রাতের আলোয় ঢাকা শহর যেন কখনও থামতে চায় না। ট্রাফিক, হর্নের শব্দ, মানুষজনের ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে জীবন চলছিল ব্যস্ত গতিতে। কিন্তু রিয়াদ আজ একটু থমকে দাঁড়িয়েছিল। কারণ তার মনে পড়েছিল ছোটবেলার সেই দুপুরের কথা—যখন মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ভাত ভেজে দিতেন, ডালের গন্ধ ঘরে ভরে যেত আর পেঁয়াজের ঝাল ভাজা সাথে নরম আলুর ভর্তা।
ঢাকার এক রেস্তোরাঁয় সে ভাত-ডাল অর্ডার করল। কিন্তু মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝল—এটা সেই স্বাদ নয়। মনে পড়ল মা, যার হাতের রান্নায় ছিল শুধু উপকরণ নয়, ছিল ভালোবাসা আর হাসি।
পরদিন সকালে রিয়াদ হঠাৎ গ্রামের জন্য রওনা দিল। গ্রামের ধুলোময় রাস্তা, নরম সূর্যের আলো, কোকিলের ডাক—সবকিছু তাকে ছোটবেলার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। বাড়ির আঙিনায় দাঁড়াতেই মা বিস্ময়ে তাকালেন। রিয়াদ হেসে বলল, “মা, তোমার রান্না খেতে এসেছি।”
মা রান্নাঘরে চলে গেলেন, তেলে সরষার ফোঁটা, পেঁয়াজের ঝলক, ধনেপাতার গন্ধ—সব মিলিয়ে যেন রিয়াদের শৈশব আবার জীবন্ত হয়ে উঠল। ইলিশ ভাজার টুপটাপ শব্দ, ডালের ঘন সুবাস, আলুভর্তার কোমল স্বাদ—সব মিলিয়ে একটা ছোট্ট উৎসব।
রিয়াদ বুঝল, বাঙালির খাবার শুধু খাদ্য নয়। এটা ভালোবাসা, স্মৃতি আর পরিবারের সংযোগ। ভাতের প্রতিটি দানা, ডালের প্রতিটি চিমটি—সবই ঘরের সুখের গল্প। খাওয়ার শেষে সে মাকে বলল, “মা, আমি প্রতিমাসে একদিন হলেও আসব, শুধু তোমার রান্না খেতে।” মা হেসে বললেন, “খাবার খেতে নয়, মাঝে মাঝে মাকে দেখতে এলেই হয়।”
সেই রাত রিয়াদের জন্য সব চেয়ে বড় উপলব্ধি হয়ে গেল— খাবারের স্বাদ টাকা দিয়ে কেনা যায় না, তা লুকিয়ে থাকে মায়ের হাতের রন্ধনশালায়, ঘরের গন্ধে আর ছোট্ট স্মৃতিতে।