ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের একজন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং **গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা**। দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে তাঁর শিক্ষাজীবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ড. ইউনুস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালের ২৯ জুন চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় মেধাবী ও আগ্রহী ছিলেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলে শুরু হয় এবং পরে তিনি **লমাবাজার প্রাইমারি স্কুলে** ভর্তি হন। এখানে তিনি পড়াশোনায় অনন্য প্রতিভা প্রদর্শন করেন এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে তিনি ভর্তি হন **চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে**, যেখানে তিনি **মেট্রিকুলেশন (SSC)** পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। স্কুল জীবনের এই সময়ই তাঁর নিয়মিত শ্রেষ্ঠত্ব ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। মেট্রিকুলেশনের পর তিনি **চট্টগ্রাম কলেজে** উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) সম্পন্ন করেন। এই সময় অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয়গুলিতে তার আগ্রহ বাড়তে থাকে, যা পরবর্তী জীবনের গবেষণা ও উদ্যোগের জন্য ভিত্তি তৈরি করে।
ড. ইউনুসের উচ্চশিক্ষা শুরু হয় **ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে**, যেখানে তিনি **অর্থনীতি বিভাগে** ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে তিনি **ব্যাচেলর অব আর্টস (BA)** ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬১ সালে **মাস্টার্স (MA)** ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি অর্থনৈতিক নীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি এবং সামাজিক অর্থনীতি বিষয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন। এই শিক্ষাজীবন তাঁকে বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
উচ্চতর গবেষণার জন্য ড. ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ভর্তি হন **ভ্যান্ডারবিলট বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vanderbilt University)**। এখানে তিনি **অর্থনীতিতে পিএইচডি (PhD)** অর্জন করেন। তিনি এটি **ফুলব্রাইট স্কলারশিপ**-এর মাধ্যমে পড়েন এবং ১৯৬৯ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পিএইচডি গবেষণার সময় তিনি ক্ষুদ্রঋণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক অর্থনীতি নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করেন। এই অভিজ্ঞতা পরে **গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা** এবং দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়।
ড. ইউনুসের শিক্ষাজীবন তাঁকে একটি দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ প্রদান করেছে, যা পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে বিপ্লব আনতে সাহায্য করেছে। শিক্ষার এই শক্তি ও গবেষণার ভিত্তিতে তিনি ২০০৬ সালে **নোবেল শান্তি পুরস্কার** লাভ করেন।
18
View