একটা ছোট্ট গ্রামে থাকত অষ্টম শ্রেণির ছাত্র হাসান। খুব শান্ত, ভদ্র ছেলে—কিন্তু একটা সমস্যা ছিল। সে পড়ালেখা নিয়ে যতটা সিরিয়াস হওয়ার দরকার, ততটা ছিল না।
হাসান সব কাজই কাল-পরশু করবে বলে ফেলে রাখত।
গণিতের হোমওয়ার্ক? “আগামীকাল করব।”
বাংলা রচনা? “একটু পরে লিখব।”
পরীক্ষা সামনে? “এখন খেলা করি, পরে পড়ব।”
এভাবে করতে করতে তার “পরে পড়ব” কথাটাই যেন তার সঙ্গী হয়ে গেল।
১. সময়ের অপচয়
প্রতিদিন বিকেলে হাসান মাঠে যেত। বন্ধুরা বলত—
“হাসান, আমাদের একটু কম খেলি, পরীক্ষা আসছে।”
কিন্তু হাসান হাসতো—
“আরে বাবা, এখনই তো অনেক সময় আছে!”
তার মা বারবার বলতেন,
“বাবা, সময়কে হেলায় নষ্ট করো না। সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না।”
হাসান মাথা নেড়ে সায় দিত, কিন্তু পরিবর্তন হতো না।
২. পরীক্ষার দিন
চোখের পলকে পরীক্ষার দিন চলে এলো। বই খুলে দেখে সে হতবাক—এত বেশি সিলেবাস! সময় কম, মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
রাত জেগে জেগে পড়ল, কিন্তু মাথা ঝিমঝিম করছে। পরীক্ষার হলে গিয়ে সে বুঝল—
“আমি যতটা ভাবছিলাম, আসলে কিছুই পারি না!”
প্রশ্ন দেখে হাত কাঁপতে লাগল। উত্তর লিখল অল্প অল্প করে, আর মনের ভেতর ভয় জমতে লাগল।
৩. রেজাল্টের দিন
ফলাফল বের হওয়ার দিন সবাই আনন্দ করছিল। কিন্তু হাসানের হৃদস্পন্দন যেন থেমে যাচ্ছিল।
তার রোল নম্বরের পাশে লেখা—
“পাস — খুব কম নম্বরে।”
বন্ধুরা বলল,
“হাসান, তুই তো আরো ভালো করতে পারতি! তোর মাথা আছে, শুধু সময় নষ্ট করলি!”
মা ধীরে বললেন,
“বাবা, আমি তোমাকে বকব না। শুধু মনে রাখো—যদি পরিশ্রম করতে, তাহলে ফলাফল অন্যরকম হতো।”
হাসান চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। প্রথমবার সে সত্যিই নিজের ভুল বুঝতে পারল।
৪. নতুন শুরু
সেদিন রাতে হাসান নিজের ডায়েরিতে লিখল—
“আজ থেকে আর সময় নষ্ট করব না। আজ থেকে আমি আমার ভবিষ্যৎ গড়ব।”
পরের দিন থেকেই সে নতুন রুটিন বানালো—
সকালে উঠে অল্পক্ষণ লিখাপড়া
বিকেলে খেলাধুলা, কিন্তু সীমিত সময়
রাতে বই রিভিশন
আর কোন কাজের জন্য ‘পরে করব’ না
ধীরে ধীরে তার ফলাফল উন্নতি হতে লাগল। শিক্ষকরা প্রশংসা করলেন, মা খুশিতে চোখে পানি এনে বললেন—
“আমি জানতাম, আমার ছেলে পারবে।”
৫. সবচেয়ে বড় শিক্ষা
একদিন প্রিন্সিপাল স্যার বললেন—
“হাসান, তুমি অন্যদের জন্য উদাহরণ। তুমি দেখিয়েছ—
যে নিজের ভুল স্বীকার করে ঠিক সময়ে বদলাতে পারে, সে-ই সফল হয়।”
হাসান হাসল। সে জানত—
সে সময়কে জিততে শিখেছে।