে হয় ও আপনাকে কিছু বলবে।
এই কথা শুনে শায়ন গুদামের ফিতরে প্রবেশ করলো এবং ইয়াছিনের সামনে চেয়ার টেনে বসলো এবং বললো তুই নাকি আমাকে খুজছিস।
জবাবে ইয়াছিন বলতে শুরু করলো , আসলে তুই আমার থেকে যা জানতে চাস আমি তার কিছুই জানি না কিন্তু তোকে আমি একটা খবর দিতে পারি এই শহরে বড় বড় সব ড্রাগ
ডিল আমার দুলাভাইয়ের ভাতিজা আনোয়ার মোল্লা করে থাকে এবং কাল রাতে ৮ টা ৩৫ এ গুরুস্থানের পিছে মনে হয় বড় কোন ড্রাগডিল হবে। এই ছাড়া আমি আর কিছু জানি না প্লিজ এখন আমাকে যেতে দিন আমি কাউকে কিছুই বলবো না।
শায়ন বলে যতদিন পর্যন্ত আমার শালা জেলখানা থেকে মুক্তি না পাবে ততো দিন তুই আমার কাছেই বন্ধি থাকবি তাই ভালোই ভালোই বলছি তুই যা জানিস সব বল কিভাবে তোরা মুশফিককে ফাসালি সত্যি বললে তোকে ছেড়ে দিব।
ইয়াছিন বলে ভাই বিশ্বাস কর আমি আর কিছুই জানি না আমাকে যেতে দে।
শায়ন আর কিছু না বলে গোদামের বাহিরে চলে আসে এবং রবি কে বললো সে বাসায় যাচ্ছে। ১৫ মিনিটের মধ্যে বাসায় ও চলে এসেছে কিন্তু কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছে। হটাৎ তার শরীরটা ভালো লাগছে না তাই সে একটা ঘুম দিল।
ঠিক দুপুর ২টা। শায়নের ঘুম ভাঙল আরিয়ানের ফোন কলে। ফোন রিসিভ করতেই আরিয়ানের গলা শোনা গেল, "কিরে বেটা, তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? বাইরে যে ঘূর্ণিঝড় চলছে তার খবর রাখিস? তোর আব্বা তো তোকে সারা সকাল খুঁজছে, আর আমি মিথ্যা বলে বলে ক্লান্ত।"
শায়ন ধড়ফড় করে উঠে বসল। "কী বলছিস? ঘূর্ণিঝড় মানে?"
আরিয়ান এবার ফিসফিস করে বলল, "ইয়াছিন গায়েব! তার পরিবার পুলিশে রিপোর্ট করেছে। মেয়র রাকিব এখন পুরো শহর তছনছ করে খুঁজছে। আর তোর বাবা ভাবছে তুই হয়তো কোনো ঝামেলায় জড়িয়েছিস। আমি তাকে কোনোমতে সামলে রেখেছি।"
শায়নের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল। "চিন্তা করিস না, দোস্ত। গায়েব হয়নি, একটু হাওয়াবদল করতে গেছে। আমি তোকে বলেছিলাম না, এই খেলায় আইন যথেষ্ট নয়? যা হোক, শোন, তুই এখন মিমোর খোঁজখবর রাখ। আর রাতের একটা প্ল্যান আছে, তোকে সব জানাব। আমার মনে হচ্ছে, গুরুস্থানের পিছে আজ রাতে বড় কিছু হবে।"
আরিয়ান যেন আকাশ থেকে পড়ল। "গুরুস্থানের পিছে? তুই কি ড্রাগ ডিলারের কাছে যাবি? ভাই, তুই কি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস? তোর বাবার দেওয়া এক বছরের সময়টা তুই জেলেই কাটাতে চাস?"
"শান্ত হ," শায়ন জোর দিয়ে বলল, "আমি সব ভেবেচিন্তে করছি। তুই শুধু রাতের জন্য প্রস্তুত থাকিস। আর মিমোকে দেখিস যেন কেউ ফলো না করে। এবার আমি ওর ঢাল নয়, তলোয়ার হয়ে সামনে যাব।"
আরিয়ান হতাশ হয়ে ফোন রাখল, কিন্তু শায়নের চোখে এখন শুধু একটা লক্ষ্য— মিমোকে মুক্তি, মুশফিকের বিচার এবং আনোয়ারের পতন। সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে তৈরি হতে লাগল। ইয়াছিনের দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই এবং রবিকে বাকি নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই মুহূর্তে তার বাইরে যাওয়া জরুরি।
বিকাল ৫টা। শায়ন খান বাড়ি থেকে বের হলো, আব্বার চোখ এড়িয়ে। তার নতুন কালো বাইকটা নিয়ে সে সোজা রবির আস্তানার দিকে রওনা দিল। গোদামঘরে পৌঁছে দেখল, রবি এক কোণে মাথা নিচু করে বসে আছে।
"কী খবর, ইয়াছিন কথা বলেছে?" শায়ন গম্ভীরভাবে জানতে চাইল।
রবি মাথা তুলে বলল, "ভাই, আপনার সেই আঘাতের পর ও আর বেশি তেড়ামি দেখায়নি। শুধু একটা কথাই স্বীকার করেছে—মুশফিককে ফাসানোর নির্দেশ সরাসরি আনোয়ার মোল্লা দিয়েছিল, তার দুলাভাই মেয়রের নির্দেশেই। কারণ মিমো নাকি প্রকাশ্যে আনোয়ারকে অপমান করেছিল, আর মেয়র সাহেবও এই অপমান সইতে পারেননি।"
শায়ন দাঁতে দাঁত চাপল। "আমি জানতাম। এই নোংরা রাজনীতি আর প্রতিশোধের খেলায় মিমো শিকার। শোন রবি, আজ রাতে আমাদের বড় কাজ। ইয়াছিন যা বলেছে, গুরুস্থানের পেছনে ডিলটা আজ রাত ৮টা ৩৫ মিনিটেই হবে। তুই তৈরি থাক।"
"আমি কী করব, ভাই?" রবি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
শায়ন একটি ফাইল ও একটি অত্যাধুনিক ক্যামেরা রবির হাতে দিয়ে বলল, "তোর কাজ শুধু একটাই— প্রমাণ জোগাড় করা। তুই ডিলের সময় সেখানে যাবি। দূর থেকে পুরো ডিলের ভিডিও করবি এবং কে কে আছে, তাদের ছবি তুলবি। মনে রাখিস, আমাদের আসল লক্ষ্য ড্রাগ নয়, আনোয়ার মোল্লা এবং তার দল। আর তুই কোনোভাবেই সামনে যাবি না। প্রমাণই আমাদের শক্তি।"
"আর ইয়াছিন?" রবি প্রশ্ন করল।
"ও আপাতত এখানেই থাক। এটা আমাদের বীমার পলিসি। মেয়র সাহেবকে বোঝাতে হবে, আমি কেবল ডিলের খবরই রাখছি না, তার নিজের শালারাও আমার কব্জায়। কাল সকালে ওকে আমি একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে আসব, যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না।"
রবি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। শায়নের চোখে তখন এক নতুন দৃঢ়তা। সে জানে, এই রাতের ডিলটিই মুশফিকের মুক্তির প্রথম দরজা হতে পারে। কিন্তু এই গোপন মিশনে পা রাখার আগে, তার একবার মিমোর সাথে দেখা করা দরকার। একটা শেষবারের মতো, দূর থেকে।
শায়ন গুদামঘর থেকে সোজা গেল মিমোর বাড়ির দিকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। তার বাইকটা একটু দূরে পার্ক করে সে মিমোদের বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়াল। সে জানে, এই মুহূর্তে মিমোর কাছে যাওয়া ঠিক হবে না, তার মন দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
হঠাৎ সে মিমোর বাড়ির বারান্দার দিকে তাকাল। মিমো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, হাতে সেই গোলাপ ফুলটি, আর অবাক হয়ে দেখল— মিমোর চোখে আজ কাজল! 👁️🗨️
শায়নের মুখে হাসি ফুটল। চিঠিটা কাজ করেছে। তার মায়াবতী তার কথায় কাজল পরেছে। মিমোর মুখে যদিও এখনো উদ্বেগের ছাপ, কিন্তু সেই কাজলটুকুই যেন তাকে এক মুহূর্তের জন্য স্বস্তি এনে দিল। এই হাসিমুখটাই তো তার অনুপ্রেরণা। শায়ন আবার একটি চিঠি লেখা শুরু করলো ,
আমার হ্রিদয় হরনী আমাকে কাবু করার জন্য আজ তোমার চোখের কাজল এই যথেষ্ট ছিল। তোমার এই রুপ দেখার পরে আমি আরো ঘায়েল হয়ে গেছি এভাবে চলতে থাকলে আমাকে খুব শীঘ্রই কাজ-কাম বাদ দিয়ে সন্যাসি হতে হবে। তোমাকে একটা খুশির খবর দেই আজ আমি একটা হিডেন অপারেশন করতে যাচ্ছি যদি আমি সফল হই তাহলে খুব শীঘ্রই মুশফিককে বের করতে পারবো তাই আমার জন্য দোয়া কর। আর তুমি যে কোন সমস্যায় আমাকে স্মরণ করো আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। আমি তোমাকে আমার ইমেইল আইডি দিয়ে রাখছি কোন প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবে।
email : samo11@gmail.com
ইতি
তোমার ছায়ামূর্তি।
শায়ন চিঠিটা তে একটা পাথর মুরিয়ে দোতালায় মিমোর বারান্দার দিকে ছুড়ে মারল এবং সাথে সাথে উক্ত স্থান ত্যাগ করলো।
শায়ন দ্রুত বাইকে উঠে আরিয়ানকে ফোন করল।
"কিরে, এত রাতে বাইকে কেন?" আরিয়ানের কণ্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট।
শায়ন বাইকের হেডলাইট জ্বালিয়ে জোরে বলল, "গুরুস্থানের পেছনের রাস্তায় আয়, রাত আটটার মধ্যে। একটা বড় কাজে তোর সাহায্য লাগবে।"
"গুরুস্থান? ভাই, তুই কি সিরিয়াস? আমি কিন্তু তোর আব্বাকে সব বলে দেব!" আরিয়ান প্রায় চিৎকার করে উঠল।
"তুই আমার বন্ধু, না শত্রু? তোর আব্বাকে বলে আমার কোনো লাভ হবে না, আর মিমোর ভাইয়েরও মুক্তি হবে না। তোকে শুধু একটা কাজ করতে হবে, আমাকে গার্ড দিতে হবে। যখন ডিল শুরু হবে, তখন তুই উল্টোদিক থেকে একটা ট্রাক নিয়ে আসবি এবং রাস্তায় আটকে দিবি। তারপর আমি তোকে ইশারা করলে তুই শুধু পুলিশের ৯৯৯-এ কল করে একটা ভুয়া বোমার খবর দিবি, যেন এলাকাটা দ্রুত খালি হয়ে যায়। কিন্তু তুই ভুলেও সামনে আসবি না। তুই শুধু দূর থেকে আমাকে কভার দিবি, আর নজর রাখবি। মনে রাখিস, আমার আর রবির আসল কাজ প্রমাণের ভিডিও করা। তুই শুধু ভিড়টাকে দূরে রাখবি।"
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "তোর সব পাগলামি আমাকে কেন করতে হয়? ঠিক আছে, আসছি। কিন্তু একটা কিছু হলে কিন্তু আমি সোজা এয়ারপোর্ট ধরব।"
শায়ন হেসে বলল, "আগে কাজটা তো শেষ হোক। চললাম, দেখা হবে।"
শায়ন ফোন রেখে বাইকের গতি বাড়াল। রাত তখন ৮টা ১৫ মিনিট। গুরুস্থানের পেছনের দিকের রাস্তাটা সাধারণত জনশূন্য থাকে, ঘন অন্ধকারে মোড়া। শায়ন বাইকটা রাস্তার মোড় থেকে কিছুটা ভেতরে লুকিয়ে রাখল।
ঠিক ৮টা ৩৫ মিনিটে দুটি কালো গাড়ি এসে থামল। একটি গাড়ি থেকে নামল সুঠাম দেহের কয়েকজন লোক, আর অন্য গাড়ি থেকে নামল আনোয়ার মোল্লা, মেয়র রাকিবের সেই দুর্ধর্ষ ভাতিজা। তার মুখে উদ্ধত হাসি।
আনোয়ার মোল্লা দাম্ভিক কণ্ঠে বলল, "মাল সব রেডি? আমাদের মাল একদম 'পিওর'। বাজারে এর দাম..."
শায়ন ও রবি লুকিয়ে পুরো কথোপকথন এবং লেনদেন ভিডিও করতে লাগল। রবি ক্যামেরা ধরেছিল, আর শায়ন তার পাশ থেকে একটি ছোট বাইনোকুলারে চোখ রেখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। আনোয়ারের দলের একজন ড্রাগের প্যাকেটগুলো দেখাচ্ছিল, আর অন্য একজন লোক টাকার ব্যাগগুলো গুনে নিচ্ছিল।
ঠিক তখনই শায়ন দেখল, দূর থেকে আরিয়ান একটা পুরনো লরি নিয়ে আসছে। আরিয়ান ঠিক নির্দেশ অনুযায়ী লরিটিকে আড়াআড়িভাবে রাস্তার মাঝখানে এমনভাবে আটকে দিল যে কোনো গাড়ি সহজে পার হতে পারবে না।
আনোয়ার মোল্লা বিরক্ত হয়ে বলল, "কী হচ্ছে এসব? এই সময় কে লরি এনেছে!"
শায়ন এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিল। সে দ্রুত রবিকে ইশারা করল। রবি সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ ফোন করে একটা ভুয়া বোমার খবর দিল।
মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা যেন থমকে গেল। শায়ন তার পকেট থেকে দুটো গ্রেনেড পিন খুলে ছুঁড়ে মারল... না, সেগুলো গ্রেনেড ছিল না, ছিল বিশেষ ধরণের শব্দ বোমা (Stun Grenade)।
'ধাঁই! ধাঁই!' করে শব্দ হতেই পুরো এলাকা কেঁপে উঠল। ড্রাগ পাচারকারীরা এবং আনোয়ারের লোকরা হতভম্ব হয়ে গেল। শব্দে তাদের কান ভোঁ-ভোঁ করতে লাগল, আর চোখে ধাঁধা লেগে গেল।
শায়ন ও রবি সেই সুযোগে ভিডিও রেকর্ডিং শেষ করে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ল। অন্ধকারে তারা বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল।
আনোয়ার তখনো চোখ কচলাচ্ছিল। সে রাগে চেঁচিয়ে উঠল, "কে ছিল? কোন শালা এই কাজ করল? সব মাল ফেলে গেল নাকি!"
আনোয়ার দেখল, তার লোকেরা তখনও মাটিতে বসে আছে। সে বুঝতে পারল, কেউ একজন তাদের ওপর নজর রাখছে। ঠিক তখনই সাইরেনের শব্দ শোনা গেল। আরিয়ানের ভুয়া বোমার খবর সত্যি ভেবে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলের দিকে আসছে।
"শালা! সব কাজ নষ্ট করে দিল! মালগুলো ধর!" আনোয়ার চিৎকার করে উঠল, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। পুলিশ এসে ঘিরে ফেলেছে পুরো এলাকা।
আরিয়ান দূর থেকে শায়নকে চলে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এবং সেও দ্রুত লরিটি রেখেই অন্য পথ দিয়ে পালিয়ে গেল।
রাত তখন ১১টা। শায়ন যখন বাড়িতে ফিরল, তার চোখে-মুখে এক অদ্ভুত উত্তেজনা। ফ্রেশ হওয়ার আগেই আজমিন খান তাকে বৈঠকখানায় ডাকলেন।
"তুমি কোথায় ছিলে, শায়ন?" আজমিন খানের কণ্ঠে এবার আর নরম সুর নেই, সরাসরি প্রশ্ন।
শায়ন স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলল, "আব্বা, একটা জরুরি সাপ্লাইয়ারের সঙ্গে ডিনার ছিল। নতুন বিজনেসের জন্য তো একটু ছোটাছুটি করতেই হবে।"
"মিথ্যে বলবে না," আজমিন খান ধমকে উঠলেন। "আমি জানি তুমি কোথায় ছিলে। আজ গুরুস্থানের পেছনের রাস্তায় কী হয়েছে? পুলিশ সবখানে তল্লাশি চালাচ্ছে, আর তুমি এই রাত-বিরাতে বাইরে ঘুরছো! তোমার কি মনে হচ্ছে না যে তুমি সেই পুরোনো ঝামেলাতেই আবার জড়াচ্ছো?"
শায়ন মাথা নিচু করে শান্ত স্বরে বলল, "আব্বা, আমি কোনো ঝামেলায় জড়াইনি। আমি শুধু নিজের চোখের সামনে একটা খারাপ কাজ হতে দেখে চুপ করে থাকতে পারিনি। বিশ্বাস করুন, আমার কোনো ভুল নেই। আর আমি যা করছি, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যই করছি।"
আজমিন খান ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। "শোনো, আমি জানি তুমি কিছু একটা লুকোচ্ছো। তবে তোমার চোখে আমি যে জেদ দেখছি, সেটা আমার রক্তে আছে। আমি তোমাকে আর একটা সুযোগ দিচ্ছি। এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি যদি প্রমাণ করতে পারো যে তুমি সৎ পথে বিজনেস করছো, তাহলে ভালো। না হলে, আমি তোমাকে আবার বিদেশ পাঠিয়ে দেব। আরিয়ানকেও বলে দিয়েছি, সে যেন তোমার কোনো বাজে কাজে সাহায্য না করে।"
শায়ন মাথা নেড়ে বলল, "ঠিক আছে আব্বা। এক সপ্তাহ। আমি প্রমাণ করব।"
আজমিন খান কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলে শায়ন হাসল। প্রমাণ? প্রমাণের বস্তা তো সে ইতিমধ্যেই জোগাড় করে ফেলেছে!
পরদিন সকাল। শায়ন তার ল্যাপটপে বসে রবির পাঠানো ড্রাগ ডিলের ভিডিওগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। ভিডিওতে আনোয়ার মোল্লার চেহারা এবং কথোপকথন স্পষ্ট।
ঠিক তখনই আরিয়ান এল। "শালা, তুই তো আমাকে খুনি বানাতে চেয়েছিলি! পুলিশ এখন লরিটার মালিক খুঁজছে! যা হোক, তোকে একটা খবর দিতে এসেছি। আনোয়ার মোল্লা খুবই রেগে আছে। সে নাকি প্রতিজ্ঞা করেছে, যেই তার কাজ নষ্ট করেছে, তাকে সে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে। তোর ওপর ওর নজর পড়েছে।"
শায়ন মুচকি হেসে বলল, "ভালো হয়েছে। এবার আসল খেলা শুরু হবে। আর আমি রবিকে বলেছি তোকে ও বলছি তুই একটু মিমোর খেয়াল রাখিস আমি ওর জন্যই যুদ্ধে নেমেছি এখন আমি যদি ওকে বাচাতে না পারি তাহলে আমি জিতে গিয়ে ও হেরে যাব এই দুনিয়ায় আমি তোদের অনেক বিশ্বাস করি আর আমার পিছনে আমার ভালোবাসার মানুষকে বাচানোর দায়িত্ব কিন্তু তোদের।
আরিয়ান বলে , সব বুজলাম কিন্তু তোর বাপ তো আমাকে ঠান্ডা হুমকি দিছে আমি যেন তোকে কোন সাহায্য না করি এখন আঙ্কেল যদি জানতে পারে তাহলে ভাবছিস আমাকে কি করবে।
শায়ন মুচকি হেসে জবাব দেয় এই নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না আব্বার কাহিনি আমি দেখছি।
শায়ন আরিয়ানের সাথে কথা বলছিল এমন সময় তার ফোনে মেসেজ আসার টুং করে একটা শব্দ হলো। নোটিফিকেশন চেক করে শায়ন মুচকি হাসি দিল তার হাসি দেখে আরিয়ান প্রশ্ন করলো কে মেসেজ পাঠিয়েছে।
শায়ন জবাবে বলে তোর এতো কিছু জানতে হবে না তুই এখন যা আর মিমোর দিকে খেয়াল রাখিস।
আরিয়ান অবাক হয়ে বলে বাহ চুদির ভাই কে এমন মেসেজ দিলো যে আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস।
তোকে জানতে হবে না তুই এখন যা আর আমার কথা খেয়াল রাখিস বলে শায়ন তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো এবং ফোনের মেইল অপশনে গিয়ে দেখল মিমোর মেইল থেকে মেসেজ আসছে ,
হ্যালো SK আমি জানি না কে আপনি এবং কেন আমাকে সাহায্য করছেন কিন্তু আপনি দুর থেকে আমাকে যেভাবে সাহস দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমাকে বিপদ থেকে যেভাবে রক্ষা করছেন এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর আপনার আজকের অপরেশন সাকসেস হয়েছে কি না তা জানাবেন আমি অপেক্ষা করছি।
মেইল পরে শায়ন মুচকি হাসি দিল এবং লিখতে শুরু করলো ,
আমার মায়াবতী তুমি চিন্তা করো না আমার আজকের অপরেশন সাকসেস হয়েছে আমি অনেক গুলো প্রমান পেয়েছি কিন্তু মুশফিককে মুক্ত করার জন্য এই প্রমান গুলোই যথেষ্ট নয় আর কিছু দিন অপেক্ষা করো আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি মুশফিককে মুক্ত করবোই।
ইতি
তোমার ব্যর্থ প্রেমিক।
লিখে শায়ন সেন্ড করলো আর রিপ্লের জন্য অপেক্ষা করছিল মিনিট পাচেক এর ভিতরে রিপ্লে চলেও আসলো। রিপ্লেতে লিখা ছিল শুধু ,
আমি আপনাকে বিশ্বাস করি দয়া করে আমার বিশ্বাস ভাঙবেন না।
শায়ন রিপ্লে পরে মনে মনে বলছে এই বিশ্বাসটা যদি আট বছর আগে ও করতে তাহলে আমাকে তোমার থেকে এতো দুরে যেতে হতো না। আজ আবার সেই দিন গুলোর কথা শায়নের মনে পরছে।
শায়ন ছোট বেলা থেকেই মিমোকে পছন্দ করতো কিন্তু কখনো মিমোকে কিছু বলার সাহস হয়নি। এভাবে চলতে চলতে তারা দুজন বড় হতে থাকলো শায়ন নানা অজুহাতে মিমোর সাথে কথা বলার ট্রাই করতো কিন্তু কখনো কথা বলতে পারতো না হটাৎ শায়ন একদিন খেয়াল করলো যে মিমো শাকিল নামে একটা ছেলের সাথে বেশি মেলা - মেশা করছে যা শায়নের কখনো ভালো লাগতো না। শায়ন এই কথা অনেকবার মিমোকে বোজানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু মিমো কেন জানি শায়নকে সহ্য করতে পারতো না। আসলে আগে মিমো ও শায়নের টুকটাক কথা হতো কিন্তু যেদিন থেকে মিমো জেনেছে শায়ন তাকে পছন্দ করে সেদিন থেকে সে আর শায়নের সাথে কথা বলে না আর সে মনে করতো শায়ন তাকে পছন্দ করে বলে তাকে শাকিলের সাথে মিশতে পছন্দ করে না। তাই সে আরও বেশি করে শাকিলের সাথে মেলা মেশা করে। এভাবে সময় কাটছিল একদিন তাদের স্কুল থেকে সিলেট ভ্রমনের ব্যবস্থা করে মিমোর মা-বাবা তাকে ভ্রমনে যাওয়ার পারমিশন দিচ্ছিল না তাই মিমো ও যাওয়ার জন্য বারন করে দিয়েছিল কিন্তু শাকিল ও তার বান্ধবীদের অনেক জোরাজোরিতে যাওয়ার জন্য রাজি হয় এবং মিমো তার মা-বাবাকে অনেক কষ্টে রাজি করায়। কিন্তু ভ্রমনে যাওয়ার পর থেকেই শাকিলের চাল চলন কেমন পাল্টে যায় যা শুধু শায়নের চোখে পড়ে। মিমো তার বাকি বান্ধবীদের সাথেই সময় কাটাচ্ছিল হটাৎ মিমো ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যায়। কিছুক্ষন পরে মিমো চলে আসে আর এর কিছু সময় পরে শাকিল ও ওয়াশরুমে যায় এবং যখন শাকিল ওয়াশরুম থেকে বের হয় তখন তার হাতে হিডেন ক্যামেরা ছিল যা শায়ন খেয়াল করে। শাকিল ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চা বাগানের দিকে যাচ্ছিল তখন শায়ন তার পিছু নেয়। কিছু দুর যাওয়ার পর যখন শাকিল ক্যামেরা অন করতে যাচ্ছিল তখনই শায়ন তার হাত থেকে ক্যামেরা কেরে নেয় এবন ক্যামেরার রেকোডেড ভিডিও দেখে শায়নের মাথায় আগুন জ্বলে যায় এবং সে শাকিল কে বেধরম মার -পিট শুরু করে সে শাকিল কে মারছিল এবং একটা কথাই বলছিল তোর কত বড় সাহস তুই এই শায়ন খানের কলিজায় হাত দিস আজ তোর কলিজা বের করে আমি দেখব তোর কলিজাটা কতো বড় , আজ তোর কলিজাটা আমি ওজন দিয়ে দেখব কুত্তার বাচ্চা তুই জানিস না তুই কার দিকে নজর দিয়েছিস। শায়ন শাকিলকে গাছের সাথে বেধে মারছিল এমন সময় সেই জায়গায় মিমো উপস্থিত হয়ে যায় এবং শায়নের এই রুপ দেখে ভয়ে চিতকার দিয়ে বসে তার চিতকারের আওয়াজে সার - মেডাম সকল ছাত্র - ছাত্রী চলে আসে। তাদের সাথে আরিয়ান ও চলে আসে কিন্তু শায়নের অবস্থা দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। স্যার - মেডাম কি হয়েছে জানতে চাইলে শায়ন বলতে গিয়েও থেমে যায়। মিমো ভাবছিল সে শাকিলের সাথে মিশে বলে শায়ন তাকে এভাবে মেরেছে। স্যার - ম্যাডাম ইতি মধ্যে শাকিলের বাধন খুলে গাড়ির দিকে দৌড়ানো শুরু করলো। শায়ন একবার গেলো মিমোর কাছা কাছি এবং বল্লো বিশ্বাস করো এখানে আমার কোন দোষ নেই ও এমন একটা কাজ করেছে যা তোমাদের বলতে পারবো না। মিমো কোন কিছু শুনতে চাচ্ছিল না সে শায়নকে অনেক ভয় পাচ্ছিল। এমন সময় আরিয়েন এসে শায়নের হাত ধরে উক্ত জায়গা ত্যাগ করলো এবং সিলেট শহর থেকে গাড়ি করে ডিরেক্ট শায়নের বাড়িতে পৌছে গেল। আরিয়ান ইতি মধ্যে সব খবর আজমিন খান কে জানিয়ে রেখেছিল। ওনি শাকিল কে মারার কারন জিজ্ঞেস করলে শায়ন কোন জবাব দেয় না। আজমিন খান রেগে শায়নের গালে চড় মারে এবং বলে একটা মেয়ের জন্য তুমি খুন করতে গেয়েছিলে একটা ছেলেকে এভাবে মারতে তোমার বিবেকে বাধলো না।
শায়ন ঠান্ডা গলায় জবাব দিলো ও একটা মেয়ে না আব্বা ও একমাত্র মেয়ে যার জন্য এই শায়ন খান হাসতে হাসতে তার জীবন দিতে ও পারে আর তার যদি কেউ কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলে তার জীবন নিতে ও পারে।
আজমিন খান রেগে বলে তুমি বুজতে পারছো তুমি কি করেছ ওই ছেলেটা যদি মারা যায় তাহলে বুজতে পারছো তোমার কি হবে।
শায়ন জবাবে বল্লো ওই জানোয়ারটার বাচার কোন অধিকার নেই ওকে আমি শেষ করবো আপনারা জানেন না ও কি করেছে জানলে আপনারা ও কন্ট্রোল করতে পারতেন না।
কি করেছে ও আজমিন খান জানতে চায়।
শায়ন বলতে গিয়েও থেমে যায় সে বেচে থাকতে তো তার মায়াবতীর কোন অসম্মান হতে দিবে না তাই সে বলে কিছুই করে নি।
আজমিন সাহেব এবার রেগে যান এবং তার স্ত্রী কে বলেন তোমার ছেলের লাগেজ গোছাউ আমি এখনি ওকে দেশের বাহিরে পাঠাবো ও আমার বোনের বাড়িতে থেকে পড়া শোনা করবে এখন থেকে ও দেশের বাহিরেই থাকবে ওর আর এই দেশে আসা চলবে না।
শায়ন অনুরোধের সুরে বলে প্লিজ আব্বা আমাকে এই দেশ চাড়তে বলবেন না আমি আপনাদের ছেড়ে আমার ভালোবাসাকে ছেড়ে অন্য দেশে থাকতে পারবো না , আম্মা আপনি কিভাবে আমাকে ছাড়া থাকবেন আপনি আব্বাকে বোঝান আমি অন্য দেশে ভালো থাকতে পারবো না।
স্বামীর সিদ্ধান্ত শুনে মাহমুদা খানের চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু ঝরতে থাকে তিনি তার স্বামিকে বলেন আপনি আমার থেকে আমার ছেলেকে আলাদা করবেন না দয়া করে আপনি ওকে দেশের বাহিরে পাঠাবেন না।
আজমিন খান রেগে স্ত্রীকে বলেন আমি কি সখে পাঠাচ্ছি নাকি তোমার ছেলে যা করেছে এতে যদি ছেলে বেচে ও যায় তাহলে হাফ মার্ডার কেসে তোমার ছেলে ফেসে যাবে আর যদি ছেলে মারা যায় তাহলে তোমার ছেলেকে বাচানো যাবে না এখন ভেবে দেখ তুমি কি তোমার ছেলে জেলে দেখতে চাও নাকি দেশের বাহিরে ভালো দেখতে চাও।
মাহমুদা বেগম এবার শান্ত হয় এবং ছেলের ব্যাগ গুছিয়ে দেয় আজমিন খান এবং আরিয়েন জোর করে শায়ন কে এয়ারপোর্ট নিয়ে যায় এবং ইমিগ্রেশন শেষ করে শায়ন ফ্লাইটে ওঠে যায়।
আজমিন খান এবং আরিয়ান ইয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল যায় শাকিলের পরিবারের সাথে দেখা করতে ও খানে গিয়ে জানতে পারে শাকিলের অবস্থা সিরিয়াস। আজমিন খান শাকিলের পরিবারের লোকদের আশ্বাস দেয় এবং বেস্ট সার্জেন্ট এর ব্যবস্থা করেন শাকিলের জন্য। শাকিলের বাবা তো আজমিন খানকে অনকে ভালো মন্দ কথা শোনায় এবং থানায় কেস করার হুমকি দেন। আজমিন সাহেব জানান যে শায়ন আর এই দেশে নেই তাকে সে বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছে আর শাকিলের চিকিৎসার যত খরচ আছে সব ওনি বহন করবেন। এই কথা বলে আজমিন খান সেদিন বিষয়টি সামলিয়ে ছিল।
অতীতের কথা মনে করে শায়ন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আবার ভাবে সেদিন যদি মিমো তার দেওয়া চিঠিটা একবার পরতো তাহলে আর এই ভুল বোঝাবুঝি থাকতোনা আচ্ছা মিমো কি সে দিন চিঠি আর ক্যামেরা পেয়েছিল শায়ন মনে মনে প্রশ্ন করে? শায়ন এসব ভাবনা রেখে রবিকে ফোন দেয় পরবর্তী প্লান বোঝানোর জন্য। গুরুস্থানের ভিডিওগুলো একদম নিখুঁত, রবি। এবার আমরা ইয়াছিনকে ব্যবহার করব। আজকের মধ্যে তুই ইয়াছিনকে একটা গোপন, তবে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত কর। সেই অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা কাগজপত্রে যেন অন্য কারও নাম থাকে। ওখান থেকে আমরা ডিল করব।"
রবি বলল, "কিন্তু ভাই, আনোয়ার তো এখন মরিয়া হয়ে আপনাকে খুঁজছে। সে যদি জানতে পারে আপনিই সব করছেন..."
"জানতে তো তাকে হবেই," শায়ন শান্তভাবে বলল। "আজ রাতে আমি আনোয়ার মোল্লার সাথে সরাসরি কথা বলব। তুই শুধু ইয়াছিনকে ভালোভাবে রাখিস। আমার হাতে থাকা প্রমাণগুলো এবার আমি শহরের সবচেয়ে সম্মানিত এবং সৎ উকিলকে দিতে চাই। এমন একজনকে, যিনি টাকার লোভে প্রমাণ নষ্ট করবেন না।"
রবি আর কথা না বাড়িয়ে ইয়াছিনকে সরিয়ে ফেলার কাজে মনোযোগ দিল। শায়ন দ্রুত তার ল্যাপটপ নিয়ে আরিয়ানের কাছে গেল।
"কিরে শালা, এত সকালে ল্যাপটপ নিয়ে কেন?" আরিয়ান বিরক্তি প্রকাশ করল।
শায়ন আরিয়ানের দিকে ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে দিল। ভিডিওতে আনোয়ার মোল্লার ড্রাগ লেনদেনের দৃশ্য দেখে আরিয়ান হতবাক।
"বিশ্বাস হচ্ছে না তো? এই দেখ, তোর বন্ধুর কাজ," শায়ন হাসল। "এবার আমরা শহরের সেরা উকিল, নাসির উদ্দিনেরকাছে যাব। তোর বাবার উকিল, যে মিমোর কেসটা দেখছে না। তোর মামা তাকে চেনে, তুই তার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা কর। আর এই ভিডিওর একটি কপি তুইও রাখবি, যেন কিছু হলে তা প্রকাশ করা যায়।"
আরিয়ানের চোখে এবার বিস্ময় নয়, গভীর শ্রদ্ধা। "তোর কাছে সত্যি বলতে আমার আর কিছু বলার নেই। তুই শুধু তোর লক্ষ্যটা বল, আমি তোর পাশে আছি।"
শায়ন বলল, "মুশফিকের মুক্তির জন্য শুধু এই ভিডিও যথেষ্ট নয়। আমি চাই আনোয়ার মোল্লার পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস হোক। আর মিমোকে ভুল প্রমাণ করে যারা ওর ভাইকে ফাঁসিয়েছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন হোক।"
দুপুরবেলা শায়ন উকিল নাসির উদ্দিনের অফিসে পৌঁছাল। নাসির উদ্দিন ভিডিও এবং শায়নের পুরো পরিকল্পনা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।
"তুমি জানো শায়ন, তুমি কীসের সাথে লড়াই করছো? মেয়র রাকিবের প্রভাব শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, পুরো ঢাকা জুড়ে আছে।
শায়ন মাথা নেড়ে বলল, "আমি জানি স্যার। কিন্তু আমার পরিবার বা আমার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচানোর জন্য আমাকে এর মুখোমুখি হতেই হবে। আমি আপনাকে শুধু একটা শর্তে এই প্রমাণগুলো দেব— মিমো যেন এই কেসের একমাত্র সাক্ষী হয়। ওকে বোঝাতে হবে, এর মাধ্যমে সে তার ভাইকে দ্রুত মুক্ত করতে পারবে।"
উকিল নাসির উদ্দিন কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, "তোমার সাহস আছে। ঠিক আছে, তুমি যখন সবকিছু দিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত, আমিও তোমার পাশে আছি। কিন্তু আমি তোমার পরিচয় গোপন রাখব, যতক্ষণ না প্রয়োজন হয়।"
শায়ন উকিলের অফিস থেকে বেরিয়েই রবিকে ফোন করল, "এবার আসল কাজ। আনোয়ারের কাছে একটা বার্তা পাঠা—SK তার সাথে দেখা করতে চায়। স্থান দিবি ওই বিলাশ বহুল বাড়ি যেখানে ইয়াছিনকে আটকে রেখেছিস।
রবি শায়নের কথা মত আনোয়ার কে মেসেজ পাঠালো।
শায়ন আকাশের দিকে চেয়ে বারান্দায় বসে ছিল এমন সময় মিমোর মেইল থেকে মেসেজ আসলো , আপনার অপারেশন এর কি হলো আমাকে জানাবেন আমি অধীর আগ্রহে আছি।
শায়ন মুচকি হেসে টাইপ করে , বলতে পারো আমি প্রায় সাকসেস আর অল্প কিছু কাজ আছে সময় হলে তুমি জানতে পারবে আর তোমাকে অবশ্যই সাক্ষী দিতে হবে সো মেন্টাল্লি প্রিপিয়ার থাকবে।
সময়টা তখন রাত ৮টা। ইয়াছিনকে যে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে রাখা হয়েছিল, সেই গোপন আস্তানায় অপেক্ষা করছিল শায়ন। তার হাতে ল্যাপটপ, যাতে আনোয়ার মোল্লার ড্রাগ ডিলের সম্পূর্ণ ভিডিও প্রমাণ। রবি নিচে পাহারায়, আরিয়ান শহরের অন্য প্রান্তে সতর্ক অবস্থানে।
ঠিক রাত ৮টা ২০ মিনিটে আনোয়ার মোল্লার কালো এসইউভি অ্যাপার্টমেন্টের নিচে এসে থামল। রবি দ্রুত শায়নকে ইশারা করল। শায়ন নিঃশব্দে প্রস্তুত হলো।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আনোয়ার মোল্লা চারপাশে একবার চোখ বোলাল। তার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। "কে রে তুই, যে আমার শালাকে কিডন্যাপ করার সাহস দেখাস? SK! শয়তান খান, নাকি শাকিল খান?"
শায়ন চেয়ার টেনে বসল, শান্ত চোখে আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে। "আমার নামটা ম্যাটার করে না, আনোয়ার। ম্যাটার করে এই ফাইলটা," শায়ন ল্যাপটপের স্ক্রিনটা ঘুরিয়ে দিল। ড্রাগ ডিলের ভিডিও দেখে আনোয়ারের চোখ কপালে উঠল।
"তুই... তুই!" আনোয়ারের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
"হ্যাঁ আমিই," শায়ন শীতল কণ্ঠে বলল। "মুশফিককে ড্রাগ কেসে ফাঁসানোর সব প্রমাণ আমার হাতে। আর তোর শালা ইয়াছিন, সেও আমার কব্জায়। তুই যা যা জানতে চাস, তার চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা আছে।"
শায়ন তার ফোনটা টেবিলের ওপর রাখল। "শোন, তোকে একটা ডিল অফার করছি। আমার হাতে সময় কম, তোর হাতে আরও কম। তুই মুশফিকের কেস থেকে হাত তুলে নিবি, সব সাজানো প্রমাণ নষ্ট করবি এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাবি। বিনিময়ে, আমি তোকে আর ইয়াছিনকে আজকের জন্য ছেড়ে দেব। আর এই ভিডিওর একটা কপি দেব না কাউকে।"
আনোয়ার তার কোমরে হাত দিয়ে অস্ত্র ধরার চেষ্টা করতেই শায়ন বলে উঠল, "সাবধান, আনোয়ার! ভুলটা করিস না। এই রুমে যা হবে, তার সব কিছু রেকর্ড হচ্ছে। আমার একটা চুল নড়লেও কাল সকালে এই ভিডিও শহরের প্রতিটি চ্যানেলে চলে যাবে। আর তোর দুলাভাইয়ের সম্মান ধূলিসাৎ হতে বেশি সময় লাগবে না।"
আনোয়ার দাঁতে দাঁত চেপে বলল, "তোর সাহস দেখে আমি অবাক। কিন্তু তুই কি মনে করিস আমি তোর এই ব্ল্যাকমেইল মেনে নেব?"
"না নিলেও অসুবিধা নেই," শায়ন বলল। "আমি পুলিশকে জানিয়েছি, এখানে একটি ড্রাগ পার্টির আয়োজন হয়েছে। পুলিশ আর মিনিট দশেকের মধ্যে চলে আসবে। তুই হয় ডিলটা মেনে নে, নয়তো তোর শালাসহ জেলে পচ।"
আনোয়ার কোনো উপায় না দেখে মাথা নাড়ল। "ঠিক আছে, ডিল মেনে নিলাম। কিন্তু তুই আমার সাথে দেখা করে ভালো করলি না SK। আমি তোকে শেষ করে ছাড়ব!"
শায়ন হাসল। "দেখা যাক।"
পরদিন দুপুর। উকিল নাসির উদ্দিনের অফিসে শায়ন, আরিয়ান, রবি এবং উকিল সাহেব বসে আছেন। শায়ন আনোয়ার মোল্লার সাথে ডিলের অডিও-ভিডিও এবং আগের ড্রাগ ডিলের প্রমাণপত্র উকিলের হাতে তুলে দিল।
"স্যার, মুশফিকের মুক্তির জন্য আর কী করা দরকার?" শায়ন জানতে চাইল।
"আমাদের হাতে এখন যথেষ্ট প্রমাণ। কিন্তু এই প্রমাণগুলো আদালতে পেশ করার আগে মিমোর সাক্ষ্য লাগবে। মিমোকে সব কথা বলতে হবে," উকিল বললেন।
শায়ন আরিয়ানকে ফোন করতে বলল। আরিয়ান মিমোকে সব বুঝিয়ে উকিলের অফিসে আসতে বলল।
কিন্তু ঠিক তখনই সর্বনাশ হলো!
মেয়র রাকিব ও আনোয়ার মোল্লা গোপনে শায়নের লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল। তারা জানতে পারল যে SK একজন পুরুষ এবং সে মিমোকে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তারা ভুল করে রবি ও আরিয়ানের কথোপকথন শুনে ফেলে এবং জানতে পারে যে SK-এর পরিচয় শায়ন খান।
মেয়র রাকিব, তার ক্ষমতার শেষ চাল হিসেবে মিমোকে অপহরণ করার নির্দেশ দিল।
মিমো যখন সিএনজি করে উকিলের অফিসের দিকে যাচ্ছিল, তখন তার পথ আটকে দিল আনোয়ারের লোক। মিমোকে জোর করে একটা কালো ভ্যানে তুলে নেওয়া হলো।
আরিয়ান এই খবর পেয়ে শায়নকে ফোন করল। "ভাই! সর্বনাশ হয়ে গেছে! মিমোকে তুলে নিয়েছে! আনোয়ারের লোক ছিল! তারা তোকে ফোন করতে বলেছে, তুই যেন একা আসিস!"
শায়নের রক্ত মাথায় উঠে গেল। "কোথায় আসতে বলেছে?"
"গুরুস্থানের পেছনের পুরনো গুদামে! এক্ষুনি যা, আমি রবিকে নিয়ে আসছি! কিন্তু তুই একা যাবি না!" আরিয়ান চিৎকার করে বলল।
"দেরি করিস না!" শায়ন ফোন রেখে নিজের বাইকে চড়ল। তার হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না, কেবল ছিল ভালোবাসার শক্তি আর রাগ।
গুদামের ভেতরে প্রবেশ করে শায়ন দেখল, মিমোকে শক্ত করে চেয়ারের সাথে বাঁধা হয়েছে। আনোয়ার মোল্লা হাসছে, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেয়র রাকিবের দেহরক্ষী দল।
"এসেই গেলি শায়ন খান!" আনোয়ার হেসে বলল। "আমি জানতাম, তুই এই মেয়েটার জন্য আসবি! তোর বাবার টাকা আর তোর এই সাহস— সব আজ শেষ হবে!"
শায়ন মিমোর দিকে তাকাল। মিমোর চোখে জল, ভয় আর অসহায়ত্ব।
"ওকে ছেড়ে দে, আনোয়ার। তোর সাথে আমার ডিল ছিল," শায়ন শান্ত অথচ কঠিন কণ্ঠে বলল।
"ডিল তো ছিল," আনোয়ার বলল। "কিন্তু ডিলটা তোর জন্য ছিল না! এটা আমার প্রতি প্রতিশোধ! তুই আমার ব্যবসা, আমার সম্মান আর আমার শালাকে নিয়ে খেলা করেছিস। তোর শাস্তি হবে এই মেয়েটার সামনে!"
আনোয়ার ইশারা করতেই তার লোক শায়নকে ঘিরে ধরল। শুরু হলো মারামারি। শায়ন ছিল বক্সিং-এ পারদর্শী, কিন্তু একার পক্ষে এতজনের সাথে পারা কঠিন। হাতাহাতিতে শায়ন অনেককেই ফেলে দিল, কিন্তু আঘাতও পেল অনেক। তার কপালের পাশ দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করল।
আনোয়ার তখনো হাসছে। "মার শায়নকে! মার!"
হঠাৎ শায়ন দেখল, আনোয়ার মিমোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। "এই মেয়েটার জন্যই তো এতকিছু! তোকে আজ এর চরম মূল্য দিতে হবে!"
শায়ন সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠল— "আনোয়ার! মিমোর দিকে এক পাও এগোবি না!"
শায়নকে তখন দু'জন লোক ধরে আছে, সে আর নড়তে পারছে না। আনোয়ার মিমোর দিকে এগিয়ে গিয়ে তার ওড়না ধরে টান দিল।
ঠিক তখনই গুদামঘরের বাইরে সাইরেন বেজে উঠল। আরিয়ান ও রবি পুলিশকে নিয়ে গুদামঘরে প্রবেশ করল।
পুলিশ যখন গুদাম ঘরে প্রবেশ করলো তখন দেখল মেয়র রাকিব ও তার দেহরক্ষী রা মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে ও কিছুটা দুরে আনোয়ার মোল্লার লাশ পরে আছে তার পাশেই শায়ন মিমোকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে মিমোকে মুক্ত করে, শায়ন তখন তার রক্তাক্ত হাতে মিমোর হাত ধরে ছিল। পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে বললেন, "কে খুন করেছে?"
শায়ন মিমোর দিকে একবার তাকাল, তারপর আনোয়ার মোল্লার লাশের দিকে।
শায়ন: "আমি, অফিসার। আমি আনোয়ার মোল্লাকে খুন করেছি।"
শায়ন মিমোর চোখে চোখ রাখল। তার চোখে ছিল এক গভীর ভালোবাসা, যা যেকোনো ত্যাগের জন্য প্রস্তুত।
পুলিশ শায়নকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিল। আরিয়ান ও রবি হতভম্ব হয়ে দেখছিল। মিমোর চোখ দিয়ে তখনো জল ঝরছে।
মিমো: "শায়ন, কেন তুমি নিজেকে বাঁচাতে দিচ্ছ না? কেন?"
শায়ন: (মুচকি হেসে) "ভালোবাসায় কোনো কেন নেই, মায়াবতী। শুধু আছে।"
শায়নকে নিয়ে পুলিশ ভ্যান চলে গেল। আরিয়ান ও রবি পুলিশের কাছে সকল প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ এবং ইয়াছিনের জবানবন্দি পেশ করল।
আদালতে শায়ন নিজেকে খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হল। আরিয়ান ও রবি তাদের কাছে থাকা ড্রাগ ডিলের সমস্ত তথ্য, ইয়াছিনের জবানবন্দি এবং মুশফিককে ফাঁসানোর প্রমাণ পেশ করল।
বিচারক সমস্ত তথ্য যাচাই করে দেখলেন—
১. মুশফিক সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হলো এবং তাকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হলো।
২. মেয়র রাকিবের রাজনৈতিক প্রভাব শেষ হলো এবং তার বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হলো।
৩. শায়ন খান তার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচানোর জন্য দোষ নিজের কাঁধে নেওয়ায় তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
রায় শুনে মিমো আদালতের ভেতরেই ভেঙে পড়ল। মুশফিক মুক্ত হলো ঠিকই, কিন্তু তার মুক্তির মূল্য দিতে হলো শায়নকে।
জেলখানায় শায়নের সাথে দেখা করতে গেল আরিয়ান। সে শায়নের হাতে একটা পুরোনো, হলদে হয়ে যাওয়া খাম ধরিয়ে দিল। এটা ছিল শায়নের সেই পুরোনো চিঠি, যা সে আট বছর আগে সিলেট ভ্রমণের দিন মিমোকে দিতে চেয়েছিল।
আরিয়ান: "মিমো এটা পেয়েছে... তোর পুরনো বইয়ের ভাঁজে। আর সাথে সেই ক্যামেরার ভিডিওটা। ও এখন সব জানে, শায়ন। শাকিলকে তুই কেন মেরেছিলি।"
শায়নের চোখ ভিজে এলো। সে চিঠিটা আরিয়ানের হাতে দিল।
খানিক বাদে মিমো এল, সম্পূর্ণ নিঃশব্দে। শায়নের হাতে হ্যান্ডকাফ।
মিমো: (চোখের জল ফেলে) "আমাকে কেন এত ভালোবাসলে, শায়ন? এতগুলো বছর আমাকে আগলে রেখেছ। শেষে কিনা আমার করা খুনও তুমি তোমার মাথায় নিয়ে জেল খাটছ! আমি তো তোমায় কোনোদিন ভালোবাসিইনি। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হলেও তো তুমি আমাকে ফাঁসাতে পারতে।"
শায়ন: (শান্ত, হাসিমাখা কণ্ঠে) "ভালোবাসায় কোনো প্রতিশোধ হয় না, মায়াবতী। শুধু আত্মসমর্পণ থাকে।"
অতীতে, গুদামঘরের অন্ধকারে...
ফ্ল্যাশব্যাক দেখানো হলো: মিমো যখন রড দিয়ে
ঠিক তখনই, বাঁধন ছিঁড়ে মিমো চিৎকার করে উঠল। তার চোখে তখন কোনো ভয় ছিল না, ছিল চরম ঘৃণা। সে চেয়ারের বাঁধন থেকে কোনোমতে হাত বের করে, টেবিলের ওপর পড়ে থাকা একটি ধারালো ধাতব রড তুলে নিল।
আনোয়ার তার দিকে ঘুরতেই মিমো সর্বশক্তি দিয়ে সেই রডটি আনোয়ারের পেটে সজোরে ঢুকিয়ে দিল!
আনোয়ারের মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল। সে স্তম্ভিত হয়ে মিমোর দিকে তাকাল। "তুই..." বলতে না বলতেই সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল।
শায়ন ও তার ওপর চেপে থাকা লোকগুলোও হতভম্ব হয়ে গেল। মিমো কাঁপছে, কিন্তু তার চোখে তখনো সেই ভয়ংকর জেদ।
শায়ন নিজেকে মুক্ত করে দ্রুত মিমোর কাছে গেল। মিমোর হাত থেকে রডটা নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলল এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।
শায়ন: "মিমো! তুমি এটা কী করলে!"
মিমো: (ফুঁপিয়ে কেঁদে) "ও আমাকে... তোমাকে... অপমান করতে চেয়েছিল। আমি পারতাম না, শায়ন! আমি তোমাকে আর কষ্ট দিতে পারতাম না!"
শায়ন : এই খুন তুমি করোনি এই খুন করেছি আমি শাস্তি আমার হবে আমি চাই না আমার মায়াবতীর উপর কোন কলঙ্কের দাগ পরুক তুমি আমাকে কথা দাও এই কথা তুমি কাউকে বলবে না।
মিমো তখন শায়নকে কথা দিয়েছিল তাই সে পুলিশকে কিছুই বলতে পারে নি।
বর্তমানে, জেলখানায়...
মিমো: "আমি আর তোমাকে আমার জন্য কষ্ট পেতে দেব না, শায়ন। আমি সব সত্য সবাইকে জানিয়ে দেব।"
শায়ন: (আর্তনাদ করে) "না! আমি চাই না আমার বাগানের ফুলের উপর কোনো কলঙ্কের দাগ পরুক, তাই এই কথা তুমি কাউকে বলতে পারবে না— আমায় কথা দাও! আর তুমি নতুন করে নিজের জীবন শুরু করবে, আমার জন্য তোমার জীবন নষ্ট করবে না। আর হ্যাঁ, আমি চাই তুমি আর কখনো আমার সাথে দেখা করতে আসবে না।"
শায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে গার্ডের দিকে ইশারা করল। মিমোর চোখের দিকে সে আর তাকাতে পারল না। মিমো পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। শায়ন ধীরে ধীরে ভেতরে চলে গেল।
মিমো চেয়েও আর কোনো দিন শায়নের সাথে দেখা করতে পারল না।
এখন মিমোর হাতে সেই আটবছরের পুরোনো চিঠি যেখানে লিখা ছিল,
আমার না হওয়া ভালোবাসা,
তুমি যদি আমার হতে, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান আর খুশি মানুষ হতো আমি। কোথাও পড়েছিলাম— মানুষ বাঁচে আফসোসে।ঠিক সেভাবেই আল্লাহ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন, কিন্তু তোমাকে না পাওয়ার আফসোসটা প্রতিদিনই আমাকে ভেতর থেকে পোড়ায়।
জানি না তুমি আমার ভাগ্যের মানুষ কি না, কিন্তু আমার দোয়া একটাই— মহান রব্বুল আলামীন যেন তোমার হৃদয়ের প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করেন, তোমার মুখের প্রতিটি হাসি চিরস্থায়ী করেন। আমি তোমাকে পাই বা না পাই আমি চাই তুমি যেন তোমার প্রিয় মানুষটাকে পাও কারণ আমি চাই না আমি যেই মরন যন্ত্রণায় ছটফট করছি তুমি সেই যন্ত্রণা সহ্য কর , কারন তুমি আমার বাগানের সবচেয়ে পবিত্র ফুল।
তোমায় পাই বা না পাই, আমি তোমায় চিরকাল, আমৃত্যু ভালোবাসবো— এটাই আমার সবচেয়ে বড় সত্য আমার হৃদয়হরনী ♥️