
কোথায়গেলে পাওয়াযায় ক্ষমা....
অধ্যায়: ১
**হারিয়ে যাওয়ার বিকেল
(ইনানের জীবনের আরেক অধ্যায়)
বিকেল তখন ঠিক পাঁচটা।
আকাশে সোনালি রোদের মলিন আলো।
চারদিকে দিনের ব্যস্ততা ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে—
কিন্তু ইনান মোল্লার বুকে উদ্বেগের আগুন যেন আরও জ্বলছে।
বারান্দা জুড়ে তিনি একা একা পায়চারি করছেন।
মোবাইলটা কখনো হাতে তুলে নিচ্ছেন, আবার হঠাৎ নামিয়ে রাখছেন।
চোখ বারবার রাস্তায়—
যেন ইফতি ঠিক এখনই মোড় ঘুরে দৌড়ে এসে বাবাকে ডাকবে।
কিন্তু না…
আজ রাস্তাটা ভীষণ নিরব। ভীষণ অচেনা।
“আজ এত দেরি কেন…?”
ইনান নিজে নিজে বিড়বিড় করেন—
— “সকাল ১০টার আগেই তো তাকে স্কুলের গেটে দিয়ে এলাম…
কোনোদিন তো দেরি করে না…
এখনো এল না কেন আমার মেয়ে?”
একবার, দু’বার নয়—
দশবার রাস্তায় তাকিয়েও ইফতির কোনো চিহ্ন নেই।
সময় এগিয়ে চলে—
৫:৩০…
৫:৪৫…
সন্ধ্যার আলো ধীরে ধীরে নেমে আসছে।
হাওয়ায় অদ্ভুত শীতল ভয়।
এমন এক ভয়, যা কোনো বাবা সহ্য করতে পারে না।
***
অবশেষে কান্নাভেজা দুশ্চিন্তায় তিনি স্কুলে ফোন করেন।
স্যার:
— “হ্যালো, আইডিয়াল হাই স্কুল।”
ইনান (কাঁপা গলায়):
— “স্যার… আমি ইফতির বাবা… আজ ছুটি হয়নি?
ছয়টা বাজে, এখনো বাসায় ফিরেনি ইফতি…”
লাইনটা কিছুক্ষণ নীরব।
তারপর—
স্যার (হঠাৎ চমকে ওঠা স্বরে):
— “ইফতি?
ইফতি তো আজ স্কুলেই আসেনি!”
বাক্যটি শুনতে না শুনতেই ইনানের পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।
বারান্দার রেলিং ধরে তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন কোনোরকমে।
— “কি বলেন… আসে… নি?”
গলা শুকিয়ে গেল।
চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।
আমি তো নিজ হাতে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসছি!
তাহলে?
মনির! বের হ—ইফতি নেই!
ইনান ভেতরে দৌড়ে ঢুকে চিৎকার করে ওঠেন—
— “মনির! তাড়াতাড়ি বের হ! ইফতি… ইফতি স্কুলে যায়নি!”
মনির আর কোনো প্রশ্ন করেনি।
দু’ভাই সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে।
রাস্তার মোড়গুলো জিজ্ঞেস করা হয়—
কেউ কিছু জানে না।
কেউ দেখেনি মেয়েটাকে।
রাতের নিস্তব্ধতায় ইনানের বুকের দোয়া কেঁপে ওঠে—
— “ইয়া আল্লাহ… আমার মা-মরা মেয়েটাকে রক্ষা কর…”
ইফতির বয়স মাত্র চৌদ্দ।
শান্ত, লাজুক, তার মায়ের মতোই মেয়ে।
মায়ের স্নেহবঞ্চিত সেই মেয়েকে তিনি নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছেন।
সেই মেয়ে আজ হারিয়ে গেছে।
থানায় অভিযোগ — আর বাবার ভেঙে পড়া
রাত বাড়তেই মনির বলল,
— “চলো ভাই, থানায় যাই।”
দু’জনে থানায় গিয়ে সব জানালো।
পুলিশ খাতা খুলে লিখলো, আশ্বাস দিলো—
— “আমরা দেখছি বিষয়টি।”
কিন্তু এতটুকু কথাই ইনানের জন্য যথেষ্ট নয়।
তিনি কাঁপা গলায় বললেন—
— “স্যার… আমার মা-মরা মেয়ে… আমার একমাত্র মেয়ে…
ওকে ফিরিয়ে দেন… আল্লাহর দোহাই লাগে… ফিরিয়ে দেন…”
বলতে বলতে হঠাৎ তার দু’চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো।
হঠাৎই শরীর শক্ত হয়ে বরফের মতো নিস্তব্ধ হয়ে পড়লেন।
ইনান মেঝেতে পড়ে গেলেন—
চোখ উলটে যাচ্ছে।
হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক।
মনির চিৎকার করে উঠলো—
“ভাই! ভাই আমার!”
পুলিশের কয়েকজন সদস্য-আর মনির মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ডাক্তার বললো—
“স্ট্রোক হয়েছে। অতিরিক্ত মানসিক ধাক্কা।”
দু'দিন পর জ্ঞান—প্রথম শব্দ: “ইফতি…”
দু'দিন পর ইনানের জ্ঞান ফিরলো।
মুখে অক্সিজেন মাস্ক।
পাশে মনির বসে আছে।
মাস্ক সরানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম কথা—
— “মনির… আমার ইফতির খবর পাইলি…?”
মনির অবাক হয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকায়।
মৃত্যুর দরজায় দাঁড়িয়েও এই বাবা তার মেয়ের কথা ভুলেনি এক মুহূর্তও।
এটাই বাবার ভালোবাসা।
অসীম, নিঃস্বার্থ, নিজের জীবনের চেয়েও বড়।
সত্যটা জানা—আর বাবার মাথা নিচু হয়ে যাওয়া
ইনান একটু সুস্থ হতেই মনির সব ব্যাখ্যা দেয়—
— “ভাই… ইফতি হারিয়ে যায়নি…
আরেকটা ব্যাপার হইছে…”
ইনানের বুক ধক করে ওঠে।
মনির ধীরে ধীরে বলে—
— “ইফতি… তার বড় ক্লাসের এক ছেলে—সাজিদ-এর সাথে… পালাইছে।”
এই কথাটা শোনার পর যেন পুরো হাসপাতালের দেয়াল ভেঙে পড়ল ইনানের উপর।
বাবার চোখের জল ফাঁকা হয়ে যায়।
হাত দু’টো নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
— “ইফতি আমার আত্মা ছিল…
তার কাছে বাবার সম্মান… ভালোবাসার… এতটুকু দাম ছিল না…?”
চোখের জল গড়িয়ে পড়ে কানের পাশে।
তারপর মনে পড়ে নিজের অতীত—
ইফতির মা—ইলমা।
যে একদিন বাবার ঘর ফেলে ইনানের সাথে পালিয়ে এসেছিল।
ইনান ফিসফিস করে বলেন—
— “হয়তো…
হয়তো শাস্তিটা আমাকে আল্লাহ ফিরিয়ে দিয়েছে…
আমি একদিন তার বাবার বুক ভেঙেছিলাম…
আজ আমার বুক ভাঙলো…”
তিনি চুপ হয়ে যান।
চোখ বন্ধ করে শুধু একটি লাইন বলেন—
— “আহারে বাপরা…
বাপদের এমন কষ্ট কেউ দেখে না…
আর সন্তানরা… এমন সহজে ভুলে যায়…”
অধ্যায় ২
**ইনানের ভাঙা মন
(ইনানের জীবনের আরেক অধ্যায়)
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ফিরে এলো ইনান মোল্লা।
দেহ সামান্য সুস্থ হলেও, ভেতরের মনটা যেন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
সে যেন আর আগের ইনান নেই—
মেয়ের হারিয়ে যাওয়া আর সত্য জানার পর
সে এক মুহূর্তও শান্ত হতে পারছে না।
ঘরে ঢুকতেই সবকিছু অচেনা লাগে—
বিছানা, দেয়াল, জানালা…
সবকিছুই যেন তাকে নির্দয়ভাবে প্রশ্ন করছে—
“কোথায় তোমার ইফতি?”
“কীভাবে হারালে তাকে?”
ইনান বসে পড়ে বিছানার ধারে।
দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।
চোখের কোণে জমা কান্না গড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে।
— “কীভাবে পারলি রে মা…”
তার কণ্ঠ ভাঙা, নিঃশ্বাস কাঁপছে।
— “তোর কাছে বাবার ভালোবাসা এতটুকুও মূল্য ছিল না…?”
শূন্য ঘর তাকে আরও একাকী করে তোলে।
— “সামান্য দু’দিনের পরিচয়ের মানুষের জন্য…
তুই বাবার সম্মানকে মাটির সাথে মিশিয়ে চলে গেলি?”
বাহিরে রাত নামছে, কিন্তু ইনানের জীবনে যেন অন্ধকার আরও ঘন হয়ে আসছে।
হঠাৎ তার বুকের ভেতর তীব্র ব্যথা উঠলো।
কিন্তু ব্যথা শরীরের নয়—
এটা একটা বাবার হৃদয়ের ব্যথা।
অপরাধবোধ—অতীতের ভূত ফিরে আসে
ক্রন্দন থামাতে না থামাতে তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আরেকটা মুখ—
ইলমা।
তার ভালোবাসা।
তার স্ত্রী।
তার জীবনের প্রথম নারী।
ইনান মনে মনে বলে—
— “হয়তো আল্লাহ আমায় শাস্তি দিছে…
আমিও তো একদিন ইফতির মাকে নিয়ে পালাইছিলাম…
হয়তো সেদিন ইলমার বাবাও আমার মতোই কেঁদেছিল…
সমাজ তাকে অপমান করেছিল…”
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে আসে।
— “হয়তো তার সেই অভিশাপই আজ আমার জীবনে ফিরা আসলো…”
দেয়ালগুলো যেন আরও ভারী হয়ে ওঠে।
বাতাস শুকিয়ে আসে।
ঘরটা যেন ইলমার অনুপস্থিতিতে আরও বিষণ্ণ হয়ে উঠে।
ডায়েরি—দু’টি পৃথিবীর মাঝে আটকে থাকা স্মৃতি
বিছানার পাশে রাখা পুরোনো কাঠের আলমারি।
ইনান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
তার হাত কাঁপছে—
মনে হচ্ছে প্রতিটি পদক্ষেপের ওজন হাজার মন।
আলমারির দরজা খুলতেই ধুলো উড়ে আসে।
বছরের পর বছর স্পর্শ না করা জিনিসগুলোর মধ্যে তিনি খুঁজতে থাকেন…
অবশেষে খুঁজে পান একটি পুরোনো ডায়েরি।
ইলমা মারা যাওয়ার পর
ইনান আর কখনো এই ডায়েরি ছোঁয়নি।
আজ অনেক বছর পর—
দু’চোখে জ্বালা আর বুকভাঙা কান্না নিয়ে
সে ডায়েরিটা খুলে বসে।
ডায়েরির পাতায় জমে থাকা ধুলো
ঠিক যেন তার বুকে জমে থাকা স্মৃতির ঘন স্তর।
পাতা উল্টাতেই একটি পৃষ্ঠা বের হয়ে এল।
পৃষ্ঠাটিতে লেখা—
ডায়েরির পৃষ্ঠা -
২/৩/২০১১ তারিখ
“আজ অনেকদিন পর ডায়েরিতে লিখতে বসলাম…
আমি তাকে ভালোবাসি কিনা জানি না।
কিন্তু তাকে এক নজর দেখার জন্য মন অস্থির হয়ে থাকে।
তার পূর্ণিমার চাঁদের মতো হাসির দিকে তাকালে
মনের সব দুঃখ দূর হয়ে যায়।
জানি না তাকে কখনো আপন করে পাবো কিনা।
তাও আল্লাহর কাছে দোয়া করি—
তাকে যেন আমার ইহকাল আর পরকালের সাথী করেন।
তাকে প্রেমিকা হিসেবে চাই না,
চাই একজন পবিত্র, আদর্শ জীবনসঙ্গী হিসেবে।
ইলমা, এই লেখাটা শুধু তোমার জন্য…”
এই শব্দগুলো পড়ার সাথে সাথে ইনানের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো।
পেজটি ভিজে উঠলো তার চোখের পানিতে।
সে ধীরে বলল—
— “আল্লাহ কত রহস্যময়…
এই দোয়া দুই মাসের মধ্যেই কবুল হয়েছিল…
আমি তাকে পেয়েছিলাম আপন করে…
আর অতি তাড়াতাড়ি হারিয়েও ফেললাম…”
তার বুক আরও ভারী হয়ে যায়।
শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
তারপর মনে পড়ে—
ইফতির জন্মের সময় ভুল চিকিৎসা।
ইলমার শেষ নিঃশ্বাস তার হাতের মাঝেই হয়।
ইনান চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে—
— “ইলমা… আমি তোমাকেও হারাইলাম…
আর আজ আমাদের মেয়ে ইফতিকেও…”
এক বাবার কণ্ঠে এমন বেদনাবহ শব্দ খুব কম শোনা যায়।
— “ইফতি আমার সবকিছু ছিল…
আমার আত্মা… আমার ধন… আমার ইলমার একমাত্র স্মৃতি…”
কান্নায় ভেঙে উঠে তার গলা।
— “সে-ও আজ আমাকে ছেড়ে গেল…
কেবল তার দু’দিনের ভালোবাসার জন্য…”
বৃষ্টি নেমে এলো জানালার বাইরে—
আর ঘরের ভিতরে
এক বাবার বুকভাঙা কান্নার আওয়াজ
ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল অন্ধকারের দিকে।
৩য় অধ্যায়
অতীতের দরজা খুলে যাওয়া
২০১০ সালের কথা…
হাই স্কুল পেরিয়ে সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছি। নতুন পরিবেশ, নতুন মুখ, নতুন স্বপ্ন—সবকিছুই যেন রঙিন। ক্লাসের ভেতর মেয়েরা উচ্ছ্বাসে মেতে আছে, কেউ হাসছে, কেউ আবার নতুন বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছে। পুরো কলেজ যেন নতুন মৌসুমের প্রথম বৃষ্টির মতো আনন্দে ভরে আছে।
কিন্তু এই কোলাহলের মাঝেই একটি মুখ অদ্ভুতভাবে আলাদা ছিল।
সে এক কোণে চুপচাপ বসে থাকে—
মনে হয় যেন ভরা পূর্ণিমার চাঁদ কোন ভুলে পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
সাদা আর শান্ত তার চেহারা, তাতে এক ধরনের মায়াবি নরম আলো।
দেখলেই মনে হয়—
“এই মেয়ে আমার কতটা আপন…”
কিন্তু তখনও তার নাম জানতাম না।
এভাবেই কয়েক মাস কেটে যায়। প্রতিবার চোখ পড়লে মনে হতো তাকে চিনতে চাই, জানতে চাই… কিন্তু সাহস.....উঠত না।
একদিন খুব সকালেই কলেজে পৌঁছে যাই। ক্লাসরুমে ঢুকতেই দেখি—
জানলার ফাঁক দিয়ে আসা সকালের রোদে তার মুখটা ঠিক যেন আকাশে ঝুলে থাকা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল।
ক্লাসরুমে তখন আমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।
হঠাৎ যেন ফুঁসে উঠল বুকের ভেতরের সাহস।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বললাম—
“হ্যালো, আমি ইনান… তুমি?”
সে মুখ তুলে তাকালো।
কণ্ঠটা মধুর, খুব নরম—
“আমি… ইলমা।”
নামটা শুনেই মনে হলো নামের মধ্যেও যেন পূর্ণিমার আলো লুকিয়ে আছে। জানতে পারলাম, আমাদের পাশের গ্রামেই তার বাড়ি।
সেদিনই হয়তো আমাদের জীবনের গল্প বদলে গিয়েছিল।
সেদিনই শুরু হয়েছিল আমাদের বন্ধুর তের পর্ব…
পরের দিনগুলো আরও সুন্দর ছিল—
একসাথে লাইব্রেরিতে বসা, ক্লাস শেষ হলে মাঠের কোণে দাঁড়িয়ে গল্প করা, বইয়ের পাতার আড়ালে ছোট ছোট চিরকুটে আবেগ লেখা…
জীবন যেন রূপকথার মতো হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু রূপকথার গল্পের মতোই সুখের মাঝে লুকিয়ে ছিল অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
ইলমা ছিল তার বাবা–মায়ের একমাত্র সন্তান।
তাদের চোখের মণি, হৃদয়ের ধন।
কিন্তু বয়সের ভুল, আবেগের টান, ভালোবাসার নেশা—আমাদের ঠেলে দিল ভুল সিদ্ধান্তের দিকে।
আমরা পালিয়ে বিয়ে করলাম।
ভেবেছিলাম এটাই সুখ,
এটাই মুক্তি,
এটাই ভালোবাসার চূড়ান্ত জয়।
কিন্তু আমরা বুঝিনি—
যে ভালোবাসা বাবা–মায়ের হৃদয় ভেঙে গড়ে ওঠে, তার মাঝে শান্তি কখনো স্থায়ী হয় না।
যাদের দোয়ার ওপর পৃথিবীর আশীর্বাদ দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের অভিশাপ কখনো হাওয়া হয়ে যায় না।
ইলমার বাবা আব্দুল্লা মিয়া অপমান, কষ্ট, সামাজিক চাপ—কোথায় যেন সহ্য করতে পারেননি।
ক'মাস পরেই তার মৃত্যু সংবাদ আসে।
ইনান তখনো বুঝতে পারেনি, এই মৃত্যু তার ভাগ্যের ইতিহাসে কালো দাগ হয়ে থাকবে।
পনেরো বছর পর আজ—
ইলমাকে হারানোর যন্ত্রণা,
তার বাবার বেদনা,
সবকিছু যেন নতুন করে ফিরে এসে দাঁত বসাচ্ছে ইনানের হৃদয়ে।
আজ যখন তার নিজের মেয়ে ইফতি—
মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে
এক অচেনা ছেলের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে,
তখন ইনান গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকেই বলল—
“এটাই বোধহয় আমার অতীতের পাপের শাস্তি…
ইলমার বাবাকে কষ্ট দিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছিলাম,
আজ আমিও সেই কষ্ট পেলাম।”
ইলমাকে হারিয়েছি ভুল চিকিৎসায়।
ইফতি চলে গেছে নিজের সিদ্ধান্তে।
একজনকে নিয়েছিল ভাগ্য—
আরেকজনকে কেড়ে নিল সময়।
ইনান ডায়েরির পাতায় হাত বুলোতে বুলোতে অজান্তেই ফিসফিস করে বলল—
> “বাবা–মাকে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করলে
সত্যিকারের সুখ কখনো পাওয়া যায় না…
সুখ পেতে হলে লাগে তাদের দোয়া।
আমি সেটা পাইনি…
আজ আমার মেয়েও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো ।”
তার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে ঝরতে লাগল অশ্রু।
যেন প্রতিটি ফোঁটা অতীতের ভুলের শোকগাথা লিখে যাচ্ছে।
চলবে.....