সময় ও তিন ভাই
(চমৎকার একটি শিক্ষণীয় গল্প )
প্রাচীনকালে ইয়েমেনের উপকূলে এক ছোট গ্রাম ছিল। সেখানে আদল, ফাহম এবং জাহিদ নামে তিন ভাই বাস করত।
তারা প্রত্যেকেই ছিল কর্মঠ, কিন্তু তাদের জীবনের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন।
একদিন তাদের গ্রামে একজন অপরিচিত বৃদ্ধ এলেন। তার চেহারা ছিল প্রজ্ঞাময়, হাতে ছিল একটি স্ফটিক পাথরের দণ্ড।
গ্রামবাসী তাকে 'ওয়াকত' (সময়) নামেই ডাকতে শুরু করল। তিনি ঘোষণা করলেন—
"আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক উপহার দেব,
যা তোমরা তোমাদের জীবনকে সাজাতে ব্যবহার করতে পারবে।
তবে একটি শর্ত: উপহারটি প্রত্যেকের হাতে একবারই আসবে, এবং তা কেবল এক ঘণ্টা স্থায়ী হবে।"
উপহারটি ছিল একটি 'সময় দাতা' যন্ত্র, যা দিয়ে নিজের জীবনে একটি নির্দিষ্ট এক ঘণ্টা সময়কে
সে তার ইচ্ছামত যেকোনো একটি কাজে ব্যবহার করতে পারবে, যা সাধারণত সারা দিনে করা সম্ভব হয় না।
প্রথম ভাই আদল (ন্যায়পরায়ণ): আদল ছিল বস্তুবাদী এবং লাভ-ক্ষতির হিসেব কষত।
সে ভাবল, এই এক ঘণ্টা দিয়ে সবচেয়ে বেশি ধন-সম্পদ অর্জন করা উচিত।
ব্যবহার: সে তার এক ঘণ্টা ব্যবহার করে বাজারে গিয়ে একটি বড় লেনদেন দ্রুত সম্পন্ন করল,
প্রচুর লাভ করল এবং একটি মূল্যবান অলঙ্কার কিনল।
ফলাফল: সে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে অলঙ্কারটি দেখছিল। কিন্তু পরের দিন সে দেখল, অলঙ্কারটি চুরি হয়ে গেছে।
তার লাভ ছিল ক্ষণস্থায়ী।
দ্বিতীয় ভাই ফাহম (বুদ্ধিমান): ফাহম ছিল জ্ঞানী এবং বই পড়তে ভালোবাসত।
সে ভাবল, সময় হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের জন্য।
ব্যবহার: সে তার এক ঘণ্টা সময় ব্যবহার করে প্রাচীন এক দুর্লভ গ্রন্থের একটি কঠিন অধ্যায় মুখস্থ করে ফেলল।
ফলাফল: সে মনে মনে তৃপ্ত হলো। কিন্তু কিছুদিন পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ল।
অসুস্থতার কারণে সে সেই মুখস্থ করা জ্ঞান ভুলে যেতে শুরু করল।
তার জ্ঞান ছিল দুর্বল স্মৃতিশক্তির কাছে পরাধীন।
তৃতীয় ভাই জাহিদ (তপস্বী): জাহিদ ছিল আধ্যাত্মিক এবং আখিরাত নিয়ে চিন্তিত।
সে জানত, দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি স্থায়ী।
ব্যবহার: সে তার এক ঘণ্টা সময় ব্যবহার করে গভীর রাতে আল্লাহর ইবাদতে (নামাজ ও তাহাজ্জুদ) ব্যয় করল।
সে এমন মনোযোগ ও নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করল, যা অন্য সময় শত চেষ্টা করলেও সম্ভব হতো না।
ফলাফল: যখন তার ভাইয়েরা তাদের ক্ষতির জন্য আফসোস করছিল, তখন জাহিদ ছিল শান্ত।
সে জানত, তার এক ঘণ্টার ইবাদত আল্লাহর খাতায় স্থায়ীভাবে লেখা হয়ে গেছে
এবং তা চুরি হবে না বা ভুলে যাওয়া যাবে না।
এই এক ঘণ্টা তার মনে এক অভূতপূর্ব ঈমানী আলো ও প্রশান্তি এনে দিল,
যা তার বাকি জীবনকে আলোকিত করে তুলল।
🌟 গল্পের মূল শিক্ষা (ঈমানী দূরদর্শিতা):
১. স্থায়ী নাকি ক্ষণস্থায়ী: জীবন আমাদের যে সুযোগগুলো দেয়, সেগুলোকে যেন আমরা শুধু দুনিয়াবী লাভ (আদল)
বা ক্ষয়শীল জ্ঞান (ফাহম) অর্জনে ব্যবহার না করি। বরং সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো যা আল্লাহর কাছে স্থায়ী (জাহিদ)।
২. সুযোগের সদ্ব্যবহার: জীবন হচ্ছে 'ওয়াকত' দাতা কর্তৃক দেওয়া সুযোগের মতো।
প্রতিটি মুহূর্তকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যেন তা আখিরাতে আমাদের উপকারে আসে।
৩. আখিরাতের সম্পদ: সম্পদ চুরি হতে পারে, জ্ঞান ভোলা যেতে পারে,
কিন্তু ঈমান ও নেক আমলের প্রশান্তি কখনোই হারিয়ে যায়না। এটাই হলো প্রকৃত শিক্ষা।
আল্লাহ বলেন-
সময়ের কসম,
নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত,
কিন্তু তরা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে সৎ কাজ করে
এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের। (সূরা আল আসর)
সুতরাং আসুন আমরা বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সময়ের যথার্থ ব্যবহার করি। আখিরাতের জন্য প্রয়োজনীয় সম্বল সংগ্রহ করি।