#পিচ্ছি_বউ (পর্ব:- ০১)
writer #সাইফুল_রাজ
---
:- ভোরের আলো ফুটতেই রাজের ঘরে কেমন যেন অস্থিরতার ছায়া।
:- আজ তার জীবনে একটা বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—যেটা সে চায়নি।
:- রাজ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।
:- তার চোখে অদ্ভুত হতাশা আর অভিমান জমে আছে।
:- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখটা দেখেও যেন তার বিশ্বাস হচ্ছিল না।
:- আজ তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে পরিবারের চাপে।
:- অথচ সে তো ভালোবাসে নীলাকে… নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
:- নীলার হাত ধরেই সে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল।
:- কিন্তু সব স্বপ্ন আজ যেন এক নিমিষে ভেঙে পড়ছে।
:- তার মা গতকাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে—
:- “বাবা, নীলা আমাদের ঘরের মান–সম্মানের সঙ্গে যায় না। সমাজ কি বলবে?”
:- রাজ শতবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিল।
:- কিন্তু পরিবারের চোখে ভালোবাসার চেয়ে বড় হলো সমাজের ভয়।
:- রাজ তাই বাধ্য হয়েই চুপ করে ছিল।
:- কিন্তু তার বুকের ভেতর যন্ত্রণা ছটফট করছিল।
:- এদিকে বাড়িতে আজ বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে উৎসবের আমেজ।
:- আত্মীয়স্বজন আসছে, হাসি–ঠাট্টা, আনন্দ…
:- সবকিছু রাজের কাছে কেমন নিষ্ঠুর মনে হচ্ছিল।
:- বিয়ের কনে—প্রিয়া—একেবারে সাধারণ সরল গ্রাম্য মেয়ে।
:- রাজ তাকে কখনোই দেখেনি।
:- আর দেখার ইচ্ছেও ছিল না।
:- কারণ রাজের হৃদয় ভরা নীলা ছাড়া আর কাউকে জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই।
:- কিন্তু নিয়তি সবসময় নিজের মতো করে লিখে দেয় গল্প…
:- রাজের বোন রিমি এসে বলল, “দাদা, আজ তো তোমার বিয়ে! একটু হাসো না।”
:- রাজ হালকা কষ্টের হাসি দিয়ে বলল, “চাইলেই কি সবসময় হাসা যায়?”
:- রিমি ভাইয়ের চোখের কথাটা বুঝলেও কিছু বলতে পারল না।
:- বিয়ের প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে উঠোনে।
:- সবাই ব্যস্ত, শুধু রাজের মনটা অদ্ভুত শূন্য।
:- দুপুরে প্রিয়ার বাড়িতেও ব্যস্ততা চরমে।
:- ছোট্ট, সাদামাটা, মাঝারি আকারের গ্রাম্য বাড়ি।
:- প্রিয়া ঘরের কোণে বসে আছে ঘোমটা টেনে।
:- তার হৃদয়ও ভয়ে কাঁপছে।
:- সে তো জানে, রাজ তাকে ভালোবেসে করছে না এই বিয়ে।
:- প্রিয়া কেবল জানে—ছেলেটা নীলাকে ভালোবাসে।
:- এতকিছুর মধ্যেও প্রিয়া কাঁদেনি।
:- তার বিশ্বাস—মানুষের ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায় না, অর্জন করতে হয়।
:- সে শুধু চেয়েছিল সম্মানের সঙ্গে নতুন জীবনে পা রাখতে।
:- প্রিয়ার মা এসে বললেন, “মা, ওরা ভালো মানুষ। সংসারটা বোঝদারির ওপর দাঁড়ায়।”
:- প্রিয়া নীরবে মাথা নাড়ল।
:- কিন্তু বুকের ভেতরটা তার থেকেও ভারী।
:- সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল।
:- রাজের বাড়িতে আলো ঝলমল করছে।
:- কিন্তু রাজের চোখে ঝলমল করার মতো কিছুই নেই।
:- সে মনে মনে বলল, “নীলা… আমি দুঃখিত। আমি পারিনি।”
:- ঠিক তখনই ফোনে নীলার একটা মেসেজ এলো।
:- “রাজ, যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসো, তবে লড়াই করতে পারতে।”
:- রাজের বুকটা কেঁপে উঠল।
:- সব দায়ভার যেন তার ওপর চেপে বসল।
:- সে চেয়েছিল, কিন্তু একা লড়াই করার শক্তি ছিল না।
:- রাত আটটার দিকে বরযাত্রা রওনা হলো।
:- রাজ একেবারে নিস্তব্ধ।
:- সবাই আনন্দে ব্যস্ত, আর সে যেন নিজের ভেতর মরে যাচ্ছে।
:- প্রিয়ারা বাড়িতে ততক্ষণে সাজসজ্জা শেষ।
:- বারান্দায় ঝোলানো লাইটের নিচে প্রিয়ার মুখটা ভীষণ শান্ত।
:- তার বয়স কম, কিন্তু মনের গভীরতা অসীম।
:- বরযাত্রা পৌঁছালে গ্রামের মানুষের ভিড় জমে গেল।
:- প্রিয়া ঘোমটার আড়াল থেকে একবার দেখে নিল রাজকে।
:- রাজও একঝলক তাকাল—
:- কিন্তু তার চোখে কোন অনুভূতির ঝলক নেই।
:- শুধু দায়িত্ব আর ক্লান্তি।
:- বিয়ের আসরে দুজন পাশাপাশি বসলে কেমন অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো।
:- আশপাশে সবাই হাসছে, খুশিতে মাতোয়ারা।
:- কিন্তু রাজের মনে তীব্র অস্বস্তি।
:- প্রিয়া মাথা নিচু করে ছিল।
:- তার মনে একটা কথাই ঘুরছিল—
:- “আমি কি কখনো তার জীবনে আমার জায়গা করতে পারব?”
:- বিয়ের সব আচার–অনুষ্ঠান শেষ হলো ধীরে ধীরে।
:- সিন্দুরদান পর্বে রাজের হাত কাঁপছিল।
:- প্রিয়ার চোখে একফোঁটা অশ্রু জমে উঠল।
:- কিন্তু সে তা ধরে রাখল।
:- রাত দশটার দিকে বিয়ে শেষ হলো।
:- দুজনকে আশীর্বাদ করতে করতে আত্মীয়রা মেতে উঠেছিল।
:- কিন্তু এই দুজনের মনে যেন মেঘ জমে আছে।
:- বিদায়ের সময় প্রিয়ার চোখ ভিজে গেল।
:- মা–বাবাকে ছেড়ে নতুন ঘরে যাচ্ছে…
:- যে ঘরের মানুষ তাকে চায় কিনা—সেটা নিশ্চিত নয়।
:- রাজ পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখে কোন উজ্জ্বলতা নেই।
:- গাড়িতে ওঠার পর প্রিয়া নরম গলায় বলল, “আমি চেষ্টা করব… আপনার পরিবারকে মানিয়ে নিতে।”
:- রাজ মুখ ঘুরিয়ে বলল, “প্রয়োজন নেই। এই বিয়েটা আপনার ইচ্ছায় হয়নি, আমারও না।”
:- কথাটা প্রিয়ার বুক চিরে গেল।
:- কিন্তু সে মুখ খুলল না।
:- দীর্ঘ নীরবতায় ভরে রইল পুরো রাস্তা।
:- রাজ মনে মনে নীলার কথা ভাবছিল।
:- কী করছে এখন? কাঁদছে কি?
:- প্রিয়া জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবছিল—
:- “আমি কি সত্যিই শুধু পরিস্থিতির শিকার?”
:- গাড়ি যখন রাজের বাড়িতে পৌঁছল, সবাই উল্লাসে বউকে বরণ করল।
:- প্রিয়াকে দেখে সবাই খুশি, কারণ সে ভীষণ ভদ্র–শান্ত মেয়ে।
:- কিন্তু রাজ?
:- রাজ সেখানে দাঁড়িয়েই থাকল, চোখে কোন উন্মাদনা নেই।
:- ঐ মুহূর্তে তাদের দুজনের জীবনের গল্পটা যেন ভিন্ন পথে ছুটে চললো।
:- প্রিয়ার প্রথম রাত… আর রাজের মানসিক অস্থিরতা…
:- সম্পর্কের শুরুটা হলো শীতল, দূরত্বে ভরা, ব্যথায় মোড়া।
:- কিন্তু গল্প তো এখান থেকেই শুরু…
Be continue,,,,❤️❤️