Posts

গল্প

দরবেশের আয়না এবং দু'জন পথিক

December 9, 2025

Md. Lalon Shaikh

50
View

💎 দরবেশের আয়না এবং দু'জন পথিক

প্রাচীন বাগদাদের পথে, যেখানে জ্ঞান ও রহস্যের সংমিশ্রণ ঘটত, সেখানে এক রহস্যময় দরবেশ বাস করতেন। 

তাঁর কাছে একটি অদ্ভুত আয়না ছিল। এই আয়না সাধারণ চেহারা দেখাত না, 

বরং মানুষের ভেতরের উদ্দেশ্য এবং ঈমানের অবস্থা প্রতিফলিত করত।

দুই পথিক:

এক সন্ধ্যায়, দুজন পথিক বাগদাদের ফটকের কাছে এসে পৌঁছাল।

১. প্রথম পথিক (হাসান): সে ছিল সুদর্শন, দামি পোশাক পরা এবং মুখে সর্বদা ছিল ইবাদতের লম্বা লম্বা কথা। 

সে যেখানেই যেত, মানুষকে নিজের জ্ঞানের কথা ও দানশীলতার গল্প শোনাত।

সে বিশ্বাস করত, ঈমানকে অবশ্যই শব্দে ও প্রদর্শনে প্রকাশ করতে হবে।

২. দ্বিতীয় পথিক (হোসাইন): সে ছিল সাধারণ পোশাকে, নীরব ও নম্র। 

সে দিনের বেলায় শহরে মজুর খাটত এবং সংসারের ব্যয় মিটানোর পাশাপাশি-

 রাতে তার সামান্য রোজগার থেকে অভাবীদের খাবার কিনে দিত।

তার ভালো কাজগুলো সব সময় গোপন থাকত।

পরীক্ষা:

দু'জনই দরবেশের আয়নার কথা শুনে তার সাথে দেখা করতে গেল।

প্রথমে হাসান প্রবেশ করল। সে দরবেশকে সম্মান জানাল এবং 

তার দীর্ঘ ইবাদত ও দান-খয়রাতের কথা ফলাও করে বলল। 

এরপর সে আয়নার সামনে দাঁড়াল।

আয়নায় হাসিমুখে থাকা হাসানের প্রতিচ্ছবি দেখা গেল,

কিন্তু সেই প্রতিচ্ছবির হৃদয়ের স্থানে একটি ক্ষুদ্র ও উজ্জ্বল রত্ন দেখা গেল।

রত্নটি বাইরে থেকে আসা আলোয় চিকচিক করছিল, কিন্তু তার নিজস্ব কোনো দ্যুতি (আলো) ছিল না।

এরপর হোসাইন প্রবেশ করল। সে চুপচাপ দরবেশকে সালাম দিল এবং নিজের কথা তেমন কিছুই বলল না।

শুধু বলল, "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই।"

যখন সে আয়নার সামনে দাঁড়াল, তখন তার সাধারণ চেহারাই দেখা গেল। 

কিন্তু তার প্রতিচ্ছবির হৃদয়ের স্থানে একটি নিঃশব্দ, গভীর এবং অবিচল আগুনের ফুলকি দেখা গেল। 

সেই ফুলকিটি নিজের শক্তিতেই জ্বলছিল, বাইরের আলোর উপর তার কোনো নির্ভরতা ছিল না।


দরবেশের ব্যাখ্যা ও উচিত শিক্ষা:

দরবেশ দুজনকে ডেকে আয়নার রহস্য বুঝিয়ে বললেন:

"হে পথিকগণ, তোমাদের কাজই তোমাদের প্রতিচ্ছবি। হাসান, তোমার হৃদয় হল রত্নের মতো। 

বাইরের মানুষ যখন তোমাকে দেখছে এবং প্রশংসা করছে, তখন সেই বাহ্যিক আলোর প্রভাবেই তোমার ঈমান উজ্জ্বল হচ্ছে। 

কিন্তু প্রশংসা চলে গেলে, তোমার ঈমানের সেই ঔজ্জ্বল্যও ম্লান হয়ে যাবে। 

তোমার কাজগুলো লোক দেখানো, তাই তোমার ঈমান পরনির্ভরশীল (রিয়া)।"

"আর হোসাইন, তোমার হৃদয় হলো আগুনের ফুলকির মতো। 

তোমার কাজগুলো সম্পূর্ণ আল্লাহর জন্য গোপন থাকার কারণে, তোমার ঈমান বাইরের কোনো প্রশংসা বা আলোর উপর নির্ভর করে না। 

এটি তার নিজস্ব শক্তি ও নিষ্ঠায় দীপ্তমান। এই নীরবতাই তোমার ঈমানকে শাশ্বত ও অবিচল রাখবে।"

শিক্ষা ও পরিবর্তন:

হাসান তার ভুল বুঝতে পারল। সে লজ্জিত হয়ে দরবেশের কাছে ক্ষমা চাইল এবং প্রতিজ্ঞা করল যে, 

এরপর থেকে সে তার সব সৎ কাজ গোপনে করবে। হোসাইন নীরবে আল্লাহকে (আলহামদুলিল্লাহ্) ধন্যবাদ জানিয়ে তার পথে চলতে শুরু করল।

🌟 গল্পের মূল শিক্ষা

১. ইখলাসের মূল্য (একনিষ্ঠতা): সবচেয়ে মূল্যবান ইবাদত বা সৎকাজ সেটিই, 

যা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় এবং মানুষ যার খবর পায় না।

২. নীরব সেবা: প্রকৃত ঈমান হলো সেই আগুনের মতো, যা নিজের জোরে জ্বলে।

অন্যের প্রশংসা বা দৃষ্টির উপর নির্ভর করে না।

৩. অহংকারের পতন: নিজের ভালো কাজের প্রচার করা বা 'লোক দেখানো' ইবাদত সেই কাজের মূল্য নষ্ট করে দেয় 

এবং অহংকারের জন্ম দেয়, যা ঈমানকে দুর্বল করে দেয়, আমল মূল্যহীন হয়ে যায়।

Comments

    Please login to post comment. Login