গল্পের নাম: কারাগার
কারাগার শুধু চার দেয়াল আর লোহার শিক নয়—কারাগার হলো ইতিহাসের জমাট কান্না।
এই গল্প সেই কারাগারের, যেখানে বন্দি ছিল মানুষ নয়, বন্দি ছিল একটি সময়।
১৯৪৭। পুরনো এক জেলের দরজা খুলে যায় ভোরের আজানে। ক্যামেরা ধীরে ধীরে এগোয়—ভাঙা ইট, মরিচা ধরা শিক, দেয়ালে খোদাই করা নাম। প্রতিটা নামের পেছনে একটা জীবন, একটা স্বপ্ন।
এই জেলে ছিল রফিক। বয়স তখন পঁচিশ। চোখে আগুন, বুকে স্বাধীনতার গান। অপরাধ—সে প্রশ্ন করেছিল।
ফ্ল্যাশব্যাক।
গ্রামের মাঠ। মা বলছে, “বাবা, বেশি কথা বলিস না।”
রফিক হেসে বলে, “চুপ থাকলে কি শিকল ভাঙে মা?”
কাট টু—রাত। দরজায় লাথি। হাতকড়া। মায়ের কান্না ক্যামেরায় ধরা পড়ে না, শুধু শব্দ শোনা যায়।
কারাগারের ভেতর সময় থেমে থাকে। দিন আসে, যায়—কিন্তু আলো আসে না।
এক সেলে বৃদ্ধ শিক্ষক, অন্য সেলে কবি, আরেক সেলে এক কিশোর—যার অপরাধ ছিল স্লোগান লেখা।
সবাই মিলে একটা ইতিহাস গড়ে, কিন্তু কাগজে নয়—দেয়ালে, নখ দিয়ে।
রফিক রাতে স্বপ্ন দেখে।
সে দেখে—একটা খোলা মাঠ, মানুষ কথা বলছে ভয় ছাড়া।
হঠাৎ সাইরেন। স্বপ্ন ভেঙে যায়। বাস্তব আবার লোহার শব্দ।
একদিন জেলের ভেতর বিদ্রোহ হয়।
ক্যামেরা কাঁপে। চিৎকার, ধোঁয়া, গুলি।
রফিক দৌড়ায় না। সে দাঁড়িয়ে থাকে।
এক অফিসার চেঁচায়, “তুই পালাস না কেন?”
রফিক শান্ত গলায় বলে, “কারাগার শুধু এই দেয়াল না। আমি বাইরে গেলেও ওখানেই থাকতাম।”
গুলির শব্দ।
স্ক্রিন কালো।
শেষ দৃশ্য।
বহু বছর পর। সেই জেল এখন জাদুঘর।
দেয়ালে লেখা—“কারাগার আমাদের ভাঙতে পারেনি।”
একটা বাচ্চা জিজ্ঞেস করে, “এরা কারা?”
তার বাবা বলে, “এরা ইতিহাস। এরা দুঃখ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা লিখেছে।”
ক্যামেরা ধীরে ধীরে জেলের দরজা ছাড়িয়ে আকাশের দিকে ওঠে।
আজান ভেসে আসে।
কারাগার থাকে, কিন্তু মানুষ আর বন্দি থাকে না।