Posts

গল্প

বিশেষ সম্পর্ক ও বিশেষ হিসাব

December 8, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

11
View

বিরুদ্ধাচরণের অপরাধে এক ব্যক্তিকে রাজা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিল। বেচারাকে পাকড়াও করা হলো। তাকে জনসম্মুখে শূলিতে উঠানো হবে। রাজার অনুগত লোকেরা দীর্ঘ সারি দিয়ে একে একে শূলীমঞ্চের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে লাগল, লোকটিকে কেউ বিদ্রুপ করছিল, কেউ মন্দ ভাষায় গালি দিচ্ছিল। আর সবাই তার দিকে আবর্জনা ছুড়ে মারছিল। রাজার আদেশ। 

লোকটির হৃদয় কষ্টে বিদীর্ণ হতে চাইলেও সে ছিল চুপচাপ, নির্বিকার; ভাবলেশহীন চেহারায় সে শূন্যে তাকিয়ে ছিল। বদ লোকগুলোর করা অপমান, গালি, ঠাট্টা ইত্যাদিকে পাত্তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে। সে কাউকেই কিছু বলছিল না। 

লোকটির স্ত্রী ছিল এবং স্ত্রীকে সে খুবই ভালোবাসত। স্ত্রী ভাবল তার স্বামী ভালো মানুষ, নির্দোষ। মানুষগুলো তার স্বামীর উদ্দেশ্যে আবর্জনা ছুড়ে মারছে; তার উচিত তার স্বামীর উদ্দেশ্যে সুন্দর ফুল ছুড়ে দেয়া। ভাবনা অনুযায়ী মহিলাটি লোকেদের সারিতে দাড়াল, একসময় শূলীমঞ্চের সামনে এসে তার স্বামীর উদ্দেশ্যে এক গুচ্ছ ফুল ছুড়ে দিল। ব্যাপারটি দেখে লোকটির  কিছুটা হলেও খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু লোকটি নিস্তব্ধতা ভেঙে উঁচু কন্ঠে তার স্ত্রীর প্রতি কী যেন বলতে লাগল। কন্ঠে ছিল স্ত্রীর প্রতি রাগ, অভিমান। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। কী বলছে – স্ত্রী জিজ্ঞেস করলে স্বামী ক্রুব্ধ ভাবে জানতে চাইল, “ কীভাবে তুমি এই মন্দ লোকগুলোর পিছু পিছু আসতে পারলে,  তাদের সারিতে শামিল থাকলে, যারা আমাকে অপমানিত করছে, আমাকে গালি দিচ্ছে? আমাকে অপমানকারীদের সারিতে আজ তোমাকে দেখতে হলো !” 

অগনিত লোকের মন্দ আচরণ তুচ্ছ করে দেখলেও  স্ত্রীর কাজটি লোকটিকে যেন বেশি কষ্ট দিয়েছিল। যদিও তার স্ত্রী ফুলই ছুড়ে মেরেছিল। স্ত্রীর প্রতি রাগ মূলত তার ভালোবাসা ও প্রত্যাশারই বহিঃপ্রকাশ। আসলে সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিবেচনা ও হিসাব-নিকাশ সমান হয় না। 
 

Comments

    Please login to post comment. Login