Posts

গল্প

কোমলতা

December 8, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

13
View

                      


                                      যে বাতাস গাছ উপড়ে ফেলে, 
                          সেই বাতাসেই ঘাস পরিস্কার হয়ে উঠে,
                                          দুলতে থাকে।
                    আল্লাহ ঘাসের দূর্বলতা ও নমনীয়তা পছন্দ করেন। 
                             (মাওলানা জালালুদ্দিন রহমাতুল্লাহ আলেহ)

ক্রুসেডার বনাম মুসলিমদের ব্যাপক ও বিস্তৃত যুদ্ধে শামের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে তখন টালমাটাল অবস্থা। সুলতান সালাহুদ্দীন সৈন্যদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এমনই একদিন সন্ধ্যার দিকে সুলতান জাফার উদ্দেশ্যে রওনা করলেন এবং সকাল সকাল জাফায় এসে পৌঁছলেন । ব্যাপারটা সেখানের ক্রুসেডারদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল । 


জাফায় রিচার্ডের অধীন ক্রুসেডার বাহীনিতে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী এবং প্রায় ৩০০ পদাতিক সৈন্য ছিল। রিচার্ড দূর্গের প্রাচীরের বাইরে তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপন করেছিল। তাদের সাথে রসদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সালাহুদ্দীনের আগমনের খবরে  সেনাদল রিচার্ডকে জাগিয়ে দেয়া মাত্রই সে ঘোড়ায় আরোহন করল। লোকটি নিজেকে প্রচন্ড দুঃসাহসী ভাবত, নিজের সমরবিদ্যার  জোড় পরীক্ষা করতে অতি-উৎসাহী হয়ে উঠল। তার সৈন্যরা প্রাচীরের ভেতরে প্রবেশে অনুমতি পেল না। সে মুসলিম বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল । 

ইতিমধ্যেই মুসলিম বাহিনী সমুদ্রের দিক বাদে তিন দিক থেকে তাদেরকে ঘিরে ফেলেছিল। সুলতান সালাহুদ্দীন তার সেনাবাহিনীকে সুযোগের চূড়ান্ত সদব্যহার করে আঘাত হানার নির্দেশ দিলেন। মুসলিমদের বিজয় প্রায় শতভাগ নিশ্চিত ছিল। তখনই এক কান্ড ঘটলো: একজন আমির সুলতানকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা কর্কশ ভাষায় বললেন, এই যুদ্ধে পর্যাপ্ত যুদ্ধলব্ধ সম্পদ পাওয়া যাবে না। সে যুদ্ধে তার অনাগ্রহের বুঝিয়ে দিল। সুলতান শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন আমিরের কথায়। তিনি ভাবতেই পারছেন না, তার আমীর এরকম আনাড়ি মানসিকতার হতে পারে। সাথে সাথে সুলতান ক্ষুব্ধ মানুষের মতো নিজের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরলেন। কারণ তিনি বুঝতে পারলেন তার সৈনিকেরা আজ ভালো কিছু করতে পারবে না। সৈন্যদের নিয়্যত ও মনোবল সেই আমিরের নিচু মানসিকতার প্রভাবে কম বেশি দোটানা তৈরি করবেই। অথবা সৈন্যদের মনোভাবই সেই আমিরকে পরাস্ত করেছে। 

সুলতান বাহিনীকে ওখানে রেখে সরে এলেন। তার জন্য যে তাঁবুটি খাটানো হয়েছিল তা খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। মুসলিম সেনাবাহিনীও শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ছেড়ে সরে এলো। সুলতানের এই নাখোশ মনোভাব সবাইকে ভীত করে তুলল। অনেকে হয়ত ভাবছিল, সুলতান আজ বহু সংখ্যক সৈন্যকে কঠিন শাস্তি দিবেন। এই কান্ডের মূল হোতারা হয়ত মৃত্যুদন্ডের আশংকা করছিল।

সুলতানের পুত্র আজ জাহির জানিয়েছেন যে ,তিনি সেদিন এতটা ভয় পেয়েছিলেন যে সুলতানের চোখের সামনে পড়ার দুঃসাহস করতে পারছিলেন না। যদিও তিনি সুলতানের নির্দেশে আক্রমণ চালিয়েছিলেন এবং অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। 
সুলতান ফিরে চলতে চলতে ইয়াযুরে এসে যাত্রা বিরতি করলেন। তার জন্য তাঁবু খাটানো হলো। তিনি তাতে অবস্থান নিলেন। আমিররা সবাই ভয়ে কাঁপছিলেন। প্রত্যেক্যেই অপেক্ষা করছিলেন পাকরাও ও তিরস্কারের। কেউ সুলতানের তাঁবুতে যেতে সাহস করছিল না। সুলতান তার বন্ধু ইবনু সাদ্দাদকে তাঁবুতে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁবুতে প্রবেশ করে দেখলেন, দিমাশক থেকে অনেক ফলমূল উপঢৌকন এসেছে। সুলতান তাকে বললেন, আমিরদেরকে ডেকে নিয়ে এসো। তারা ফলমূল গ্রহণ করুক।”
সবাই আশংকা নিয়ে তাঁবুতে প্রবেশ করলেন। কিন্ত তারা সুলতানকে প্রসন্ন দেখতে পেলেন। ফলে তাদের ভয় কেটে গেল। সবার মাঝে স্বস্তি ও আনন্দ ফিরে এলো। সুলতানের সাথে ভোযে অংশ নিল সবাই। খাওয়া শেষে সবাই নিজ তাড়নায়  যুদ্ধের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিল। নিজেদের শোধরানোর ইচ্ছা নিয়ে আনুগত্যের সাথে তাঁবু থেকে বের হলো। তাদের আনন্দিত চেহারা দেখে মনে হলো যেন সেদিন কিছুই ঘটেন নি। (মুহতারাম আব্দুস সাত্তার আইনী কর্তৃক অনূদিত ইবনু সাদ্দাদ রাহিমাহুল্লাহ এর দিনলিপি থেকে সংগৃহিত)

 

কোমলতা, ভদ্রতা সবসময়ই কল্যাণকর। কোমলতা আল্লাহর রহমতকে আহ্বান করে। কঠোর কর্কশ আচরণ প্রতিবন্ধক দেয়ালের মত আল্লাহর রহুত ও অনেক কল্যাণ প্রাপ্তির পথে বাঁধা দাঁড়ায়। হাদিসে এসেছে, 


                       তিনি (আল্লাহ) নম্রতার কারণে এমন কিছু দান করেন 
                                      যা কঠোরতার কারণে দান করেন না।
                      
     


 

Comments

    Please login to post comment. Login