গল্পের নাম: ১৬ই ডিসেম্বর
১৬ই ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের দিন।
এই দিনে কোনো একক মানুষের কথা নয়, কথা বলে একটি জাতি—যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে।
একসময় এই ভূখণ্ড ছিল শৃঙ্খলিত। কথা বলার অধিকার ছিল না, মত প্রকাশ ছিল অপরাধ।
মায়ের ভাষা বাংলা হওয়ায় মানুষকে গুলি খেতে হয়েছে।
সেই রক্ত মাটিতে পড়ে ইতিহাস লিখেছে—বাঙালি মাথা নত করে বাঁচে না।
১৯৭১ এ সেই ইতিহাস নতুন মোড় নেয়।
গ্রাম, শহর, নদী, মাঠ—সবাই এক কণ্ঠে বলে উঠেছিল: আমরা মুক্ত হব।
কারো হাতে ছিল অস্ত্র, কারো হাতে ছিল শুধু সাহস।
ক্ষুধা, ভয়, মৃত্যু—সবকিছুকে অতিক্রম করে বাঙালি দাঁড়িয়েছিল আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে।
১৬ই ডিসেম্বর আসে বিজয়ের আলো নিয়ে।
কিন্তু সেই আলো শুধু উল্লাসের নয়, দায়িত্বেরও।
কারণ স্বাধীনতা মানে শুধু পতাকা ও স্লোগান নয়—
স্বাধীনতা মানে ন্যায়, সততা, আর সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো।
আজকের বাংলাদেশ বদলেছে।
নতুন প্রজন্ম এসেছে, নতুন স্বপ্ন এসেছে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেছে—আমরা কি ইতিহাসকে ধারণ করছি, নাকি শুধু স্মরণ করছি?
দুর্নীতি, বিভাজন, অবহেলা যখন মাথা তোলে, তখন ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের আবার ডাকে—
মনে করিয়ে দেয়, এই দেশ কোনো এক ব্যক্তির নয়, এটি একটি জাতির আমানত।
বাঙালি জাতি কখনো নিখুঁত ছিল না, কিন্তু অন্যায়ের সামনে চুপও থাকেনি।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ—সবখানেই সাধারণ মানুষই ইতিহাস গড়েছে।
কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মা—সবার ঘাম আর দোয়ায় এই দেশ দাঁড়িয়ে আছে।
১৬ই ডিসেম্বর তাই শেষ নয়, শুরু।
নিজেকে প্রশ্ন করার শুরু—
আমি কি এই জাতির ইতিহাসের যোগ্য উত্তরসূরি?
যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে বাঙালি জাতি এখনো হারায়নি।