গল্পের নাম: হতাশা
পড়তে আনুমানিক দুই মিনিট সময় লাগবে।
শহরের এক কোণে এক সাধারণ মানুষ থাকত। নাম তার রাশেদ।
রাশেদ খুব পরিশ্রমী ছিল, কিন্তু এক অদ্ভুত রোগে ভুগত—হতাশা।
যেদিকে তাকায়, সেখানেই যেন তার চোখে ধরা পড়ে অন্ধকার।
সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা খুললেই সে বলত,
“আহ্, আলোটা ঠিক লাগছে না… আজও ভালো কিছু হবে না।”
তারপর কাজের পথে হাঁটার সময় ছোট্ট কোনো ভুল দেখলেই মনে করত—
“এই ভুলের জন্য আজ পুরো দিন নষ্ট হয়ে যাবে।”
অফিসে সবাই তাকে সম্মান করত, কিন্তু সে ভাবত—
“ওরা হয়তো ভদ্রতার জন্য কথা বলে। আসলে কেউ আমাকে পছন্দ করে না।”
একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টি নেমে গেল।
সবার মতো সেও ছাতা আনেনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজতে ভিজতে সে বলল,
“দেখ, আজও আমার জন্য এমনই। সবকিছুই ভুল, সবকিছুই ব্যর্থ।”
বৃষ্টিভেজা রাস্তার পাশে এক সাবেক শিক্ষক তাকে চিনে ফেললেন।
শিক্ষক কাছে এসে নরম গলায় বললেন,
“রাশেদ, আল্লাহ্ মানুষকে পরীক্ষা দেন, আর পরীক্ষার মধ্যেই থাকে উন্নতির সুযোগ।
তুমি শুধু ব্যর্থতা দেখো বলেই পৃথিবী তোমাকে ব্যর্থ মনে হয়।”
রাশেদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
শিক্ষক আবার বললেন,
“হতাশা হৃদয়কে অন্ধ করে দেয়। কিন্তু তুমি যে শ্বাস নিচ্ছ, যে বাঁচছ—
এটাই তো এক বড় দয়া। আল্লাহ্ দয়ালু, তাঁর প্রতি ভরসা রাখো।”
রাশেদ প্রথমবার নিজের ভেজা কাপড়ের দিকে নয়, নিজের হৃদয়ের দিকে তাকাল।
বুঝল, সে কতদিন শুধু অন্ধকারই খুঁজে বেড়িয়েছে।
যেদিকে হতাশা দেখত, সেখানে হয়তো আশা লুকানোই ছিল।
সেদিন বাড়ি ফিরে সে ছোট একটা কাজ করল—
নিজের খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজকের দিনটি কঠিন ছিল, কিন্তু আল্লাহ্ আমাকে টিকিয়ে রেখেছেন।
এটা যথেষ্ট।”
হতাশা পুরোটা সেদিন যায়নি,
কিন্তু একটুখানি আলো ঢুকে পড়েছিল।
এবার সে জানল—
আলোর জন্য এক ফোঁটা বিশ্বাসই যথেষ্ট।