গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি ছোট কুঁড়েঘর। সেখানে থাকে নীলয়—ক্লাস নাইনের এক সাধারণ ছাত্র। দিনভর স্কুল, তারপর টিউশন, আর সন্ধ্যায় নদীর ধারে একটু হাঁটাহাঁটি—এই ছিল তার রুটিন।
একদিন বিকেলে নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ দেখল, পানির ওপর ভাসছে একটা কাগজের নৌকা। নৌকার মাথায় ছোট্ট করে লেখা— “যে স্বপ্ন দেখে, সে-ই এগিয়ে যায়।”
নীলয় কাগজটা তুলে নিল। ভেজা কাগজের সেই ছোট্ট লাইনে যেন কোনো অদ্ভুত শক্তি ছিল। সে বুঝল না কে লিখেছে, কিন্তু লাইনটা তার মনকে ছুঁয়ে গেল।
পরের দিনও স্কুল থেকে ফেরার পথে সে নদীর কাছে গেল। আশ্চর্যের বিষয়—আজও ভাসছে আরেকটি কাগজের নৌকা! এবারের বার্তায় লেখা— “যা শিখছ, তা একদিন তোমাকেই পথ দেখাবে।”
এভাবে প্রতিদিনই নীলয় নতুন নতুন বার্তা পেতে লাগল। বার্তাগুলো তাকে আরও মনোযোগী, আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলল। সে ক্লাসে আরও ভালো ফল করতে শুরু করল, শিক্ষকরা তার পরিবর্তনে অবাক হয়ে গেলেন।
একদিন সকালে নীলয় সিদ্ধান্ত নিল, এই রহস্যময় নৌকা যার, তাকে খুঁজে বের করবে। নদীর পাড় ধরে কয়েক দূর এগোতেই সে দেখল—একজন বৃদ্ধ মানুষ কাগজ ভাঁজ করছেন।
নীলয় এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“দাদু, এই নৌকাগুলো কি আপনি নদীতে ছাড়েন?”
বৃদ্ধ হাসলেন।
“হ্যাঁ বাবা, আমি তো বার্তা পাঠাই… কিন্তু কে পায়, তা কখনো দেখি না।”
নীলয় বলল, “আপনার লেখা কথাগুলো আমাকে বদলে দিয়েছে। আমি আগে নিজের ওপর বিশ্বাস করতাম না।”
বৃদ্ধের চোখ ঝলমল করে উঠল।
“তাই নাকি? দেখো বাবা, আমরা সবাই অন্ধকারে হাঁটি। কিন্তু কারও বলা একটা ছোট্ট বাক্যই অনেক সময় পথ দেখাতে পারে।”
নীলয় মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
সেদিন সে বুঝল—শব্দের শক্তি কত গভীর, আর মানুষ মানুষকে অল্পতেই কত আলো দিতে পারে।
বাড়ি ফেরার পথে আকাশের দিগন্তে সূর্যের শেষ আলো ঝলমল করছিল। নীলয় মনে মনে ভাবল—
“আমিও একদিন এমন আলো ছড়াব, যা অন্য কাউকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস দেবে।”