প্রত্যাবর্তন (Come back)
(একটি চমৎকার ঘটনা)
ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
একাধিকবার বলতে শুনেছি যে, বনি ইসরাইলে কিফল/কিফিল নামে এক ব্যক্তি ছিল।
সে কোনো গুনাহের কাজই বাদ দিত না।
ভয়ঙ্কর গুনাহের দিকে যাত্রা:
একবার চরম অভাবের তাড়নায় এক সুন্দরী মহিলা তার কাছে এলো।
কিফল/কিফিল তাকে এই শর্তে ষাট দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিল যে, মহিলাটি তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে।
মহিলাটি তার শর্ত মেনে নিল।
আল্লাহর ভয়ে ভীত হওয়া:
যখন কিফল/কিফিল সেই মহিলার সাথে বদকাজ করতে উদ্যত হলো, তখন মহিলাটি হঠাৎ কাঁপতে শুরু করলো
এবং কেঁদে ফেলল। কিফল/কিফিল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে জোর করছি?"
মহিলার দৃঢ়তা:
মহিলাটি উত্তর দিল, "না, তুমি আমাকে জোর করছো না। তবে আমি জীবনে এই গর্হিত কাজ কখনো করিনি।
আজ কেবল চরম অভাবের তাড়নায় পড়ে এতে বাধ্য হচ্ছি। আর আমার আল্লাহর ভয়ে এমন হচ্ছে।"
কিফলের/কিফিলের উপলব্ধি ও সঠিক শিক্ষা:
মহিলাটির কথা শুনে কিফল/কিফিল ভীষণভাবে অনুতপ্ত হলো এবং তার বিবেক জাগ্রত হলো।
সে ভাবলো—"আমি এই মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করছি না,
তবুও শুধু আল্লাহর ভয়ে সে এমন কাঁপছে এবং কাঁদছে! আর আমি কিনা নিয়মিতভাবে সব গুনাহে লিপ্ত থাকি!
এই মহিলা যখন অভাবে পড়েও আল্লাহর ভয়ে ভীত, তখন আমার মতো ব্যক্তির উচিত এক্ষুণি এই গুনাহ থেকে ফিরে আসা।"
সে তখন মহিলাটিকে বলল, "অভাবের তাড়নায় পড়ে এসেছো অথচ কখনো তা করোনি?
যাও, তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম। আর দিনারগুলোও তোমারই।"
পাক্কা তাওবা ও ফলাফল:
কিফল/কিফিল সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করলো (তওবা করলো),
"আল্লাহর কসম! এরপর আর কখনো আমি আল্লাহর নাফরমানী (অবাধ্যতা) করব না।"
সেই রাতেই কিফল/কিফিল মৃত্যুবরণ করলো।
পরদিন সকালে দেখা গেল, তার ঘরের দরজায় লেখা রয়েছে:
"আল্লাহ্ তা'আলা কিফল/কিফিলকে মাফ করে দিয়েছেন।"
গল্পের শিক্ষাঃ
তাওবার গুরুত্ব: একজন মানুষ যত বড় গুনাহগারই হোক না কেন, যদি সে sincerely (আন্তরিকভাবে)
তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করে,
তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কিফল/কিফিল তার সারা জীবনের খারাপ কাজের উচিত শিক্ষা নিলেন
এবং এক রাতের তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা পেয়ে গেলেন।
তাৎক্ষণিক তাওবা: যখনই গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে বা আল্লাহর ভয় আসবে,
তখনই দেরি না করে গুনাহ থেকে ফিরে আসা উচিত।
গুনাহ থেকে মুক্তি: কোনো অভাব বা প্রলোভন যেন মানুষকে গুনাহের পথে ঠেলে না দেয়,
বরং আল্লাহর ভয় যেন সবকিছুর ওপর স্থান পায়।
**আল্লাহর ভয় গোনাহ পরিহারে বিবেককে জাগ্রত রাখে।
**গোপনে ও নির্জনে আল্লাহকে বেশি ভয় করা।
কেননা নির্জনতায় গোনাহের অবস্থা মানুষের জানার ভয় থাকে না বিধায় মানুষ নিশ্চিন্তভাবে গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
সুতরাং নির্জনে ‘আল্লাহর ভয়-ই’ মানুষকে গোনাহ থেকে হিফাজত করে।
**চরম অর্থাভাব ও অভাব-অনটনেও হারাম কাজে লিপ্ত না হওয়া।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে আর্জি............
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারীদের সাথে সাথে পুরুষদেরকেও তাকওয়ার অধিকারী হওয়ার (আল্লাহর ভয় অর্জন করার) তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্রঃ (তীরমিযী-২৪৯৬, মুসনাদে আহমাদ-৪৭৪৭)