
মানুষের করা প্রশংসা বা নিন্দার আছরের ফলে অন্তরের শান্ত অবস্থা বিনষ্ট হয়। অন্তরে অস্থিরতা তৈরি হয়। অস্থির অন্তর পথচ্যূত হওয়ার জন্য খুবই উপযোগী। পথচ্যুত হওয়ার অর্থ হল আল্লাহর হেদায়েত, নিরাপত্তা, দয়া ও হাওলা থেকে দূরে সরে যাওয়া। পথচ্যুত অন্তর মানুষের প্রশংসা বা নিন্দার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে চায় ও নানা প্রতিক্রিয়া দেখানোর আদেশ দেয়। এভাবে অন্তর মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পথে আগাতে থাকে।
প্রকৃত হাকিকাত হলো, প্রশংসা বা নিন্দা করা মানুষগুলো শেষ পর্যন্ত আপনার অন্তরকে তাদের নিজ প্রবৃত্তি অনুযায়ী নাচিয়েই সুখ খুঁজবে। তাদের সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। মানুষের দেয়া তীক্ষ্ণ আচড়গুলো আপনার হৃদয়কে অবশেষে ক্ষত-বিক্ষতই করবে। এক পর্যায়ে, আল্লাহ অভিমুখী অবস্থান থেকে নিজের অন্তরকে দূরে সরিয়ে নেয়ার স্বাদ আপনি হাড়ে-মাংসে টের পাবেন।
“যেসব মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার উপরে সন্তুষ্ট হয়নি
যদিও তিনি তাদের সবকিছুর দাতা,
তারা কীভাবে তাদের মত অন্য একজন সৃষ্টির
উপরে সন্তুষ্ট হতে পারে?”
(আল হাসান আল-বাসরি (রহ))
আল্লাহ থেকে দূরে সরে গেলে অন্তর দিন দিন অসুস্থতা, শ্রান্তি আর ব্যথায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। তাই মানুষের করা প্রশংসা ও নিন্দার আছর থেকে হৃদয়কে রক্ষা করে নিরাপদ রাখা হিদায়েতের পথযাত্রীদের জন্য অপরিহার্যক।
বাইরের কুপ্রভাব থেকে হৃদয়কে রক্ষা করার উপায় হলো মহান আল্লাহর স্বত্ত্বা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা ও তার মহানত্ব ও মহিমা হৃদয়ে অনুভব করা। আল্লাহর সামনে নিজ হৃদয়কে পুরোপুরি সমর্পিত করা। হৃদয় সবকিছুর মাঝেই অনুভব ও স্মরণ করবে– আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতা, তাঁর অপরিসীম দয়া, একক কর্তৃত্ব এবং অবিভাবকত্ব।
হৃদয় আনন্দিত হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিতে। অস্থির-ব্যাথিত হবে তাঁর নাফরমানীর ভয়ে। অন্তর ভীত হবে তাঁর থেকে দূরে সরে গেলে অনিরাপত্তার আশঙ্কায়। এভাবে ধীরে ধীরে হৃদয় সুরক্ষিত দূর্গে পরিণত হয়। বাইরের সমস্ত কুপ্রভাব থেকে নিরাপদ থাকবে।
অর্ধেকটা জীবন হারিয়ে যায় অন্যদের খুশি করতে গিয়ে,
বাকি অর্ধেকটা হারায় অন্যদের কারণে তৈরি হওয়া
দুশ্চিন্তা ও উতকণ্ঠায়। এই খেলা ছাড়ো, যথেষ্ঠ খেলেছ তুমি।
(মাওলানা জালালুদ্দীন রুমি (রাহ))