Posts

গল্প

চিরন্তন সুর

December 13, 2025

Mr B. Video

11
View


অনন্যা আর আকাশের প্রেমটা ছিল অনেকটা ভায়োলিনের সুরের মতো—কোথাও কোমল, কোথাও তীব্র, কিন্তু সবসময়ই এক গভীর মায়ায় জড়ানো। তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল একটি বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়, পুরনো ঢাকার এক চায়ের দোকানে। অনন্যা তার নোটবুকে কিছু লিখছিল, আর আকাশ পাশে বসে একটি বই পড়ছিল। হঠাৎ, অনন্যার হাত থেকে চায়ের কাপ উল্টে গিয়ে পড়ে আকাশের নতুন কেনা বইটির উপর।
আকাশের মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলেও, অনন্যার চোখে যখন সে এক অজানা অস্থিরতা ও ভয়ের ছাপ দেখল, তখন তার রাগ নিমেষে গলে গেল। অনন্যা তোতলাতে তোতলাতে ক্ষমা চাইল। আকাশ শুধু হেসে বলল, "থাক, যা হওয়ার হয়ে গেছে। নতুন বইয়ে একটা বৃষ্টির স্মৃতি যোগ হলো।" সেই শুরু।
তাদের ভালোবাসার ভিত্তি ছিল চিঠি। ডিজিটাল যুগে তারা ছিল পুরনো কালের প্রেমিক-প্রেমিকা। আকাশ প্রতিদিন অনন্যার জন্য একটি করে চিঠি লিখত, আর অনন্যা তার উত্তরে একটি চিঠি দিত। সেই চিঠিগুলোতে থাকত না কোনো বড় প্রতিশ্রুতি, থাকত শুধু তাদের দিনযাপনের ছোট ছোট কথা—বৃষ্টির শব্দ, চায়ের গন্ধ, রাস্তায় দেখা একটি হাসিখুশি শিশু, কিংবা নতুন পড়া একটি কবিতার লাইন।
কলেজ শেষ হওয়ার পর আকাশ চাকরি পেল সুদূর বেঙ্গালুরুতে। দূরত্ব তাদের সম্পর্কে একটা কঠিন পরীক্ষা নিয়ে এলো। অনন্যা তখনো ঢাকায়। প্রথম কয়েক মাস সব ঠিকঠাক চলল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চিঠির সংখ্যা কমতে থাকল। কাজের চাপ আর দূরত্বের ক্লান্তিতে তাদের কথোপকথনে একটা নীরবতা আর অবসাদ ভর করতে শুরু করল।
একদিন, অনন্যা আকাশের জন্য কোনো চিঠি লিখল না। সে শুধু একটি পুরনো ডায়েরি খুলে বসল। ডায়েরিটা ছিল আকাশের লেখা প্রথম চিঠির সংগ্রহ। প্রতিটি পাতায় তার হাতের ছোঁয়া, তার মনের কথা। পড়তে পড়তে অনন্যার চোখে জল চলে এল। সে বুঝতে পারল, তাদের সম্পর্কটা কেবল ফোনে কথা বলার বা দেখা করার ওপর নির্ভর করে না, এটা নির্ভর করে সেই 'চিরন্তন সুরের' ওপর, যা তারা তৈরি করেছিল প্রথম দিন থেকে।
পরের দিন, অনন্যা কোনো নতুন চিঠি লিখল না। সে শুধু আকাশের লেখা প্রথম চিঠির ফটোকপি করে তাতে নিজের হাতে লিখল:
> "প্রিয় আকাশ, আজকের দিনে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তুমি সেদিন বলেছিলে, 'নতুন বইয়ে একটা বৃষ্টির স্মৃতি যোগ হলো।' আজ আমি বলছি, আমাদের জীবনে হয়তো অনেক ঝড় আসবে, কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসার গল্পটা চিরকাল থাকবে একটি 'চিরন্তন সুর' হয়ে।"

অনন্যা সেই চিঠিটা কুরিয়ারে পাঠাল।
চার দিন পর, অনন্যা যখন দুপুরে ঘুমাচ্ছিল, তখন তার ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল আকাশের নাম। কিন্তু সে ফোনটা ধরল না। কিছুক্ষণ পর দরজায় টোকা পড়ল। অনন্যা দরজা খুলে দেখল, সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। তার হাতে সেই পুরনো, চায়ের দাগ লাগা বইটা।
আকাশ বলল, "আমি আর দেরি করতে পারলাম না। তোমার চিঠিটা পাওয়ার পর মনে হলো, আমি আসলে তোমাকে নয়, আমাদের সেই পুরনো দিনের চিঠিগুলোর শব্দগুলোকে মিস করছিলাম।"
অনন্যা কিছু বলার আগেই আকাশ হাঁটু গেড়ে বসল। পকেট থেকে একটা ছোট্ট বাক্স বের করে বলল, "আমরা চিঠি দিয়ে প্রেম শুরু করেছিলাম, অনন্যা। আমি চাই, বাকি জীবনটা যেন তোমার সাথে কাটাতে পারি। তোমার হাতে হাত রেখে, বাকি সব গল্প লিখতে পারি। তুমি কি আমার এই গল্পের চিরন্তন নায়িকা হবে?"
অনন্যা হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলল। সে আকাশের হাত ধরে বলল, "আমি তো চিরকাল তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি, আমার চিরন্তন সুরের কারিগর।"
আর এভাবেই, তাদের পুরনো চিঠির গন্ধ আর নতুন প্রতিশ্রুতির বন্ধনে সেই প্রেম আবার নতুন করে শুরু হলো, যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খুঁজে পেল এক চিরন্তন সুরের প্রতিধ্বনি।
গল্পটি কেমন লাগলো? আপনি কি অন্য ধরণের কোনো গল্প শুনতে চান, নাকি এই গল্পটির চরিত্রদের নিয়ে আরও কিছু জানতে চান?
 

Comments

    Please login to post comment. Login