Posts

গল্প

জাদুর বাঁশি ও হারানো সুর

December 10, 2025

Maya Akter

22
View

একদা, কোলাহল থেকে দূরে, সবুজে ঢাকা এক ছোট্ট গ্রাম ছিল যার নাম শান্তিপুর। এই গ্রামটি ছিল প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। গ্রামের মাঝখানে ছিল একটি সুবিশাল বটের গাছ, যার নাম ছিল 'ছায়াবৃক্ষ'

​শান্তিপুরের একজন বাসিন্দা ছিল, যার নাম অর্ক। অর্কর কাছে ছিল একটি কাঠের বাঁশি, যা তার ঠাকুরদা তাকে দিয়েছিলেন। বাঁশিটি দেখতে সাদামাটা হলেও, এটি ছিল জাদুকরী। অর্ক যখনই সেই বাঁশিতে সুর দিত, গ্রামের প্রতিটি ফুল আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত, নদীর জল ঝিলমিল করত, আর মানুষের মন ভরে যেত অনাবিল শান্তিতে।

​একদিন গভীর রাতে, যখন গ্রামের সবাই ঘুমে মগ্ন, তখন এক দুষ্টু পেঁচা এসে চুপিসারে সেই জাদুকরী বাঁশিটি চুরি করে নিয়ে গেল। পরদিন সকালে, অর্ক বাঁশিটি খুঁজে না পেয়ে খুব দুঃখ পেল। বাঁশি হারানোর পর, গ্রামের পরিবেশ পাল্টে যেতে শুরু করল। ফুলেরা তাদের রং হারাতে লাগল, নদীর জল ঘোলাটে হয়ে গেল, আর সবার মন থেকে আনন্দ যেন হারিয়ে গেল।

​অর্ক বুঝতে পারল, তার বাঁশির সুরই ছিল শান্তিপুরের প্রাণ। সে স্থির করল, যেকোনো মূল্যে তার বাঁশি খুঁজে আনবে। সে তার প্রিয় বন্ধু, ছোট্ট কাঠবিড়ালি 'চঞ্চল'-কে সাথে নিয়ে এক কঠিন যাত্রায় বেরিয়ে পড়ল।

​চঞ্চল তার দ্রুত বুদ্ধি এবং গাছের ডাল বেয়ে ওঠার দক্ষতার মাধ্যমে বাঁশির চোর, সেই দুষ্টু পেঁচার বাসা খুঁজে বের করল—একটি দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায়। অর্ক সাহসের সাথে পাহাড়ে উঠল। সে দেখল, পেঁচাটি বাঁশিটি নিয়ে বসে আছে, কিন্তু শত চেষ্টা করেও তাতে সুর দিতে পারছে না। জাদুর বাঁশি কেবল যার মন শুদ্ধ, তারই হাতে সাড়া দেয়।

​অর্ক পেঁচার সামনে দাঁড়াল। পেঁচাটি ভয় পেয়ে বাঁশিটি ফেলে দিয়ে দ্রুত উড়ে চলে গেল। অর্ক তাড়াতাড়ি বাঁশিটি হাতে তুলে নিল এবং গভীর স্বস্তি পেল।

​পাহাড়ের চূড়ায় বসে অর্ক তার বাঁশিতে এক মিষ্টি সুর তুলল। সেই সুর বাতাসের সাথে মিশে শান্তিপুরে ফিরে এলো। সুরটি কানে যেতেই গ্রামের সবাই যেন নতুন জীবন পেল। ফুলের দল আবার তাদের উজ্জ্বল রঙ ফিরে পেল, নদীর জল আবার ঝলমল করে উঠল, আর সবার মুখে হাসি ফুটল।

​অর্ক যখন বাঁশি নিয়ে গ্রামে ফিরল, সবাই তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। সেই দিন থেকে, শান্তিপুরের মানুষ বুঝতে পারল যে, আসল সৌন্দর্য আর শান্তি কোনো বস্তুতে নয়, বরং সবার ভেতরের ভালোবাসা আর সরলতার সুরেই লুকিয়ে থাকে। অর্ক তার বাঁশির সুর দিয়ে শুধু গ্রামকেই নয়, সবার মনকেও শান্তিতে ভরিয়ে রাখত।

 

Comments

    Please login to post comment. Login