Posts

ফিকশন

ছায়ার তটে

December 14, 2025

Mahfuza Hasan

Original Author মাহফুজা হাসান

5
View

ছায়ার তটে 

রাতের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। সমুদ্রের ঢেউ বালির ওপর আছড়ে পড়ছে, যেন অজানা কোনো রহস্যকে ফিসফিস করছে। আঞ্জেলিনা বিচের ধারে দাঁড়িয়ে শ্বাস আটকে রাহুলের দিকে তাকাচ্ছিল। তিন বছর আগে সে যে মানুষটির প্রতি ভালোবাসা দিয়েছিল, আজ তাকে যেন কোনো অচেনা ছায়া আচ্ছন্ন করেছে।

হঠাৎ পেছন থেকে ধীর কিন্তু স্পষ্ট পায়ের শব্দ। আঞ্জেলিনা ঘুরে দাঁড়াল। অন্ধকারে কেউ দাঁড়িয়ে, চোখে অজানা কোনো ইচ্ছে, মুখে অর্ধহাসি। তার হৃদয় দ্রুত ধকধক করছে—ভয় আর উত্তেজনা একসাথে।

“তুমি এখানে কেন?” রাহুলের কণ্ঠ, হালকা কিন্তু কঠিন।
“আমি সত্য জানতে এসেছি,” আঞ্জেলিনা কাঁপা গলায় বলল।

সমুদ্রের ঢেউ তাদের চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘুরছে। রাতের অন্ধকারে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, এবং রহস্য—সবই তাদের উপর চাপা দিয়েছে। আজকের রাতেই প্রতিটি গোপন চেহারা উন্মোচিত হবে।

আঞ্জেলিনা সমুদ্রের ধারে ধীরে ধীরে এগোল। পেছন থেকে যে পায়ের শব্দ এসেছিল, তা এখনও কানে বাজছে। তার হৃদয় কেঁপে উঠছে—ভয় আর উত্তেজনা একসাথে। রাহুল তার সামনে দাঁড়িয়ে, চোখে অদ্ভুত মিশ্রণ—ভালোবাসা, অনিশ্চয়তা, এবং এক অজানা রহস্য।

“আমি সব সময় তোমার পাশে ছিলাম, তবে তুমি আমাকে দেখনি,” রাহুল বলল।
আঞ্জেলিনা চোখ চড়কগাছ। “তুমি কী বলতে চাও?”
“আমি নিখোঁজ ছিলাম… কিন্তু কেউ আমাকে খুঁজে পায়নি।”

হঠাৎ দূরের অন্ধকারে আলো জ্বলে উঠল। কালো নৌকা আসছে—কেউ তাদের দিকে এগোচ্ছে। আঞ্জেলিনা বুঝল, আজকের রাত কেবল রোম্যান্স নয়, এই রহস্য ও বিপদের রাত।

রাহুল তার হাত ধরল। “ভয় কোরো না, আমাকে বিশ্বাস করো।”
সমুদ্রের ঢেউ যেন তাদের চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘুরছে। আঞ্জেলিনা জানে, এই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত তার জীবনের পথে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলবে।

কালো নৌকা ধীরে ধীরে সমুদ্রের ঢেউ কেটে এগোচ্ছে। আঞ্জেলিনা ও রাহুল একসাথে দাঁড়িয়ে, অন্ধকারে মুখোমুখি হচ্ছে। নৌকার আলো ঝলসে উঠল—একটি লকেট, ভেজা কাগজ এবং একটি অজানা চিঠি।

রাহুল বলল, “সবকিছু এখানেই লুকানো ছিল। এখন সত্য জানার সময় এসেছে।”
আঞ্জেলিনা কাঁপা গলায় বলল, “আমি সবকিছু জানি, কিন্তু কেন তুমি আমাকে ছাড়া গিয়েছিলে?”
“আমি বাধ্য ছিলাম… কিন্তু আমি কখনো তোমাকে ভুলিনি,” রাহুল উত্তর দিল।

হঠাৎ দূর থেকে আরেকটি নৌকা এগিয়ে আসল। অন্ধকারে কেউ তাদের দিকে এগোচ্ছে। পেছনে বাতিঘরের আলো ঝলসে উঠল—চেহারা অচেনা, চোখে বিপদের ছাপ।

আঞ্জেলিনা বুঝল, প্রেম এবং বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে আজকের রাত তাদের সমস্ত সীমা পরীক্ষা করবে। সমুদ্রের নীল ছায়ার মধ্যে রহস্য, ভয়, এবং ভালোবাসা একসাথে আবদ্ধ।

নৌকা ধীরে ধীরে আঞ্জেলিনা ও রাহুলের কাছে এসে থেমে গেল। অন্ধকারে মুখোশধারী এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে। আঞ্জেলিনার হৃদয় দ্রুত ধকধক করছে। চোখে ভয়, কিন্তু মনে কৌতূহলও।

“সব সত্য জানতে চাও?” চিৎকারের মতো কণ্ঠে বলল মুখোশধারী।
রাহুল দ্রুত আঞ্জেলিনার হাত ধরল। “আমাকে বিশ্বাস করো, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

মুখোশ খুলতেই দেখা গেল—চেনা একজন, আঞ্জেলিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু! বিশ্বাসঘাতকতার ছাপ আঞ্জেলিনাকে স্তব্ধ করে দিল। সেই মুহূর্তে রাহুল এবং আঞ্জেলিনা বুঝল—রাতের সব রহস্য, ভালোবাসা এবং ভয় একসাথে তাদের চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ছড়িয়ে আছে।

আঞ্জেলিনা সাহস জোগাল। “সত্যের পাশে থাকাই এখন একমাত্র পথ।”
রাহুল হেসে বলল, “আমরা একসাথে থাকলে কোনো ভয় কাটবে না।”

সমুদ্রের ঢেউ আবার শান্ত হয়ে এল। রাতের রহস্য, থ্রিলার এবং প্রেমের মিলন তাদের জীবনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলল।

রাতের অন্ধকারে আঞ্জেলিনা এবং রাহুল সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে লবণাক্ত ঢেউয়ের গন্ধ, ঢেউয়ের শব্দ—সবই রহস্য ও উত্তেজনা জাগাচ্ছে।
“তুমি কি সত্যিই সব খুলে বলতে পারবে?” আঞ্জেলিনা কণ্ঠ কমিয়ে বলল।
রাহুল এক মুহূর্ত থেমে দেখল তার চোখের গভীরতায়। “সত্য কখনো সহজ হয় না, কিন্তু আমরা একসাথে থাকলে সবকিছু পারি।”

হঠাৎ ফোনে একটি অজানা মেসেজ—“সত্য সবসময় সামনে গেলে বাঁচায় না।” আঞ্জেলিনার মন কাঁপতে লাগল। কে পাঠিয়েছে? আর কতোটা সত্য জানানো বাকি আছে?

রাহুল তার হাতে শক্তভাবে হাত ধরে বলল, “ভয় কোরো না। এবার আমরা একসাথে সব রহস্যের মুখোমুখি হব।”
নীরা বুঝল—এই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত তাদের জীবনের চূড়ান্ত পরীক্ষার মতো। প্রেম, বিশ্বাস, এবং ভয়—সবই সমুদ্রের নীল ছায়ার মধ্যে মিলেমিশে এক নতুন গল্পের জন্ম দিচ্ছে।

রাত গভীর। সমুদ্রের ঢেউ এখন শান্ত, কিন্তু আকাশে নক্ষত্র ঝলসে উঠছে রহস্যময় আলো। আঞ্জেলিনা এবং রাহুল মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

মুখোশধারী বন্ধুর ছায়া ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো। সে ছিল তাদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু—যিনি অতীতে ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন।

“সব সত্য এখন জানালাম,” সে বলল। “আমি ভুল করেছি। তোমাদের একসাথে দেখাই আমার জন্য সবচেয়ে শান্তি।”

রাহুল আঞ্জেলিনার হাত ধরে বলল, “যে কেউ আমাদের পথে বাধা দেয়, আমরা একসাথে সব কাটিয়ে উঠব।”

আঞ্জেলিনা হাসল, চোখে অশ্রু আর আনন্দের মিশ্রণ। তারা জানল—ভয়, বিশ্বাসঘাতকতা, রহস্য সবই শেষ। প্রেম ও সাহসের শক্তি তাদের সমস্ত অন্ধকার দূর করেছে।

সমুদ্রের নীল ছায়ার মধ্যে সেই রাত তাদের জীবনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলল—একটি রহস্যময়, থ্রিলার এবং রোম্যান্সে ভরা স্মরণীয় গল্প হিসেবে।

Comments

    Please login to post comment. Login