কখনো হারিয়ে গেলে…
মাঝ দরিয়ায় এক জাহাজ প্রচন্ড তুফানের মধ্যে পড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক মুসাফির ভাসতে ভাসতে এক নির্জন দ্বীপে এসে পৌঁছালো। ক্লান্তিতে অবসন্ন শরীরে সে ঘুমিয়ে পড়ল সাথে সাথেই। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর কাছে প্রান খুলে শুকরিয়া জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্যে। সময় এগুতে লাগল তার আপন গতিতে। প্রতিদিন সেই ব্যক্তি দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো যদি কোনো জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো। এভাবে বহুদিন পেরিয়ে গেল। অনেক কষ্টে সে একটা ছোট ঘর তৈরী করে ফেললো। মাছ ধরে এবং বন থেকে ফলমূল খেয়ে জীবনযাপণ করতে লাগল।
ধীরে ধীরে এই জীবনে সে অভ্যস্ত হয়ে উঠল। এই দ্বীপ থেকে বেঁচে ফেরার ব্যাপারে কোনো পথই সে দেখতে পেল না– হয়ত বা এ পথ ধরে কখনো কোনো জাহায যাওয়া আসা করে না। কিন্তু সে নিরুপায় হয়েও আল্লাহর কাছে দুআ করা চালিয়ে গেল।
একদিন সে খাবারের খোঁজে বনের মধ্যে গেল। বন থেকে যখন ফিরে এলো তখন দেখল– তার রান্না করার উনুন থেকে আগুন লেগে পুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং তার কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গিয়েছে। লোকটি তার সম্বল হারিয়ে খুব কষ্ট পেলো। কয়েকঘন্টা পরে শুরু হলো বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে সে ভিজে গেল, এভাবেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল। সব কিছু তার কষ্ট বাড়িয়ে তুলল, কিন্তু সে আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করল। কারণ এখনো সে অন্তত জানে বেঁচে আছে, তার সাথীদের কতজনই হয়ত সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর এক আওয়াজে তার তন্দ্রা ভাঙলো। চোখ খুললে সে বুঝল একটা জাহাজ এগিয়ে আসছে। সে জাহাযের দিকে এগিয়ে গেল। চিৎকার করতে লাগল। জাহাজ কাছে এলে সে অবাক হয়ে নাবিক কে বলল,
‘তোমরা কি জানতে যে আমি এখানে আটকা পড়ে আছি?’
জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো, ‘হ্যাঁ, তোমার জ্বালানো ধোঁয়ার সংকেত দেখেই আমরা এসেছি ।'
লোকটি অত্যন্ত আশ্চর্য হলো এবং সিজদায় আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করল।
শোক করো না। তুমি যাই হারাও না কেন
তা অন্য কোনো রূপে ফিরে আসবে।
(মাওলানা জালালুদ্দিন রহমাতুল্লাহ আলেহ)